নিজস্ব প্রতিবেদক: রপ্তানি বাণিজ্য উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ২০১৮ সালের জন্য মনোনীত ১৭৬ জন ব্যবসায়ীকে সিআইপি কার্ড দেয়া হয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি গতকাল রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলের বলরুমে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো আয়োজিত সিআইপি (রপ্তানি) ও সিআইপি (ট্রেড)-২০১৮ কার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে এ কার্ড তুলে দেন।
অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। ২০৩০ সালের আগেই বাংলাদেশ এসডিজি অর্জন করবে। দেশের এ উন্নয়নে ব্যবসায়ীদের অবদান অনেক। ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা ছাড়া দেশ এগিয়ে যেতে পারে না। অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নের বিকল্প নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার ব্যবসা-বাণিজ্যে সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে, জীবনযাত্রার মান বেড়েছে। সবগুলোই হয়েছে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির কারণেই।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। ২০২৬ সালের পর বাংলাদেশকে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেই ব্যবসা-বাণিজ্য করতে হবে। এ জন্য আমাদের প্রস্তুতি দরকার। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য দক্ষতা বাড়াতে হবে ব্যবসা-বাণিজ্যে। দেশকে উন্নত করতে রপ্তানি বৃদ্ধির বিকল্প নেই। রপ্তানি আয় বাড়াতে আমাদের সক্ষমতা অর্জন করতে হবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যে এগিয়ে যেতে আমাদের সামনে সমস্যা অনেক, বাধা অনেক। দক্ষতার সঙ্গে এগুলো অতিক্রম করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। অল্পসংখ্যক পণ্য নিয়ে রপ্তানি বাজারে ভালো করা যাবে না। এজন্য রপ্তানি পণ্যের সংখ্যা বাড়াতে হবে, একই সঙ্গে বাজার সম্প্রসারণ করতে হবে। বিশ্বের অনেক দেশ আছে, যেখানে বাংলাদেশের তৈরি পণ্যের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। সেখানে আমাদের রপ্তানি করতে হবে। ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলে আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানরে স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে হবে।
দেশের মোট ২২টি খাতের ১৮টি পণ্য এবং সেবা খাত থেকে ২০১৮ সালে মোট ১৩৮ জনকে সিআইপি (রপ্তানি) এবং একই সময়ের জন্য ৩৮ জন (পদাধিকার বলে) ব্যবসায়ী নেতাকে সিআইপিসহ (ট্রেড) সর্বমোট ১৭৬ জনকে সিআইপি সম্মানে ভূষিত করা হলো। সিআইপি মনোনীত সবাই তাদের মেয়াদকালে বাংলাদেশ সচিবালয়ে প্রবেশের জন্য পাস ও গাড়ির স্টিকার পাবেন, বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠান ও সিটি করপোরেশন কর্তৃক আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনায় আমন্ত্রণ পাবেন, ব্যবসাসংক্রান্ত ভ্রমণে বিমান, রেল, সড়ক ও জলপথে সরকারি যানবাহনে আসন সংরক্ষণে অগ্রাধিকার পাবেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব তপন কান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস-চেয়ারম্যান এএইচএম আহসান।
ইরাকের চার্জ দি অ্যাফেয়ার্সের সঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রীর বৈঠক: বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি গতকাল তার সরকারি বাসভবনের অফিস কক্ষে ঢাকায় নিযুক্ত ইরাকের চার্জ দি অ্যাফেয়ার্স আব্দুলসালাম সাদ্দাম মোহাইমসেনের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় মন্ত্রী বলেন, ইরাকের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে। এ জন্য উভয় দেশের সরকারি এবং ব্যবসায়ী পর্যায়ে বাণিজ্য প্রতিনিধি দল সফর বিনিময় করলে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের খাতগুলো চিহ্নিত করা সহজ হবে।
বৈঠকে জানানো হয়, ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ করতে ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ ইরাকের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করে। ফলে উভয় দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। অনেকগুলোর কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। পৃথিবীর অনেক দেশ বিনিয়োগে এগিয়ে এসেছে। ইরাকের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করলে লাভবান হবেন। বাংলাদেশ সরকার বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের আনুষ্ঠানিকতা সহজ করেছে এবং বেশকিছু আকর্ষণীয় সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। ইরাক বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে এসব সুযোগ-সুবিধা নিতে পারে।
এ সময় ইরাকের চার্জ দি অ্যাফেয়ার্স বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীতে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘ইরাক বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে আগ্রহী।’ ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য বাণিজ্য চুক্তি নবায়ন ও সময়োপযোগী করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনার জন্য তিনি বাণিজ্যমন্ত্রীকে ইরাক সফরের আমন্ত্রণ জানান।
উল্লেখ্য, চলমান কভিড-১৯ পরিস্থিতিতেও গত ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ ইরাকে ৩৮ লাখ ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে, একই সময়ে ইরাক থেকে ৫ কোটি ৩৪ লাখ ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি করে। ইরাকের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, মেডিকেল পণ্য, পাটজাত পণ্য, হোম টেক্স এবং চামড়াজাত পণ্য রপ্তানির বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।