রহমত রহমান: দেশে সচল সিগারেট কোম্পানির সংখ্যা ১৭। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) এসব কোম্পানির প্রায় ১২৬ কোটি ৪৮ লাখ প্যাকেট সিগারেট বিক্রি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ছয় কোটি প্যাকেট বেশি। আর রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় ছয় হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৪৫ কোটি টাকা বেশি। তবে ১৭ কোম্পানির মধ্যে সাত কোম্পানির সিগারেট বিক্রি এবং রাজস্ব আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। সাত কোম্পানির মধ্যে শীর্ষে রয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ সিগারেট উৎপাদন ও বাজারজাতকারী বহুজাতিক কোম্পানি জাপান টোব্যাকো ইন্টারন্যাশনাল (জেটিআই)।
এছাড়া রয়েছে মেঘনা টোব্যাকো, ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রি, যমুনা টোব্যাকো, সামির টোব্যাকো, মনমোহন টোব্যাকো ও নাসির টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রি। সাত কোম্পানির গত অর্থবছরের তুলনায় প্রায় সাত কোটি ১৪ লাখ প্যাকেট সিগারেট বিক্রি কমায় প্রায় ২৭১ কোটি ২৭ লাখ টাকা রাজস্ব কমেছে। সিগারেট বিক্রি ও রাজস্ব আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়ার ব্যাখ্যা চেয়ে কমিশনারদের চিঠি দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সম্প্রতি এ চিঠি দেয়া হয়। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এনবিআরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাতটি কোম্পানির মধ্যে অন্যতম বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ) মূল্য সংযোজন করের আওতাধীন বহুজাতিক কোম্পানি জেটিআই। এ কোম্পানি চার মাসে প্রায় ১০ কোটি ৮০ লাখ প্যাকেট বিক্রি করেছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ছয় কোটি ৮৫ লাখ প্যাকেট কম। রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় ৫৪৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২৬৫ কোটি ২৬ লাখ টাকা কম। আর সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত (জুলাই-সেপ্টেম্বর) গত অর্থবছরের তুলনায় প্রায় চার কোটি ৭৩ লাখ প্যাকেট সিগারেট কম বিক্রি হয়েছে এবং প্রায় ১৬৫ কোটি ৪২ লাখ টাকার রাজস্ব কমেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকা পূর্ব ভ্যাট কমিশনারেটের আওতাধীন মেঘনা টোব্যাকোর চার মাসে সিগারেট বিক্রি হয়েছে ৬৫ হাজার প্যাকেট, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৪ হাজার ৫০০ প্যাকেট কম। আর রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় ১৮ লাখ ২৫ হাজার টাকা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় চার লাখ ৯২ হাজার টাকা কম। একই কমিশনারেটের আওতাধীন তিতাস টোব্যাকো থেকে গত অর্থবছর চার মাসে প্রায় ১৭ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে। সিগারেট বিক্রি হয়েছে ৬৬ হাজার ৩০০ প্যাকেট। তবে চলতি অর্থবছর এ কোম্পানি থেকে কোনো রাজস্ব আদায় হয়নি।
চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেটের আওতাধীন ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রির চার মাসে সিগারেট বিক্রি হয়েছে প্রায় ২৮ লাখ প্যাকেট, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় সাত লাখ ৫৫ হাজার প্যাকেট কম। রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় আট কোটি ৬৮ লাখ টাকা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৭১ লাখ টাকা কম। রাজশাহী ভ্যাট কমিশনারেটের আওতাধীন যমুনা টোব্যাকোর বিক্রি হয়েছে ৩৩ হাজার ৪২৯ প্যাকেট সিগারেট, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৬৫ হাজার ৪১৩ প্যাকেট কম। রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় ৯ লাখ টাকা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১৬ লাখ টাকা কম।
একই কমিশনারেটের সামির টোব্যাকোর চার মাসে বিক্রি হয়েছে প্রায় এক লাখ ২৭ হাজার প্যাকেট সিগারেট, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় এক লাখ ৫৪ হাজার প্যাকেট কম। রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় ৩৬ লাখ টাকা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৪২ লাখ টাকা কম। একই কমিশনারেটের মনমোহন টোব্যাকোর বিক্রি হয়েছে ৭১ হাজার প্যাকেট সিগারেট, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৮৭ হাজার প্যাকেট কম। রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় ২০ লাখ টাকা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২১ লাখ টাকা কম।
যশোর ভ্যাট কমিশনারেটের আওতাধীন নাসির টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রিজের বিক্রি হয়েছে প্রায় ২৩ লাখ প্যাকেট সিগারেট, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১৮ লাখ প্যাকেট কম। রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় সাড়ে ছয় কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা কম।
অপরদিকে যেসব কমিশনারেটের আওতাধীন সিগারেট কোম্পানির সিগারেট বিক্রি ও রাজস্ব নি¤œমুখী, সেসব কমিশনারের কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে এনবিআর থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি দেয়া এ চিঠিতে বলা হয়, বিভিন্ন কমিশনারেট থেকে সিগারেটের মূল্যস্তর ও সম্পূরক শুল্ক হার পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আদায়-সংক্রান্ত তুলনামূলক মাসিক রাজস্ব বিবরণী পর্যালোচনা করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, এলটিইউ’র আওতাধীন জেটিআই ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরের সিগারেটের প্যাকেট সংখ্যা ও রাজস্ব তুলনামূলকভাবে কম। এছাড়া ঢাকা পূর্ব কমিশনারেটের মেঘনা টোব্যাকো, তিতাস টোব্যাকো, ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রি, রাজশাহী কমিশনারেটের যমুনা টোব্যাকো, সামির টোব্যাকো, মনমোহন টোব্যাকো ও যশোর কমিশনারেটের নাসির টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রিজের রাজস্ব আদায় কমে গেছে। সিগারেট বিক্রি ও রাজস্ব কমে যাওয়া এসব সিগারেট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে মনিটরিং বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এছাড়া এসব কোম্পানি রাজস্ব পরিহার করেছে কি না, তা উদ্ঘাটন করে এনবিআরকে জানাতে বলা হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৭টি কোম্পানির চার মাসে বিক্রি হয়েছে প্রায় ১২৬ কোটি ৪৮ লাখ প্যাকেট সিগারেট, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ছয় কোটি চার লাখ প্যাকেট বেশি। আর চার মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ছয় হাজার ৯৮৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২৪৫ কোটি এক লাখ টাকা বেশি। ১৭ কোম্পানির মধ্যে সিগারেট বিক্রি ও রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি পেয়েছে এলটিইউ’র আওতাধীন এবং দেশের বৃহৎ বহুজাতিক সিগারেট কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর।
এ কোম্পানি চার মাসে প্রায় ৯৮ কোটি ৯৮ লাখ প্যাকেট সিগারেট বিক্রি করেছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় সাড়ে আট কোটি প্যাকেট বেশি। আর রাজস্ব আদায় হয়েছে পাঁচ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৩৬৯ কোটি টাকা বেশি। এছাড়া কুমিল্লা ভ্যাট কমিশনারেটের আওতাধীন আবুল খায়ের টোব্যাকোর চার মাসে প্রায় ১৫ কোটি ৯৭ লাখ প্যাকেট সিগারেট বিক্রি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় চার কোটি ৫৭ লাখ প্যাকেট বেশি। আর রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় ৪৪৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১৪৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা বেশি।