Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 9:00 pm

১৭ বছরে শেষ হলো পদ্মা সেতু প্রকল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০০৭ সালের আগস্টে পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন করেছিল তৎকালীন তত্ত¡াবধায়ক সরকার। সে সময় এটি শুধুই সড়ক সেতু ছিল। পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর এতে রেলপথ যুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়। ফলে সেতুটির নির্মাণ পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনা হয়। রেলপথ যুক্ত করে ২০১১ সালে পদ্মা সেতুর সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাবনা অনুমোদন করা হয়।

যদিও ঠিকাদার নিয়োগ শেষে সেতুটির মূল নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর। নির্মাণকাজ শেষে তা উদ্বোধন করা হয় ২০২২ সালের ২৫ জুন। তবে নদী শাসন কাজ অবশিষ্ট ছিল তখনও। গত ৩০ জুন প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি হয়েছে। ফলে প্রায় ১৭ বছর পর আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হল পদ্মা সেতু প্রকল্পটি। এ উপলক্ষে আজ পদ্মা সেতুর সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে সেতু কর্তৃপক্ষ। এজন্য ব্যয় করা হচ্ছে পাঁচ কোটি টাকা।

সেতু বিভাগের তথ্যমতে, ১৭ বছরের পরিক্রমায় পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয় বেড়েছে কয়েক দফা। ২০০৭ সালের ২৮ আগস্ট প্রথম পদ্মা সেতু প্রকল্প অনুমোদনের সময় এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার ১৬১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। তবে ২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি প্রথম সংশোধন করা হয় পদ্মা সেতু প্রকল্পটি, সে সময় রেলপথ যুক্ত হয়। ওই সময় দু’তলা সেতুর নির্মাণ ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি ২০ লাখ টাকা। সবগুলো প্যাকেজের ঠিকাদার নিয়োগের পর সেতুটির নির্মাণব্যয় আরও বেড়ে যায়। এতে ২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি দ্বিতীয় দফা প্রকল্প

সংশোধন করা হয়। এতে নির্মাণব্যয় দাঁড়ায় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।

এদিকে নদী শাসনের জন্য ড্রেজিংকৃত স্পয়েল ফেলার জন্য পরে অতিরিক্ত ভ‚মি অধিগ্রহণ করতে হয়। এ খাতে ব্যয় বৃদ্ধির জন্য ২০১৮ সালের ২১ জুন বিশেষ সংশোধন করা হয় পদ্মা সেতু প্রকল্পটি। সে সময় ব্যয় আরও বেড়ে হয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। মূলত ড্রেজিং স্পয়েল ফেলার জন্য চর অধিগ্রহণে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করা হয়েছিল। পরে সে চর নদীভাঙনেই আবার তলিয়ে যায়। তবে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের প্রায় ১০ মাস পর গত বছর ২৩ এপ্রিল তৃতীয় দফা সংশোধন করা হয় প্রকল্পটি। এতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা।

যদিও পদ্মা সেতুর বর্ধিত ব্যয়ের পুরোটা ব্যয় হয়নি বলেই সম্প্রতি জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘আমরা ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা নির্মাণ ব্যয়ের মধ্যে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছি। গত দুই বছর সেতুর রক্ষণাবেক্ষণে ৩০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। সব মিলিয়ে সেতু নির্মাণে ৩১ হাজার ১০৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।

সম্প্রতি পদ্মা সেতুর সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজক নিয়োগের প্রস্তাব সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠানো হয়। সমাপনী অনুষ্ঠান আয়োজনের কাজ পেয়েছে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান এশিয়াটিক মার্কেটিং লিমিটেড এবং পিয়ার এন্টারপ্রাইজ। কোন ধরনের দরপত্র ছাড়াই কাজটি দেয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানটি উপলক্ষে সুধী সমাবেশের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। এতে অতিথি থাকছেন ১ হাজার ৫০০ জন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকবেন।

ক্রয় প্রস্তাবটিতে সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, এ প্রকল্পের বরাদ্দকৃত অর্থের ৬০ কোটি ৫ লাখ টাকা অব্যবহƒত রয়েছে। সে খাত থেকে অনুষ্ঠানের জন্য ব্যয় করা হবে। প্রস্তাবে আরও বলা হয়, পদ্মা সেতু প্রকল্পের মূল সেতুর ব্যয় ১৩ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা ধরা হলেও সাশ্রয় হয়েছে প্রায় ৫২৬ কোটি টাকা। তবে নদী শাসনে বেশি লেগেছে প্রায় ১৭১ কোটি ২৭ লাখ টাকা। আর সংযোগ সড়ক নির্মাণে সাশ্রয় হয়েছে ১৮৫ কোটি টাকা। এছাড়া প্রাইস কন্টিজেন্সি ও ফিজিক্যাল কন্টিজেন্সির ৫০০ কোটি করে মোট ১ হাজার কোটি টাকার পুরোটাই সাশ্রয় হয়েছে।

প্রসঙ্গত, উদ্বোধনের পর পদ্মা সেতুতে দুই বছরে ১ কোটি ২৭ লাখ যানবাহন পারাপার হয়েছে। এতে টোল আদায় হয়েছে ১ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকার বেশি। আর দুই বছরে পদ্মা সেতু নির্মাণে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে গৃহীত ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা হয়েছে ১ হাজার ২৬২ কোটি টাকার বেশি।