নিজস্ব প্রতিবেদক: ডিজেলের দাম বাড়ার পর বাস ভাড়া বাড়ানো হলেও যাত্রীদের কাছ থেকে তার চেয়ে বেশি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ ওঠায় রাজধানীতে অভিযানে নেমেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় ১৮ বাসচালককে সাড়ে ৪২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
গতকাল সকাল থেকে শাহবাগ এলাকায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ও ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) নির্বাহী হাকিমের নেতৃত্বে আলাদা অভিযান পরিচালনা করতে দেখা যায়।
বিআরটিএর নির্বাহী হাকিম শাকিলা বিনতে মতিন সাংবাদিকদের বলেন, মূলত মূল্য তালিকা টানানো হয়েছে কি না, সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি নিচ্ছে কি না ও গ্যাসচালিত বাসে ডিজেলচালিত বাসের মতো বেশি ভাড়া নিচ্ছে কি নাÑতা লক্ষ্য করা হচ্ছে।
জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির পর বাসভাড়া বাড়িয়ে সব রুটে বর্ধিত ভাড়ার তালিকা করে দিয়েছে সরকার। তবে রাজধানীতে চলাচল করা বেশিরভাগ বাসে সেই তালিকা নেই। চালক ও সুপারভাইজাররা তালিকা না টাঙিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন বলে অভিযোগ যাত্রীদের।
বাসে বাড়তি ভাড়া আদায় বন্ধে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। এ সময় ১৮ বাসচালককে সাড়ে ৪২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
গতকাল রাজধানীর কলাবাগান পুলিশ বক্স-সংলগ্ন সড়কে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন ডিএমপির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রফিকুল হক। শাহবাগের ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন ডিএমপির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ডা. সঞ্জীব দাশ।
কলাবাগান ও শাহবাগে ডিএমপির দুই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ভ্রাম্যমাণ আদালত ১৮টি বাসকে জরিমানা করেন ৪২ হাজার ৫০০ টাকা। আজিমপুর-নিউমার্কেট হয়ে আসাদগেটগামী বাসগুলোকে থামানো হয় কলাবাগান সিগন্যালে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অন্তত ২৫টি গাড়ি থামিয়ে বাড়তি ভাড়া নেয়া হচ্ছে কি না ও গাড়িতে বর্ধিত ভাড়ার তালিকা টাঙানো আছে কি না, তা চেক করেন। এ সময় বেশিরভাগ গাড়িতে ভাড়ার তালিকা পাওয়া যায়নি। বর্ধিত ভাড়া থেকেও বেশি ভাড়া নেয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এসব অভিযোগে কলাবাগানে আটটি গাড়ির চালকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ডিএমপির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এসব মামলায় সাড়ে ১৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন এলাকায় নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করায় ১০টি বাসকে ২৪ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
বিভিন্ন বাসের যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কলাবাগানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আছেন, তা জানার পর অনেক গাড়ি আজিমপুর থেকে ঘুরিয়ে দেয়া হয়। তারা মিরপুর রোডে প্রবেশ করেনি। যেসব গাড়ি এ রুটে চলাচল করছে, তারাও যে বাড়তি ভাড়া নিয়েছিল, ম্যাজিস্ট্রেট দেখে ধরা পড়ার আগেই তা যাত্রীদের কাছে ফিরিয়ে দিচ্ছে।
ডিএমপির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রফিকুল হক বলেন, গণপরিবহনের নৈরাজ্য ঠেকাতে ডিএমপি, বিআরটিএ ও জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা রাজধানীসহ সারাদেশে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন। যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় বন্ধে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি।
তিনি বলেন, কলাবাগানের যেসব গাড়ি থামানো হয়েছে, সেগুলোর বেশিরভাগ বর্ধিত ভাড়ার তালিকা পাওয়া যায়নি। তালিকা না থাকায় যাত্রীরা বুঝতে পারছেন না, কোনো জায়গা থেকে কোথায় ভাড়া কত? এ সুযোগে যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া আদায় করছেন চালক ও সুপারভাইজার। আমরা যেগুলোয় পেয়েছি, তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে জরিমানা করেছি।