ইসমাইল আলী: বর্তমানে বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে ৯৫টি। এর মধ্যে রেন্টাল কেন্দ্র ২১টি ও আইপিপি (ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার) ৭৪টি। এসব কেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা ৯ হাজার ৫৪৬ মেগাওয়াট। যদিও বেসরকারি এসব কেন্দ্রের সক্ষমতার অর্ধেকও ব্যবহার হয় না। তবে বসে থাকলেও এসব কেন্দ্রের জন্য গুনতে হয় উচ্চ হারে ক্যাপাসিটি চার্জ। এতে ১৮ মাসে (চলতি বছরের জুলাই থেকে আগামী বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত) রেন্টাল ও আইপিপি কেন্দ্রের জন্য ভর্তুকি দিতে হবে ৭৩ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে বিদ্যুৎ খাতের চলমান সংকটের বিভিন্ন কারণ তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি লোডশেডিং নিয়ন্ত্রণে বেশকিছু সুপারিশও তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনের তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২১ হাজার ৭১০ মেগাওয়াট। আগামী বছর ডিসেম্বরে এ সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়াবে ২৫ হাজার ৫২৮ মেগাওয়াট। এর মধ্যে সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা দাঁড়াবে ১১ হাজার ৯৮৭ মেগাওয়াট এবং বেসরকারি কেন্দ্রগুলোর ১৩ হাজার ১৯৭ মেগাওয়াট। যদিও আগামী বছর বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা দাঁড়াবে ১৬ হাজার মেগাওয়াট। এপ্রিল ও মে মাসে এ চাহিদা থাকবে, পরবর্তীতে তা কমে আসবে।
রেন্টাল ও আইপিপি এসব কেন্দ্রের জন্য চলতি অর্থবছর ভর্তুকি দরকার ৪৮ হাজার সাত কোটি টাকা। এর মধ্যে জুলাই মাসের জন্য চার হাজার ২৩ কোটি টাকা, আগস্টে চার হাজার ৮৮১ কোটি, সেপ্টেম্বরে চার হাজার ৩২৯ কোটি ও অক্টোবরের জন্য চার হাজার তিন কোটি টাকা। তবে পরবর্তী চার মাসে এ চাহিদা কিছুটা কমবে। এর মধ্যে নভেম্বরে লাগবে দুই হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা, ডিসেম্বরে দুই হাজার ৩০৬ কোটি, জানুয়ারিতে দুই হাজার ৪৭৮ কোটি এবং ফেব্রুয়ারিতে দুই হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণত মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বিদ্যুতের চাহিদা বেশি থাকে। তবে শীতের কারণে চাহিদা কম থাকায় সাধারণত চার মাস (নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি) বিদ্যুৎ উৎপাদন কম করতে হয়। এতে ভর্তুকিও কম লাগবে। তবে মার্চ থেকে দ্রুত বাড়বে বিদ্যুতের চাহিদা। তখন উৎপাদন বাড়াতে হবে। ফলে বাড়বে ভর্তুকির চাপও। তবে মার্চের শেষ দিকে রোজা শুরু হবে। ফলে এপ্রিলে বিদ্যুতের চাহিদা সর্বোচ্চ থাকবে। ওই মাসে ভর্তুকিও লাগবে সর্বোচ্চ।
তথ্যমতে, চলতি অর্থবছর মার্চে রেন্টাল ও আইপিপিগুলোর জন্য ভর্তুকি লাগবে চার হাজার ৫১১ কোটি টাকা, এপ্রিলে পাঁচ হাজার ৬১৯ কোটি, মে মাসে পাঁচ হাজার ৫৩৪ কোটি এবং জুনে পাঁচ হাজার ৩৫৫ কোটি টাকা। আর ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাসে (জুলাই) ভর্তুকি লাগবে পাঁচ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা, আগস্টে পাঁচ হাজার ২৭৭ কোটি, সেপ্টেম্বরে পাঁচ হাজার ১৮৯ কোটি, অক্টোবরে চার হাজার ৭২৩ কোটি, নভেম্বরে দুই হাজার ৫৮৯ কোটি এবং ডিসেম্বরে দুই হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা।
এদিকে গত অর্থবছর রেন্টাল ও আইপিপিগুলোর জন্য ভর্তুকি লেগেছে ৩০ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা। তবে এ অর্থের পুরোটা ছাড় করেনি অর্থ মন্ত্রণালয়। প্রথম আট মাসের (জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি) জন্য ভর্তুকি চাওয়া হয়েছিল ১৪ হাজার ৮৯০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ছাড় করা হয়েছে ১৪ হাজার ৫৭২ কোটি টাকা। ৩১৮ কোটি টাকা এখনও বকেয়া রয়েছে। এছাড়া মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত আরও ১৬ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা ভর্তুকি চাওয়া হয়েছে, যা ছাড় করা হয়নি। সব মিলিয়ে গত অর্থবছরের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে ভর্তুকি পাওনা রয়েছে ১৬ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা। এছাড়া চলতি অর্থবছরের ভর্তুকির কোনো অর্থও ছাড় করা হয়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পিডিবির একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, গ্যাস সংকটের কারণে গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর একটা অংশ বন্ধ হয়ে আছে। তার ওপর অর্থ মন্ত্রণালয় ভর্তুকির অর্থ ছাড় করতে বিলম্ব করছে। এতে পিডিবি যথাসময়ে কোম্পানিগুলোর বিল পরিশোধ করতে পারছে না। ফলে ফার্নেস অয়েলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর এলসি নিষ্পত্তি বিলম্বিত হচ্ছে। পাশাপাশি তেল আমদানির জন্য নতুন এলসি খুলতেও সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া বিল পরিশোধ বিলম্বিত হওয়ায় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পরিচালনায় লুব অয়েল ও খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। সব মিলিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে লোডশেডিং বেড়েই চলেছে।
তারা আরও বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়কে ভর্তুকি ছাড় করার জন্য কয়েক দফা চিঠি দেয়া হয়েছে। তবে তহবিল সংকটের কারণে অর্থ মন্ত্রণালয় ভর্তুকির অর্থ ছাড় করছে না। অর্থ ছাড়ের যে অবস্থা তাতে গত অর্থবছরের ভর্তুকির পুরোটা ছাড় করতেই চলতি অর্থবছর শেষ হয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে।