Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 9:44 pm

১৮ হাজার কোটি টাকায় হবে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর

নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পেয়েছে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর উন্নয়ন প্রকল্প। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে দুই হাজার ৬৭১ কোটি ১৫ লাখ টাকা, জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) ঋণ ১২ হাজার ৮৯২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জোগান দেবে দুই হাজার ২১৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা। মাতারবাড়ি পোর্ট ডেভেলপমেন্ট নামের প্রকল্পটিসহ গতকাল মোট ৯টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক।

প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ২৪ হাজার ১১৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে আসবে ছয় হাজার ১৫১ কোটি ২৬ লাখ টাকা, বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব অর্থায় দুই হাজার ২১৩ কোটি এবং বৈদেশিক ঋণ ১৫ হাজার ৭৪৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে গতকাল অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

এ সময় পরিকল্পনা সচিব সচিব মো. নুরুল আমিন, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (জ্যেষ্ঠ সচিব)  শামীমা নার্গীস, জাকির হোসেন আকন্দ, আবুল কালাম আজাদ, আইএমইডি’র সচিব আবুল মনসুর মো. ফয়েজউল্লাহ এবং পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীসহ পরিকল্পনা কমিশনের অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দর নির্মিত হলে এটি হবে দেশের চতুর্থ সমুদ্রবন্দর। বাকি তিনটি হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর, মোংলা বন্দর ও পায়রা বন্দর। চারটি বন্দর পূর্ণাঙ্গরূপে চালু হলে তা উপকূলে গলার হার বা মালার গোলাকার একটি রূপ নেবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাতারবাড়ি বন্দর নির্মাণকাজ দ্রুত শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাস নিয়ে আজ তেমন কিছু বলেননি। তবে সবাইকে সাবধান থাকতে বলেছেন। বেশি করে ফল খেতে বলেছেন। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর কোনো আবেগের জায়গা নয়। এটা প্রয়োজন। এ প্রকল্পের কিছু ব্যয় বেশি ধরা হয়েছে বলে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু এক্ষেত্রে সব ব্যয় সরলীকরণ করলে হবে না। এর যথেষ্ট কারণও আছে। যেমন পায়রা ও মাতারবাড়ির মধ্যে  জমির কনফিগারেশন এক নয়। এছাড়া মাতারবাড়ির সড়ক কোনো সাধারণ সড়ক হবে না। এগুলো মূলত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মতো হবে। এটি আমাদের স্বপ্নের প্রকল্প। ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে।

পায়রা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ প্রকল্প প্রসঙ্গে মন্ত্রী জানান, চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র শীর্ষেন্দু বিশ্বাসের এক চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এ সেতুটির অনুমোদন প্রক্রিয়া দ্রুত হয়েছে। সে জন্য তাকে ধন্যবাদ জানাই। তবে এমনিতেই প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সব নদীতে যেন সেতু হয়। কোনো সাঁকো আমরা রাখতে চাই না। সে হিসেবে পায়রার নদীর ওপরও সেতু হতো। কিন্তু শীর্ষেন্দুর চিঠি পাওয়ায় সেটি ত্বরান্বিত হয়েছে।

মন্ত্রী জানান, একনেকে কৃষিমন্ত্রী জানিয়েছেন আপেল আমদানি কমে গেছে। কেননা মানুষ এখন দেশি বরই খাচ্ছে বেশি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সারাবিশ্ব করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা বিশ্বের বাইরে নই। সুতরাং আমাদের এখানেও প্রভাব পড়বে। তবে কতটুকু প্রভাব পড়বে, সেটি এখনও বলা যাচ্ছে না। কিন্তু ইতোমধ্যে চীন থেকে অনেক ব্যবসা দেশে আসতে শুরু করেছে। এটি ইতিবাচক।

একনেকে অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যেÑবরিশালের লেবুখালী-রামপুর-মির্জাগঞ্জ সংযোগ সড়ক নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪১৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। কচুয়া-বেতাগী-পটুয়াখালী-লোহালিয়া-কালাইয়া সড়কের ১৭তম কিলোমিটারে পায়রা নদীর সেতু নির্মাণে ব্যয় হবে এক হাজার ৪২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) ফায়ারিং রেঞ্জের আধুনিকায়ন প্রকল্পে ব্যয় হবে ৫১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের মৎস্যসম্পদ উন্নয়নে ব্যয় হবে ১১৮ কোটি ২৮ লাখ টাকা। বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় হবে ১৬১ কোটি পাঁচ লাখ টাকা। জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলাধীন পাকেরদহ ও বালিজুরি এবং বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলাধীন জামথল যমুনা নদীর ভাঙন থেকে রক্ষা প্রকল্পে ব্যয় ৫৮৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা। অন্য দুটি প্রকল্পের মধ্যে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) প্রধান কার্যালয়ের ২০ তলা ভিতবিশিষ্ট দুটি বেইজডসহ ১০ তলা প্রধান কার্যালয় নির্মাণে ব্যয় বেড়েছে ১০২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা এবং  ঢাকা স্যানিটেশন ইমপ্রুভমেন্ট প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে তিন হাজার ৮৫৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা।