১৯০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্য গোপনে চার্জশিট অনুমোদন

নিজস্ব প্রতিবেদক: ১৯০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপন করার অভিযোগে কেয়া কসমেটিকস লিমিটেডের চেয়ারম্যান আবদুল খালেক পাঠান, তার স্ত্রী ও তিন সন্তানের বিরুদ্ধে পৃথক পাঁচ মামলার চার্জশিট অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

গতকাল বুধবার দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে ওই মামলাগুলোর চার্জশিটের অনুমোদন দেয়া হয়। শিগগির বিচারিক আদালতে দুদক উপপরিচালক মো. শফিউল্লাহ চার্জশিট দাখিল করবেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সংস্থাটির জনসংযোগ কর্মকর্তা উপপরিচালক মুহাম্মদ আরিফ সাদেক।

দুদক জানায়, ২০২১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর তাদের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা দায়ের হয়। মামলায় তাদের বিরুদ্ধে ১৮৩ কোটি ৮৪ লাখ ৮০ হাজার ২৬৪ টাকার অবৈধ সম্পদ এবং ৯৬ কোটি ২৯ লাখ ৭২ হাজার ৭৩৯ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়। তদন্তে যা কিছুটা কমেছে।

মামলাগুলোর তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, কেয়া কসমেটিকস লিমিটেডের চেয়ারম্যান ২০১৯ সালের ২৩ জুন দুদকে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন; যা যাচাই-বাছাই করে ৫২ কোটি ৭৫ লাখ ৪৫ হাজার ৫৪০ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। অন্যদিকে বৈধ আয়ের উৎসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ ১০১ কোটি ৩৬ লাখ ৩৬ হাজার ৭০৪ টাকার সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে।

তদন্তে আরও দেখা গেছে, আবদুল খালেক পাঠানসহ স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ের নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় তাদের নামে পৃথক পাঁচটি সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ জারি করা হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ২৩ জুন দুদক সচিব বরাবর সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন আবদুল খালেক পাঠান। তার দাখিল করা সম্পদবিবরণী যাচাই ও অনুসন্ধানকালে সংগৃহীত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আসামি আবদুল খালেক পাঠান তার দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদসহ মোট ৪৪৬ কোটি ৮৮ লাখ ৫৩ হাজার ৯৩৭ টাকার সম্পদ প্রদর্শন করেছেন।

এদিকে আবদুল খালেক পাঠানের স্ত্রী ও কেয়া কসমেটিকসের পরিচালক ফিরোজা বেগমের বিরুদ্ধে তিন কোটি ১৭ লাখ ৪৫ হাজার ৮৬১ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে অনুমোদিতে চার্জশিটে। যদিও মামলায় আরও বেশি অবৈধ সম্পদের অভিযোগ ছিল।

এছাড়া ২০১৯ সালের ২৩ জুন দাখিল করা সম্পদ বিবরণী যাচাই-বাছাই করে দুদক ফিরোজা বেগমের বিরুদ্ধে ১৭ কোটি ১১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৮৪ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনে।

একইভাবে কেয়া কসমেটিকস লিমিটেডের পরিচালক ও আবদুল খালেকের ছেলে মো. মাসুম পাঠানের বিরুদ্ধে ৯০ লাখ ৪৯ হাজার ৭৪০ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। মাসুম পাঠানও ২০১৯ সালের ২৩ জুন দুদকে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেছিলেন। তার বিরুদ্ধে দুই কোটি ৭২ লাখ ৬৪ হাজার ৮৯৩ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

অন্যদিকে, আব্দুল খালেক পাঠানের মেয়ে ও কেয়া কসমেটিকসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খালেদা পারভীনের বিরুদ্ধে ৫৫ লাখ ২৪ হাজার ৪৮৯ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া এক কোটি ৯৬ লাখ ৩২ হাজার ৩৬১ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করার অভিযোগ আনা হয়।

একইভাবে তার অপর মেয়ে ও কেয়া কসমেটিকস লিমিটেডের পরিচালক তানসীন কেয়ার নামে ছয় কোটি ৮০ লাখ ৩৬ হাজার ২০৩ টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগ আনা হয়েছে পঞ্চম অভিযোগপত্রে। তানসীনের ঘোষিত সম্পদ বিবরণীতে দুই কোটি ৯০ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয় অনুমোদিত চার্জশিটে।

তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪-এর ২৬ (২) ও ২৭ (১) ধারাসহ মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ২০১২-এর ৪ (২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

এর আগে ২০১৭ সালে ২০ আগস্ট বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক থেকে ১১১ কোটি ১৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আবদুল খালেক পাঠান ও ছেলেমেয়েসহ আটজনের বিরুদ্ধে মামলা ও পরবর্তীকালে চার্জশিট দাখিল করেছিল দুদক। ওই মামলায় তাকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছিল। যদিও পরবর্তী সময়ে তিনি জামিনে বের হয়ে আসেন।

অবৈধ সম্পদসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে আবদুল খালেক পাঠানকে ২০১৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন দুদকের তৎকালীন অনুসন্ধান কর্মকর্তা উপপরিচালক হারুন-অর রশীদ।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০