১৯২৪ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি ইস্যু সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা

মাসুম বিল্লাহ: ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ (বিএটিবি) তাদের ব্রিস্টল ও পাইলট ব্র্যান্ডের সিগারেট নিম্ন মূল্যস্তর থেকে মধ্যম মূল্যস্তরে উন্নীত করে বাজারে বিক্রি করেছে। কিন্তু নিম্ন মূল্যস্তরের চেয়ে মধ্যম মূল্যস্তরে সম্পূরক শুল্ক ও মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বেশি। তারা এ বর্ধিত সম্পূরক শুল্ক ও মূসক পরিশোধ করেনি। ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত চার বছরে এভাবে ফাঁকি দেওয়া রাজস্বের পরিমাণ এক হাজার ৯২৪ কোটি টাকা। বিষয়টি শেষ পর্যন্ত আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। এখন এটি নিষ্পত্তিতে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

এ অর্থ পরিশোধে বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ, ভ্যাট) থেকে দাবিনামা জারি করা হয়। কিন্তু তা পরিশোধ না করে বিএটি ২০১৫ সালে উচ্চ আদালতে রিট করে। ২০১৬ সালের ৬ মার্চ এক হাজার ৯২৪ কোটি টাকার বিষয়ে সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। ওইদিন উচ্চ আদালত এ বিষয়ে একটি রায় দেন। রায়ে ২০০৯ সালের জন্য দাবিকৃত ১৪৪ কোটি টাকার রাজস্বকে সময় দ্বারা বারিত বলে বলে উল্লেখ করেন। ফলে বিএটির কাছে সংশোধিত দাবি দাঁড়ায় এক হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। এ অর্থ ৩০ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত। ওই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের ১২ এপ্রিল নতুন করে এক হাজার ৭৮০ কোটি টাকার দাবিনামা জারি করে এলটিইউ। কিন্তু সে অর্থ পরিশোধ করেনি বিএটি। পরে হাইকোর্ট বিভাগের রায়কে তর্কিত করে ২০১৬ সালের ১২ এপ্রিল আপিল বিভাগে পিটিশন দায়ের করে। এর মধ্যে এক দফা বিষয়টি বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) পদ্ধতিতে সমাধানের আগ্রহ প্রকাশ করে বিএটি। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও একাধিকবার চিঠি দিয়েছে বিএটি।

সর্বশেষ গত মাসের শুরুর দিকে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে গত মাসে এনবিআরে চিঠি দেওয়া হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, বিএটির ১৯২৪ কোটি টাকার রাজস্বের বিষয়টি সমাধানের জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। এ বিষয়ে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মতামতের আলোকে গৃহীত কার্যক্রমের অগ্রগতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে অবহিত করতে নির্দেশনা দেওয়া হয় ওই চিঠিতে।

এর আগে এডিআরের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তির দাবি জানিয়ে গত ৩১ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী বরাবর চিঠি দেয় বিএটি। ওই চিঠিতে তারা রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে উপস্থাপন করে এবং এনবিআরের দাবিকৃত রাজস্ব অযৌক্তিক বলে দাবি করে। এমনকি এ রাজস্ব পরিশোধ করা হলে বিএটিবির দেউলিয়া হওয়ার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে বলে উল্লেখ করা হয় বিএটিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেহ্জাদ মুনীম স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে। তবে তাদের এসব বক্তব্য অযৌক্তিক বলে জানিয়েছেন এনবিআরের একাধিক কর্মকর্তা।

এদিকে আদালতে বিষয়টির বিচার প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে থাকায় এডিআরে এটি নিষ্পত্তির সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে এনবিআর। গত অক্টোবরে বিএটিবির চিঠির প্রত্যুত্তরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো একটি চিঠিতে এ বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করেছে এনবিআর।

এতে উল্লেখ করা হয়, আপিল বিভাগে বিএটির করা পিটিশনের বিষয়ে গত ৬ আগস্ট এক দফা শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। পাশাপাশি বিচার প্রক্রিয়া অনেক দূর এগিয়ে গেছে এবং আদালত এখনও এ বিষয়ে ‘লিভ’ মঞ্জুর করেননি। তাই এ মামলাটি এখন আর এডিআরে নিষ্পত্তির সুযোগ নেই।

এছাড়া বিএটির অনুরোধে ২০১৬ সালের ৩ জানুয়ারি অর্থমন্ত্রীর দফতরে এ রাজস্বের বিষয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল, এনবিআর চেয়ারম্যন ও এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয়, বিবেচ্য মামলাটি উচ্চ আদালতে চূড়ান্ত রায়ের অপেক্ষায় থাকায় আদালতের বাইরে প্রশাসনিকভাবে এটি নিষ্পত্তি করার আইনগত সুযোগ নেই।

১৯৭৭ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো। কোম্পানিটির ছয় কোটি শেয়ারের মধ্যে ৭২ দশমিক ৯১ শতাংশই বিদেশি উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে রয়েছে। ফলে এটির মুনাফার সিংহভাগ দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। এছাড়া বাংলাদেশ সরকারের হাতে দশমিক ৬৪ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ১০ দশমিক ৫৩ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে মাত্র দশমিক ৮০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০