১৯ কোম্পানির শেয়ারে ক্যাপিটাল গেইন ১০১-২০০ শতাংশ

সাইমউল্লাহ সবুজ : বিদায়ী বছরে দেশের অর্থনীতিতে ছিল নানা সংকট। এর মধ্যে ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়াসহ রাজনৈতিক অস্থিতিশিলতা ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বিরাজ করেছে। এর মধ্যে কোম্পানির ব্যবসা বা আর্থিক অবস্থা ভালো না হলেও কিছু কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে কয়েকগুণ। এর মধ্যে অধিকাংশ কোম্পানিই স্বল্প মূলধনি কিংবা বিগত কয়েক বছরে লোকসান গুনেছে। আর লাভে থাকা কোম্পানিগুলোও বিনিয়োগকারীদের নামমাত্র লভ্যাংশ দিয়েছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানি ফার কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ারদর গেল বছরের ৩১ অক্টোবর ১০ টাকা ৬০ পয়সা ছিল। কোম্পানিটি এসএফ টেক্সটাইলকে অধিগ্রহণ সম্পন্ন করে। এতে পরের দিন নভেম্বরের ১ তারিখে ফারের শেয়ারদর এক লাফে ৩১ টাকা ৩০ পয়সায় পৌঁছায়। এ হিসাবে শেয়ারদর বেড়েছে ২০ টাকা ৭০ পয়সা বা ১৯৫ দশমিক ২৮ শতাংশ।

জুন সমাপ্ত ২০২২-২৩ হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি কোম্পানিটির পর্ষদ। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ১ টাকা ১২ পয়সা এবং কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১০ টাকা ৯৮ পয়সা। এছাড়া ২০২০-২১ হিসাব বছরে ১ শতাংশ এবং ২০১৯-২০ হিসাব বছরে ১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল ফার কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ।

‘বি’ ক্যাটাগরিতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি ৩০০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনের বিপরীতে পরিশোধিত মূলধন ১৫৩ কোটি ৯ লাখ টাকা। বর্তমানে মোট শেয়ারের ৩২ দশমিক ৬৩ শতাংশ আছে উদ্যোক্তাদের হাতে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে আছে ৩২ দশমিক ৯৬ শতাংশ শেয়ার। আর বাকি ৩৪ দশমিক ৪১ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

প্রকৌশল খাতের কোম্পানি দেশবন্ধু পলিমার লিমিটেডের শেয়ারদর গেল বছরের ১৭ এপ্রিল ছিল ১৫ টাকা ৬০ পয়সা, যা ৯ নভেম্বর ৪৩ টাকা ৬০ পয়সায় পৌঁছায়। এ হিসেবে কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে ২৮ টাকা বা ১৭৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ। জুন সমাপ্ত ২০২২-২৩ হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের ২ দশমিক ৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে কোম্পানিটির পর্ষদ।

আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৫৯ পয়সা এবং এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ১৯ টাকা ২০ পয়সা। ‘বি’ ক্যাটাগরিতে তালিকাভ–ক্ত কোম্পানিটি ৩০০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনের বিপরীতে পরিশোধিত মূলধন ৬১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। মোট শেয়ারের ৩৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ আছে উদ্যোক্তাদের হাতে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে আছে ২৫ দশমিক ৪০ শতাংশ শেয়ার। বাকি ৪১ দশমিক ৬ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের কোম্পানি জেমিনি সি ফুডের শেয়ারদর গেল বছরের ২ জানুয়ারি ছিল ৩৪১ টাকা ৭০ পয়সা, যা ৭ মে ৯৩৪ টাকা ৪০ পয়সায় পৌঁছায়। এ হিসেবে শেয়ারদর বেড়েছে ৫৯২ টাকা ৭০ পয়সা বা ১৭৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ। জুন সমাপ্ত ২০২২-২৩ হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ২০ শতাংশ নগদ ও ৭৫ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ ঘোষণা করে কোম্পানিটির পর্ষদ। আলোচ্য হিসাব বছরে জেমিনি সি ফুডের ইপিএস দাঁড়ায় ১৫ টাকা ৪৭ পয়সা ও এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ২৫ টাকা ৩ পয়সায়।

‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানিটি ৪০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনের বিপরীতে পরিশোধিত মূলধন ১০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। মোট শেয়ারের ৩০ দশমিক ১ শতাংশ আছে উদ্যোক্তাদের হাতে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে আছে ১১ দশমিক ৪১ শতাংশ শেয়ার এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে শূন্য দশমিক ৩৭ শতাংশ শেয়ার। বাকি ৫৮ দশমিক ২১ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

ওষুধ খাতের কোম্পানি এমবি ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ারদর গেল বছর ৩১ জানুয়ারি ছিল ৪৬২ টাকা ২০ পয়সা, যা ২৯ অক্টোবর এক হাজার ২২৫ টাকা ৭০ পয়সায়

পৌঁছায়। এ হিসাবে শেয়ারদর বেড়েছে ৭৬৩ টাকা ৫০ পয়সা বা ১৬৫ দশমিক ১৮ শতাংশ। জুন সমাপ্ত ২০২২-২৩ হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের ১৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে কোম্পানিটির পর্ষদ।

আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির ইপিএস দাঁড়ায় ৩ টাকা ৭৯ পয়সা এবং এনএভিপিএস ৯ টাকা ৭৩ পয়সায়। ‘এ’ ক্যাটাগরিতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি ৩০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনের বিপরীতে পরিশোধিত মূলধন মাত্র ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। মোট শেয়ারের ৭৭ দশমিক ২৫ শতাংশ আছে উদ্যোক্তাদের হাতে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে আছে ৯ দশমিক ১৫ শতাংশ শেয়ার। বাকি ১৩ দশমিক ৬০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

ওষুধ ও রসায়ন খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ইমাম বাটন ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ারদর গেল বছরের ২২ মে ছিল ৮২ টাকা ৮০ পয়সা, যা ২২ নভেম্বর দাঁড়ায় ২১৩ টাকা ৮০ পয়সায় পৌঁছায়। এ হিসেবে শেয়ারদার বেড়েছে ১৩১ টাকা বা ১৫৮ দশমিক ২১ শতাংশ। জুন সমাপ্ত ২০২২-২৩ হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো লভ্যাংশ দেয়নি কোম্পানিটির পর্ষদ। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৭৬ পয়সা এবং এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ১ টাকা ৯৭ পয়সা। এর আগে সমাপ্ত ২০২২, ২০২১ ও ২০২০ হিসাব বছরেও কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি ইমাম বাটন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।

‘জেড’ ক্যাটাগরিতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি ১০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনের বিপরীতে পরিশোধিত মূলধন ৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা। মোট শেয়ারের ৩৪ দশমিক ১২ শতাংশ আছে উদ্যোক্তাদের হাতে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে আছে ৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ শেয়ার। বাকি ৬১ দশমিক ৫৩ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানি লিবরা ইনফিউশনসের শেয়ারদর গেল বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি ছিল ৬৫৯ টাকা, যা পরে ২৬ অক্টোবর এক হাজার ৬৯০ টাকায় পৌঁছায়। এ হিসাবে শেয়ারদর বেড়েছে এক হাজার ৩১ টাকা বা ১৫৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ। জুন সমাপ্ত ২০২০-২০২১ হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য ৩০ শতাংশ নগদ ও ৫০ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ দিয়েছে কোম্পানিটির পর্ষদ। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ১৫ পয়সা এবং এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২৬১ টাকা।

‘বি’ ক্যাটাগরিতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি ১০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনের বিপরীতে পরিশোধিত মূলধন ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা। মোট শেয়ারের ৩৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ আছে উদ্যোক্তাদের হাতে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে আছে ১৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ শেয়ার। বাকি ৫১ দশমিক ৮৯ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

বিদায়ী বছরটিতে ক্যাপিটাল গেইনের তালিকায় থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড। ২০২৩ সালের ১৬ মে তারিখে শেয়ারদর ছিল ১৩ টাকা ৮০ পয়সা, যা বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরের ২৬ তারিখে ৩৪ টাকায় পৌঁছায়। শেয়ারদর বেড়েছে ২০ টাকা ২০ পয়সা বা ১৪৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ। ওষুধ খাতের কোম্পানি সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের গেল বছরের ১২ এপ্রিল কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিল ১০ টাকা, যা পরবর্তীতে বছরে শেষ মাস ডিসেম্বরের ১২ তারিখে ২৪ টাকা ৮০ পয়সায় পৌঁছায়। শেয়ারদর বেড়েছে ১৪ টাকা ৮০ পয়সা বা ১৪৮ শতাংশ।

খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের কোম্পানি ফাইন ফুডস লিমিটেডের শেয়ারদর ১ ফেব্রুয়ারি ছিল ৫৭ টাকা ৭০ পয়সা, বছর শেষে ২৪ ডিসেম্বর তা দাঁড়ায় ১৩৯ টাকা ৭০ পয়সায়। শেয়ারদর বেড়েছে ৮২ টাকা বা ১৪২ দশমিক ১১ শতাংশ। বিবিধ খাতের কোম্পানি মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ারদর গেল বছরের ১ মার্চ ছিল ২৪ টাকা ১০ পয়সা, যা ১৩ সেপ্টেম্বর শেয়ারদর ৫৭ টাকা ৪০ পয়সায় পৌঁছায়। শেয়ারদর বেড়েছে ৩৩ টাকা ৩০ পয়সা বা ১৩৮ দশমিক ১৭ শতাংশ।

ক্যাপিটাল গেইনের তালিকায় থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের কোম্পানি ন্যাশনাল টি’র ১২৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ, বিবিধ খাতের জিকিউ বলপেন ইন্ডাস্ট্রিজ ১২৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ, প্রকৌশল খাতের কোম্পানি বিডি থাই অ্যালুমিনিয়ামের ১১৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ এবং খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের এপেক্স ফুডস ১১৭ দশমিক ৫০ শতাংশ ক্যাপিটাল গেইন করেছে। এছাড়া প্রকৌশল খাতের কোম্পানি অলিম্পিক এক্সেসরিজ ১০৭ দশমিক ৭ শতাংশ, ইয়াকিন পলিমার ১০৪ দশমিক ৯০ শতাংশ, বিমা খাতের সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স ১০৬ দশমিক ৩২ শতাংশ, মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স ১০৩ শতাংশ এবং ইউনিয়ন ইন্সুরেন্স ১০২ দশমিক ১৫ শতাংশ ক্যাপিটাল গেইন করেছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০