Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 5:22 am

১ কোটির বেশি হিসাবে গড় জমা মাত্র ৬৩২ টাকা

রোহান রাজিব: কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি। উৎপাদনশীলতা ও আয় বৃদ্ধি এবং গ্রাম এলাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বিশাল জনগোষ্ঠীর সমৃদ্ধির জন্য কৃষি ও কৃষকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। যদিও দেশের কৃষকদের বড় অংশেরই অবস্থান দারিদ্র্যসীমার নিচে। দৈনন্দিন ব্যয় মেটানোর পর তাদের হাতে আর অতিরিক্ত অর্থ থাকছে না। জমছে না সঞ্চয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশে ১ কোটির বেশি কৃষকের ১০ টাকার ব্যাংক হিসেবে রয়েছে। তবে এসব হিসাবে সঞ্চয়ের পরিমাণ মাত্র ৬৫৬ কোটি টাকা। আর জনপ্রতি গড় জমা দাঁড়িয়েছে মাত্র ৬৩২ কোটি টাকা।

খাত-সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি বছরই কৃষি ও কৃষকদের উন্নতির জন্য ঋণ বরাদ্দ করে থাকে। এর পাশাপাশি কৃষকদের জন্য বিশেষ প্রণোদনা ও পুনঃঅর্থায়ন তহবিলও ঘোষণা করা হচ্ছে। কৃষিতে বড় অঙ্কের ভর্তুকিও দিচ্ছে সরকার। তবুও কৃষকদের জীবনমান উন্নত হচ্ছে না।

তারা বলছেন, দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড হিসেবে ভূমিকা রাখলেও কৃষক বরাবরই বঞ্চিত ও উপেক্ষিত থেকেছেন। সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যেসব নীতি নেয়া হয়, তার সুফল প্রান্তিক কৃষকদের কাছে পৌঁছায় না। কারণ অধিকাংশ সুবিধা কৃষকদের কাছে না পৌঁছে অন্যরা ভোগ করছেন। যার ফলে বঞ্চিত হচ্ছেন আসল কৃষকরা।

তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে কৃষকদের ১০ টাকার ব্যাংক হিসাব দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ২ লাখ ৭৭ হাজার ৮৩৭টি, যা এর আগের প্রান্তিকের চেয়ে ৩৮ শতাংশ বেশি। বিপুল এ ব্যাংক হিসাবে সঞ্চয় জুন শেষে সঞ্চয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে মাত্র ৬৫৬ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। সে হিসাবে দেশের কৃষকদের ব্যাংক হিসাবে গড় সঞ্চয়ের পরিমাণ ৬৩২ টাকা। গত বছরের একই সময়ে দেশের কৃষকদের ১০ টাকার বিশেষ ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৮ লাখ ২০ হাজার ৬৯৯। এস ব্যাংক হিসাবে মাত্র ৫৬৯ কোটি টাকার আমানত ছিল। ওই সময়ে কৃষকদের ব্যাংক হিসাবে গড় সঞ্চয়ের পরিমাণ ছিল ৫৮০ টাকা।

বর্তমানে কৃষকের পুনঃঅর্থায়নের তহবিলের সুবিধাভোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৬ হাজার ৬৭৬টি। এর মধ্যে জমা অর্থের পরিমাণ ৩২৮ কোটি টাকা। আর সরকারি সুবিধা প্রাপ্ত হিসাব ২৯ লাখ ৮ হাজার ৭৯৯টি। এসব হিসাবে ৭২ কোটি টাকার আমানত রয়েছে। ভর্তুকি ও পুনঃঅর্থায়ন সুবিধার বাইরে থাকা কৃষকদের বেশির ভাগ ব্যাংক হিসাবই অকার্যকর বলে ব্যাংকাররা জানিয়েছেন।

সরকারের দেয়া বিভিন্ন ভর্তুকি ব্যাংকের মাধ্যমে কৃষকের হাতে সহজে পৌঁছে দিতে এবং কৃষকদের সাধ্যমতো ব্যাংক হিসাবে সঞ্চয়ের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১০ সালের ১৭ জানুয়ারি কৃষকদের জন্য ১০ টাকায় হিসাব খোলার সুযোগ করে দেয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে এক হাজার ৯৯১ কোটি টাকার কৃষি ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শস্য উৎপাদনের জন্য বিতরণ হয়েছে ৮৭৪ কোটি টাকা। এর পরেই রয়েছে গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগি উৎপাদন খাতে ৪৭৯ কোটি টাকা।

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের বার্ষিক কৃষি ও পল্লি ঋণ বিতরণের লক্ষ্য ঠিক করেছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। যা গত অর্থবছরের চেয়ে ১৩ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছর কৃষি ঋণের লক্ষ্য ছিল ৩০ হাজার ৮১১ কোটি টাকা।

কম সুদে কৃষকদের হাতে ঋণ পৌঁছাতে এবার ক্ষুদ্র ঋণদাতা সংস্থার (এমএফআই) ওপর বেসরকারি ব্যাংকের নির্ভরশীলতা আরও কমিয়ে আনা হচ্ছে। আর এজন্য ব্যাংকের নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অন্তত ৫০ শতাংশ কৃষিঋণ বিতরণ বাধ্যতামূলক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা এতদিন ছিল ৩০ শতাংশ। এছাড়া কৃষিঋণের কত অংশ কোন খাতে দিতে হবে, তাও নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।

গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩২ হাজার ৮২৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকার কৃষি ঋণ বিতরণ করেছিল ব্যাংকগুলো। কিন্তু ওই অর্থবছরে কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্য ছিল ৩০ হাজার ৮১১ কোটি। অর্থাৎ নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি কৃষি ঋণ বিতরণ করেছে দেশের ব্যাংকগুলো। কিছু কিছু ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি বিতরণ করেছে। আবার কিছু ব্যাংক কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রায় অর্জন করতে পারেনি। এরকম ব্যর্থ ব্যাংকের সংখ্যা আটটি।