শেয়ার বিজ ডেস্ক: সিঙ্গাপুরের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী গান কিম ইয়ং বছরে দেশটির রপ্তানি আয় এক ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে চান। এজন্য বৈশ্বিক ব্যবসায়ীদের আকর্ষণ করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে তার মন্ত্রণালয়। খবর: দ্য স্ট্রেইটস টাইমস।
সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন খাতের ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ব্যবসাবাণিজ্য বিশেষ করে রপ্তানি খাত অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে পরিকল্পনা করছেন গান কিম। সম্প্রতি সংসদে তিনি সিঙ্গাপুর ইকোনোমি ২০৩০ পরিকল্পনা পেশ করেন। এতে ২০৩০ সালের মধ্যে বছরে রপ্তানি বাণিজ্য ১ ট্রিলিয়ন ও অফশোর বাণিজ্য দুই ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে চান। এর আগে ২০২০ সালে ৮০ হাজার ৫০০ কোটি ডলার সমমূল্যের পণ্য রপ্তানি করে দেশটি। পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নে পৃথক কৌশল অবলম্বন করা হবে। এর মধ্যে অর্থনীতির প্রধান চার কৌশল সেবা, উৎপাদন, বাণিজ্য ও উদ্যোগের সমন্বয়ে কৌশলগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমাদের শিল্প, উদ্যোগ ও কর্মীরা দীর্ঘমেয়াদে টেকসই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পারবেন। এই ২০৩০ বাণিজ্য কৌশল বাণিজ্য খাতের সম্প্রসারণ করবে এবং এতে উপকৃত হবে সিঙ্গাপুরসহ পুরো বিশ্ব বলে মনে
করেন মন্ত্রী। কেননা এ সময় বিশ্বে নেতৃত্বস্থানীয় ব্যবসায়ীদের আকৃষ্ট করবে তার পরিকল্পনা, যা স্থানীয় উদ্যোগগুলোকে বিশ্ববাজারে প্রবেশে সহায়তা করবে।
বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন এন্টারপ্রাইজ সিঙ্গাপুর স্কেল-আপ এসজি (১২ থেকে ১৮ মাসের প্রোগ্রাম) ও এসএমই খাতের এক বছর মেয়াদি লিডারশিপ ফর ট্রান্সফরমেশন (ইএলটি) প্রোগ্রামের আওতায় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে, যা বৈশ্বিক পর্যায়ে অবদান রাখবে। দেশীয় প্রতিষ্ঠানের সম্ভাবনা তুলে ধরতে মন্ত্রী ফিশ ইন্টারন্যাশনাল সোর্সিং হাউসের (ফিশ) কথা উল্লেখ করেন। প্রতিষ্ঠানটি ইএলটি প্রোগ্রামের আওতায় সিফুড আমদানি ও রপ্তানি করে। বিশ্বের ৯০টির বেশ বাজারে ফিশের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি দুই কোটি ডলার ব্যয়ে সিফুড প্রক্রিয়াজাত ও উদ্ভাবন সেন্টার নির্মাণ করার উদ্যোগ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি চলতি বছর তাদের রাজস্ব আয় তিনগুণ করার ব্যাপারে আশাবাদী। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ফিশের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোয় বাড়তি কর্মসংস্থান হবে। এ ধরনের খাতে ২০২০ সালে সবচেয়ে বেশি মানুষের (৩ লাখ) কর্মসংস্থান হয়। এই কর্মীদের বেশিরভাগ স্থানীয় এবং তাদের মধ্যে ৭০ শতাংশ পেশাদার, ব্যবস্থাপক, নির্বাহী ও কারিগরি কর্মকর্তা বলে জানান মন্ত্রী। সিঙ্গাপুরের যেসব প্রতিষ্ঠান ব্যবসায়ের ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে আগ্রহী, যারা বৈশ্বিক পর্যায়ে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকতে চায় ও নতুন উদ্ভাবন আনতে চায় তাদের জন্য দ্রুততম উপায়ে ঋণ দেয়া হবে। এর মধ্যে রয়েছে টেম্পোরারি ব্রিজিং লোন প্রোগ্রাম, এন্টারপ্রাইজ ফিন্যান্সিং স্কিম (ইএফএস) প্রভৃতি। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিমা, তথ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তিগত সহায়তাসহ লজিস্টিক সহায়তা করা হবে।
সিঙ্গাপুর ইকোনোমি ২০৩০ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় গত বছর। ১০ বছরে উৎপাদন সক্ষমতা ৫০ শতাংশ বাড়ানো হবে এর আওতায়।
গত বছর বিশ্বে সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক অর্থনীতির র্যাঙ্কিংয়ে সিঙ্গাপুর যুক্তরাষ্ট্র ও হংকংকে ছাড়িয়ে যায়। সিঙ্গাপুরের উঠে আসার পেছনে দেশটির উন্নত প্রযুক্তিভিত্তিক অবকাঠামো, দক্ষ শ্রমিকের প্রাপ্যতা, অনুকূল অভিবাসন আইন ও নতুন ব্যবসার সুপরিকল্পিত উদ্যোগ কাজ করেছে। এ ছাড়া দেশটির স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ, দক্ষ দেশি ও বিদেশি জনবল এবং ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সিঙ্গাপুরকে অর্থনৈতিক পরাশক্তি করে তুলেছে। এ ধারা বজায় রাখার ব্যাপারে আশাবাদী দেশটির সরকার। পৃথকভাবে বর্তমানে সিঙ্গাপুরের কর্মজীবী মানুষ যেন উৎপাদন খাতে আরও সম্পৃক্ত হতে পারেন তাই এম২০৩০ ক্যারিয়ার ইনিশিয়েটিভ ঘোষণা দেয়া হবে। এই প্রোগ্রামের আওতায় সরকার পলিটেকনিক ও কারিগরি শিক্ষায় ডিগ্রিধারীদের প্রাধান্য দেবে।