শেয়ার বিজ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন ৩০ সেপ্টেম্বর শেষ হতে যাওয়া ২০২৪ অর্থবছরে দেশটির শরণার্থী কর্মসূচির আওতায় ১ লাখ ২৫ হাজার শরণার্থী নেয়ার পরিকল্পনা করেছে। এই পরিকল্পনা সফল হলে তা হবে তিন দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। খবর: রয়টার্স।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের পর্যালোচনা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতাদের একটি অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদনে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে, কমলা হ্যারিস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে শরণার্থী সমাবেশ অব্যাহত থাকবে।
আগামী ৫ নভেম্বরের নির্বাচনে রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ডেমোক্র্যাট ও বাইডেনের ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিসের জন্য অভিবাসন ইস্যু একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। কেননা ট্রাম্প তার ২০১৭-২০২১ সালের প্রেসিডেন্সির সময় শরণার্থী আশ্রয়কে কমিয়ে এনেছেন এবং পুনর্র্নিবাচিত হলে পুনরায় অভিবাসন কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে বার্ষিক শরণার্থী গ্রহণের সংখ্যা সর্বোচ্চ ১৫ হাজারে সীমাবদ্ধ করে দিয়েছিলেন। ফলে, সিরিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বিপন্ন জনগোষ্ঠীর আমেরিকায় শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় গ্রহণ একদম সীমিত হয়ে পড়েছিল। শরণার্থী গ্রহণে সর্বোচ্চ সংখ্যা বেঁধে দেওয়া ছাড়াও সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমেরিকায় নানাভাবে অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছেন। এমনকি করোনা মহামারিকে কাজে লাগিয়েও তিনি আমেরিকায় লোকজনের প্রবেশ নিষিদ্ধ করার প্রয়াস নিয়েছিলেন।
জনস্বাস্থ্য নিরাপত্তা আইনের ‘টাইটেল ৪২’ নামের একটি আইনকে কার্যকর করা হয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে। ২০২০ সালের মার্চ মাসে আরোপিত ‘টাইটেল ৪২’-এর কারণে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হবে সন্দেহ হলেই আমেরিকায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এই আইনের কারণে শুধু দক্ষিণের সীমান্তে গত এক বছরে ৬ লাখ ১৮ হাজারের বেশি অভিবাসীকে আটকে দেওয়া হয় বলে মার্কিন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে আসে। উদারনৈতিক আইনপ্রণেতাসহ মানবাধিকার গ্রুপগুলো এখনো চালু থাকা ‘টাইটেল ৪২’ অকার্যকর করার জন্য প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কাছে দাবি জানিয়ে আসছে।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনে রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ ও শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় পাওয়ার কর্মসূচি আলাদা। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে সংঘাত-সংঘর্ষ-প্রতিকূলতার কারণে শরণার্থী হওয়া লোকজন আমেরিকায় এসে থাকে। আসার আগে এসব শরণার্থীকে আমেরিকার অভিবাসনপ্রক্রিয়ার নানা যাচাই-বাছাইয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। সীমান্তে উপস্থিত হয়ে বা আমেরিকায় পৌঁছে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার চেয়ে অভিবাসনের এই প্রক্রিয়া ভিন্ন। যুক্তরাস্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট এক বিবৃতিতে বলেছে, শরণার্থী পুনর্বাসন কর্মসূচির বিষয়ে বাইডেনের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে একমত তবে তারা আগামী বছরের পরিকল্পনা সম্পর্কে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থী হিসেবে এমন ব্যক্তিরা অগ্রাধিকার পাবেন যারা জাতি, ধর্ম, জাতীয়তা, একটি নির্দিষ্ট সামাজিক গোষ্ঠীর সদস্যপদ বা রাজনৈতিক মতামতের ভিত্তিতে নিপীড়নের মুখোমুখি হন। যোগ্যতা অর্জনের জন্য আবেদনকারীদের অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে থাকতে হবে। বাইডেন ২০২২ অর্থবছরে প্রথম ১ লাখ ২৫ হাজার শরণার্থী প্রবেশের লক্ষ্য নির্ধারণ করেন। বাইডেন প্রশাসন লাতিন আমেরিকা থেকে শরণার্থী প্রবেশও বাড়িয়েছে, যা রেকর্ড। বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর জোট রিফিউজি কাউন্সিল ইউএসএ আগস্টে বাইডেনের প্রতি ২০২৫ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা কমপক্ষে ১ লাখ ৩৫ হাজারে উন্নীত করার আহ্বান জানিয়েছিল।
উল্লেখ্য, ১ সেপ্টেম্বর থেকে আমেরিকার অভিবাসনবর্ষ শুরু হয়। ২০২১ সালে জো বাইডেন সেই অভিবাসীবর্ষে যুক্তরাষ্ট্রে ৬২ হাজার ৫০০ শরণার্থী গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছিলেন। উদারনৈতিক ও মানবাধিকার গ্রুপগুলোর ক্রমাগত চাপে অভিবাসনব্যবস্থা সামাল দিতে হিমশিম খাওয়ার মুখেও প্রেসিডেন্ট বাইডেন এ ঘোষণা দেন। রাজনৈতিক আশ্রয়সহ অভিবাসনের অন্য নাজুক এলাকাগুলোয় দ্রুততার সঙ্গে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বাইডেন প্রশাসনের ওপর উদারনৈতিকদের পক্ষ থেকে চাপ রয়েছে। এর পর থেকে অর্থাৎ ২০২২ সাল থেকে বার্ষিক শরণার্থী গ্রহণের সংখ্যা ১ লাখ ২৫ হাজার করার জন্য অভিবাসন বিভাগ কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে তখন জানানো হয়।