নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি বছরের জুনে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে রেকর্ড ১ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে; যা আগের মাসের চেয়ে ২৩ হাজার ৮২০ কোটি টাকার বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
খাতসংশ্লিষ্টদের মতে, তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন ও অনলাইনভিত্তিক সেবার ক্রমাগত সহলভ্যতা মোবাইল ব্যাংকিংকে এই উচ্চতায় নিয়ে এসেছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে মোবাইল ও অনলাইন ব্যাংকিংয়ের লেনদেন ব্যাংকভিত্তিক লেনদেনকেও ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিকাশ, রকেট, ইউক্যাশ, মাইক্যাশ, শিওর ক্যাশসহ নানা নামে ১৩টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে। এ প্ল্যাটফরমে লেনদেনের সঙ্গে দিন দিন বাড়ছে গ্রাহক সংখ্যাও। বর্তমানে শুধু লেনদেন নয়, অনেক নতুন নতুন সেবাও যুক্ত হচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল অর্থাৎ সেবা মূল্য পরিশোধ, কেনাকাটার বিল পরিশোধ, মোবাইল রিচার্জ, বেতন-ভাতা প্রদান, বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো অর্থাৎ রেমিট্যান্স পাঠানোসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সেবা দেয়া হচ্ছে।
২০২৩ সালের জুন মাস শেষে গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ কোটি ৭২ লাখ ৬৯ হাজার। তবে মে মাসে এমএফএসে নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা ছিল ২০ কোটি ৩৯ লাখ ৭০ হাজার। এদিকে ‘নগদ’-এর মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় রয়েছে সাড়ে ৬ কোটির বেশি গ্রাহক। এ হিসাব যোগ করলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা সাড়ে ২৭ কোটি ছাড়াবে। এর কারণ অনেক গ্রাহক একাধিক সিম ব্যবহার করছেন। লেনদেনের সুবিধার্থে একাধিক সিমে হিসাব খুলছেন গ্রাহকরা।
এসব নিবন্ধিত হিসাবের মধ্যে পুরুষ গ্রাহক ১১ কোটি ৯৮ লাখ ৭৪ হাজার ২৯৬ ও নারী গ্রাহক ৮ কোটি ৬৮ লাখ ৪১ হাজার ৭৬৬ জন। এছাড়া মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৮৫ হাজার ৭২২টি, যা মে মাসে ছিল ১৫ লাখ ৭০ হাজার ৩৪০টি। ডিসেম্বরে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে পাঠানো হয়েছে ৩৩ হাজার ৯২৩ কোটি টাকা। আর উত্তোলন করা হয়েছে ৩৭ হাজার ৭০৮ কোটি টাকা। এমএফএস সেবায় ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি হিসাবে ৩৩ হাজার ৯২৩ কোটি টাকা লেনদেন হয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা বাবদ বিতরণ হয় পাঁচ হাজার ১৮৭ কোটি টাকা। বিভিন্ন কেনাকাটায় লেনদেন হয় ছয় হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা।
গ্রাহক এখন ঘরে বসেই ডিজিটাল গ্রাহক-সম্পর্কিত তথ্যের (কেওয়াইসি) ফরম পূরণ করে সহজেই এমএফএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানে হিসাব খুলতে পারছেন। ফলে ঝামেলামুক্ত হয়ে হিসাব খুলতে পারছেন তারা। ২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালুর মধ্য দিয়ে দেশে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের যাত্রা শুরু হয়।
এরপর ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে বিকাশ। বর্তমানে দেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার বেশির ভাগই বিকাশের দখলে। এরপর ‘নগদ’-এর অবস্থান।
এখন গাড়িচালক, নিরাপত্তাকর্মী ও গৃহপরিচারিকাদের বেতনও এখন দেয়া হচ্ছে বিকাশ, রকেট ও নগদের মতো সেবামাধ্যম ব্যবহার করে। পোশাক খাতসহ শ্রমজীবীরা এমএফএস সেবার মাধ্যমে গ্রামে টাকা পাঠাচ্ছেন। ফলে দিন দিন নগদ টাকার লেনদেন কমে আসছে। এ প্রবণতা দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।