২০১৪ ও ১৮ সালের ভোট নিয়ে অতিমাত্রায় বিতর্ক আছে: সিইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে অতিমাত্রায় সমালোচনা ও তর্ক-বিতর্ক হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সমালোচনাও তীব্র ও তিক্ত। আমরা নিরপেক্ষ থেকে অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করে সমালোচনা ও বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকতে চাই। গতকাল নির্বাচন ভবনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

সিইসি বলেন, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা ইসির সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ দায়িত্ব। একইভাবে ইসিকে সহায়তা করা সরকারের সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ দায়িত্ব। আমরা সে দায়বদ্ধতা থেকেই সংলাপের আয়োজন করেছি। ১৯৭০ থেকে আমরা নির্বাচন দেখে এসেছি। ১৯৫৪ সালের নির্বাচন আমরা জানি। ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন এক অর্থে সাম্প্রতিক। অতীতের অনেক নির্বাচন নিয়েই সমালোচনা বা তর্ক-বিতর্ক হলেও ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে অতিমাত্রায় সমালোচনা ও তর্ক-বিতর্ক হচ্ছে।

সিইসি বলেন, আমরা প্রায় চার-পাঁচ পর্বে সংলাপের আয়োজন করেছি। সুধীজনরা তাদের মতামত উপস্থাপন করেছেন। নির্বাচনে অর্থশক্তি, পেশিশক্তির প্রভাব, নির্বাচনে সহিংসতা, ভোট কারচুপি, কেন্দ্র দখল, ব্যালট পেপার ছিনতাই করে বাক্স ভরাট করা, ভোটকেন্দ্রে বাধা প্রদান, আমলতন্ত্রের পক্ষপাতিত্ব, আইনশৃঙ্খলা সদস্যদের ভূমিকা, ইসির নির্লিপ্ততা ইত্যাদি বিষয়ে মতামত উঠে এসেছে। আমরা সব মতামত পর্যালোচনা করে পরবর্তী সময়ে অবহিত করেছি।

তিনি আরও বলেন, আমরা নির্বাচন অবাধ ও গ্রহণযোগ্য করতে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে যাব। এই সংলাপ বিশেষ গুরুত্ব বহন করবে। আওয়ামী লীগ দেশের সবচেয়ে বড় দল। তাদের কাছে প্রত্যাশাও বেশি থাকে। পরপর তিনবার সরকারে আছে। এজন্য সাধারণ মানুষ আওয়ামী লীগকে সরকারি দল বা ক্ষমতাসীন দল বলে থাকে। কিন্তু সংবিধানে সরকারি দল বা ক্ষমতাসীন দল বলে কোনো কথা নেই। আমি যদি ভুল বুঝে না থাকি, আওয়ামী লীগ আর ১০টি দলের মতোই একটি রাজনৈতিক দল। সরকার একটি সাংবিধানিক রাষ্ট্রীয় সংগঠন। এটি অবস্থানের একটি দ্বিমাত্রিকতা। কমিশনের ইচ্ছা, সদিচ্ছা এবং অনুভূতি; সরকার এবং আপনার দলের সবাইকে অবহিত করে বাধিত করবেন।

সিইসি বলেন, অংশগ্রহণমূলক, অবাধ, নিরপেক্ষ এবং ভোটাধিকার প্রয়োগের নিশ্চয়তা সম্পন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সংবিধানের প্রতি অনুগত থেকে আইন ও বিধিবিধান অনুসারে ইসি তার দায়িত্ব পালন করবে। আমরা আশা করি, সবাই নির্বচন কমিশনকে (ইসি) সহায়তা করবে এবং দলগুলোর দায়িত্বশীল আচরণে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সফলতা কামনা করছি।

তিনি বলেন, সংলাপে কিছু বিষয় ওঠে এসেছে। অনেক পার্টি মনে করছে এক দিনে নির্বাচন করা সমীচিন হবে না। ভারতের মতো পৃথক দিনে হওয়া উচিত। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অপ্রতুলতাকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে তারা। অনেকে সেনাবাহিনী মোতায়েন করার জন্য বলেছেন। সেনাবাহিনীর প্রতি জনমানুষের আস্থা অনেক বেশি বলে তারা মনে করেন। আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। আরেকটা বিষয়ে সংকট থেকে যাবে, সেটা হলো ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)। ইভিএম নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে সমর্থন পেয়েছি। অধিকাংশ দল ইভিএম বিশ্বাস করছে না। এর ভেতরে কী জানি একটা আছে। ইভিএম নিয়ে আমাদের যে অনুভূতি আমরা ব্যক্ত করেছি। ফলাফল ৭১ শতাংশ পর্যন্ত ভোট কাস্ট হয়েছে। কিন্তু অনেককেই আস্থায় আনতে পারছি না। তারা মনে করছেন, না কিছু একটা আছে। ইভিএম নিয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নেব স্বাধীনভাবে।

সংলাপে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের আওয়ামী লীগ প্রতিনিধি দল অংশ নেয়। তাদের মধ্যে ছিলেন উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, কর্নেল ফারুক খান, ড. আব্দুর রাজ্জাক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০