Print Date & Time : 23 June 2025 Monday 2:24 am

২০১৬-১৭ অর্থবছর: অর্ধযুগে ডিএসইর লেনদেনে রেকর্ড

 

নিয়াজ মাহমুদ: ২০১৬-১৭ অর্থবছর শেষ হচ্ছে আজ। তবে চলতি অর্থবছরের শেষ কার্যদিবস ছিল গতকাল বৃহস্পতিবার। গত অর্থবছরের তুলনায় এ বছর দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বেড়েছে লেনদেন, সূচক ও বাজার মূলধন। ২০১০ সালের ভয়াবহ ধস-পরবর্তী যে কোনো অর্থবছরের তুলনায় টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বিদায়ের দ্বারপ্রান্তে থাকা এ অর্থবছরে।

ডিএসই’র দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ডিএসইতে ২৩৯ কার্যদিবসে মোট লেনদেন হয়েছে এক লাখ ৮০ হাজার ৫২২ কোটি ২০ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। গড় লেনদেন হয়েছে ৭৫৫ কোটি টাকা। আর গত অর্থবছরে ২৪৭ কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল এক লাখ সাত হাজার ২৪৬ কোটি ছয় লাখ টাকা। সে হিসাবে ডিএসইতে লেনদেন বেড়েছে ৭৩ হাজার ২৭৬ কোটি ১৩ লাখ ৮৬ হাজার টাকা বা ৬৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের পাশাপাশি বেড়েছে সূচক। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম দিন ডিএসইর প্রধান সূচক ডিসইএক্স শুরু হয়েছিল চার হাজার ৫০৮ পয়েন্ট দিয়ে; যা শেষ কার্যদিবসে এসে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৬৫৬ পয়েন্টে। সে হিসাবে আলোচ্য বছরে প্রধান সূচক বেড়েছে এক হাজার ১৪৮ পয়েন্ট বা ২৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ডিএস৩০ সূচক বেড়েছে ৩১৩ পয়েন্ট বা ১৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ। একই সঙ্গে ডিএসইএস সূচক বেড়েছে ১৮৬ পয়েন্ট বা ১৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ।

ডিএসইর লেনদেন ও সূচকের সঙ্গে মোট বাজার মূলধনও বেড়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম কার্যদিবসে তিন লাখ ১৮ হাজার ৫৭৪ কোটি ৯৩ লাখ ৪৪ হাজার টাকা বাজার মূলধন নিয়ে শুরু হয়েছিল। আর গতকাল চলতি অর্থবছরের শেষ কার্যদিবসে এসে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়ে দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ৮০ হাজার ১০০ কোটি ৯ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। সে হিসাবে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ৬১ হাজার ৫২৫ কোটি ১৬ লাখ ১২ হাজার টাকা বা ১৯ দশমিক ৩১ শতাংশ।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১০-১১ অর্থবছরে পুঁজিবাজারে ভয়াবহ ধসের বছর ডিএসইতে গড় লেনদেন হয় এক হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা। ২৪০ কার্যদিবসে মোট লেনদেন হয় তিন লাখ ২৫ হাজার ৯১ কোটি টাকা। দেশের ইতিহাসে এ বছরই সর্বোচ্চ লেনদেন হয়। পরবর্তী অর্থবছরে (২০১১-১২) লেনদেন কমে যায় প্রায় তিনগুণ। এরপর ছয়টি অর্থবছর শেষ হয়েছে। আরেকটি অর্থবছরও শেষ হওয়ার পথে। ছয় বছরে লেনদেনের মাত্রা ২০১০-১১ অর্থবছরের কাছাকাছিও যেতে পারেনি।

ডিএসই’র গত ছয় অর্থবছরের লেনদেনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১১-১২ অর্থবছরে স্টক এক্সচেঞ্জটিতে গড় লেনদেন হয় ৪৯২ কোটি টাকা। এ বছর ডিএসইতে মোট ২৩৮ কার্যদিবস শেয়ার লেনদেন হয়। এ বছর গড়ে ৭৮ কোটি ছয় হাজার শেয়ার লেনদেন হয়। বছরজুড়ে টাকার অঙ্কে মোট লেনদেন হয় এক লাখ ১৭ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা।

এর পরের অর্থবছর (২০১২-১৩) গড় লেনদেন কমে দাঁড়ায় মাত্র ৩৬৪ কোটি টাকা। ২৩৫ কার্যদিবসে মোট লেনদেন হয় ৮৫ হাজার ৭১৬ কোটি টাকা। বছরের ব্যবধানে লেনদেন কমে যায় ৩১ হাজার কোটি টাকারও বেশি। পরবর্তী অর্থবছরে (২০১৩-১৪) টাকার অঙ্কে মোট লেনদেনের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় এক লাখ ১২ হাজার ৫৩৯ কোটি টাকার শেয়ার। ২৩৯ কার্যদিবসের গড় লেনদেন হয় ৪৭০ কোটি টাকা।

২০১৪-১৫ অর্থবছরে এসে ডিএসইর লেনদেন সামান্য বাড়ে। ২৩৮ কার্যদিবসে মোট লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়ায় এক লাখ ১২ হাজার ৩৫১ কোটি টাকা। ওই বছর ডিএসইতে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৪৭২ কোটি টাকা। যা তার আগের অর্থবছরের তুলনায় দুই কোটি টাকা বেশি। এর পরের অর্থবছরে (২০১৫-১৬) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে মোট লেনদেন হয় এক লাখ ৭২৪ কোটি টাকা। যা আগের অর্থবছরের তুলনায় অনেকটাই কম। ওই বছর ২৪৭ কার্যদিবসে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৪৩৪ কোটি টাকা।

ডিএসই’র তথ্যানুযায়ী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের শুরুতে দুই হাজার ৮৯৫ কোটি ৮৪ লাখ ৯৪ হাজার ৭০৫টি মার্কেট ভলিউম ছিল। যা অর্থবছর শেষে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৪৩৫ কোটি ৭৬ লাখ ৯১ হাজার ৫০১টি। সে হিসাবে মার্কেট ভলিউম বেড়েছে দুই হাজার ৫৩৯ কোটি ৯১ লাখ ৯৬ হাজার ৭৯৬টি বা ৮৭ দশমিক ৭১ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত সাত বছরে অনেক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ডিএসই, সিএসই, বিএসইসি অনেক উদ্যোগ নিয়েছে। নতুন অনেক আইন-কানুন, বিধিবিধান প্রণীত হয়েছে। এর ফলে ক্রমেই গতিশীল হচ্ছে বাজার। তবে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোয় সুশাসনের অভাব, বুদ্ধিমান বিনিয়োগকারীর অভাব, কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে গোঁজামিলের বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ সংশ্লিষ্টরা আরও উদ্যোগী হলে বাজার কাক্সিক্ষত জায়গায় পৌঁছাবে বলে মনে করছেন তারা।

অ্যাংকর সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এজেডএম নাজিম উদ্দিন বলেন, পুঁজিবাজারে দীর্ঘ মেয়াদে স্থিতিশীলতা আনতে সর্বস্তরে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। আর সুশাসন নিশ্চিত করতে না পারলে স্থিতিশীল পুঁজিবাজার গঠন করা কোনো দিনই সম্ভব হবে না। আমাদের পুঁজিবাজারে সুশাসনের বড় অভাব রয়েছে। এর অভাবেই বাজার এখন আস্থাহীনতায় ভুগছে। কাজেই নিয়ন্ত্রক সংস্থায় যারা আছেন, তারা সুশাসন নিশ্চিত করতে পারলে বাজারে লেনদেনের পরিমাণ আরও বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।