আমাদের দেশে বাজার মূলধন ও জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) রেশিও ২১ হওয়াটি খুব একটি ভালো খবর নয়। বেশিরভাগ দেশেই এটি ৭০ থেকে ১০০-এর ওপরে রয়েছে। আমাদের পুঁজিবাজারকে এ অবস্থানে আনতে হলে ২০১৮ সালে ন্যূনতম চারটি ভালো ইস্যু আনতে হবে। এর মধ্যে একটি বহুজাতিক, একটি সরকারি এবং ওষুধ ও সিমেন্ট খাতের দুটি করে মোট চারটি ভালো কোম্পানি বাজারে আনা খুবই জরুরি। গত বছর আর্থিক খাত খুবই ভালো করেছে। এ খাতে যারা জানুয়ারিতে বিনিয়োগ করেছিল তারা অনেকেই জুন-জুলাইয়ে ৭০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা করতে পেরেছে। সবকিছু বিবেচনায় ২০১৭ সালে বাজার অনেকটাই ইতিবাচক ছিল। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। খুজিস্তা নূর-ই-নাহারীনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন আইনজীবী ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক হাসান মাহমুদ বিপ্লব এবং আইসিএবির ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মাহমুদ হোসেন, এফসিএ।
হাসান মাহমুদ বিপ্লব বলেন, গত বছর এসইসি ‘এ’ ক্যাটেগরিতে উন্নীত হয়েছে। আর এসইসি হচ্ছে পুঁজিবাজারের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তারা কখনোই চাইবে না ‘বি’ ক্যাটেগরিতে নেমে যেতে। ফলে এসইসি ‘এ’ ক্যাটেগরি ধরে রাখতে ইতোমধ্যে পুঁজিবাজারের বেশ কিছু সংস্কার করেছে। সামনে আরও অনেক সংশোধন কার্যক্রম রয়েছে। তবে একটি সংশোধন জরুরি। আর তা হচ্ছে, আমরা ডিমিউচুয়ালাইজড স্টক এক্সচেঞ্জ করেছি কিন্তু স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার খুঁজতে ব্যর্থ হয়েছি। আর এর বড় কারণ হচ্ছে, ডিমিউচুয়ালাইজেশন স্টক এক্সচেঞ্জে যারা বসে আছেন তাদের প্রকৃতপক্ষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রতি কোনো মায়া নেই। সারা পৃথিবীতে ডিমিউচুয়ালাইজেশন করা হয় নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্য। তাই স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার নির্বাচনই ২০১৮ সালের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করি। তিনি বলেন, জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) রেশিও ২১ হওয়াটি খুব একটি ভালো খবর নয়। বেশিরভাগ দেশেই এটি ৭০ থেকে ১০০-এর ওপরে আছে। এমন অবস্থানে আসতে হলে ২০১৮ সালে আমাদের ন্যূনতম চারটি ভালো ইস্যু আনতে হবে। এর মধ্যে একটি ম্যাল্টিন্যাশনাল ও একটি সরকারি, ওষুধ ও সিমেন্ট খাতের দুটি করে মোট চারটি ভালো কোম্পানি বাজারে আনা খুবই জরুরি। তাছাড়া গত বছর আর্থিক খাত খুবই ভালো করেছে। এ খাতে যারা জানুয়ারিতে বিনিয়োগ করেছিল তারা অনেকেই জুন-জুলাইয়ে ৭০-৮০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা পেয়েছে। সেদিক বিবেচনায় ২০১৭ সালে বাজার অনেকটাই ইতিবাচক ছিল বলা যায়।
মো. মাহমুদ হোসেন বলেন, ৩১ ডিসেম্বর ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অর্থবছরের পরিসমাপ্তি হলো। তারা তাদের বার্ষিক হিসাব-নিকাশ চূড়ান্ত করেছে। সব ব্যাংকই কিন্তু খুব ভালো মুনাফা করেছে। তারপরও বছর শুরুর প্রথম দিনে বাজারে তার প্রতিফলন আসেনি। এর কারণ হতে পারে সব বিনিয়োগকারী এখনও বাজারে সেভাবে ফেরেনি। নববর্ষের প্রথম দিনটি অনেকেই হয়তো উপভোগ করেছে অথবা দেশের বাইরে বা অন্য কোথাও ঘুরতে গেছে। পাশাপাশি ব্যাংক খাতে গত বছর যে অরাজকতা হয়েছে তাতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরতে একটু সময় লাগবে। এছাড়া ২০১৭ সালে রেগুলেটেড ট্রেডিং (সার্কুলার বা কমিটেড ট্রেডিং) নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। রেগুলেটেড ট্রেডিং পুঁজিবাজারের জন্য খুবই খারাপ বিষয়। বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বিনিয়োগের আগে শেয়ারপ্রতি সম্পদ এবং এর লভ্যাংশ দেওয়ার ইতিহাস কেমন তা দেখা উচিত। আর এসব বিবেচনা করে যদি সঠিকভাবে শেয়ার সংগ্রহ করা যায় তাহলে দীর্ঘ ও স্বল্পমেয়াদি উভয় ধরনের বিনিয়োগে লাভ করা সম্ভব হবে। আর অধিক দরে শেয়ার কেনা থেকে বিরত থাকতে হবে।
শ্রুতি লিখন: রাহাতুল ইসলাম