পুঁজিবাজারে ধসের পর গত পাঁচ-ছয় বছরের মধ্যে গত বছরটি তুলনামূলকভাবে ভালো কেটেছে। তবে সূচক ঊর্ধ্বমুখী হলেও লেনদেন খুব বেশি বাড়েনি। আমাদের যে বাজার মূলধন অথবা বাজারে যত কোম্পানি আছে সে তুলনায় লেনদেন ৫০০-৭০০ কোটি টাকা না হয়ে আরও বেশি হওয়া উচিত। এ বছরই পুঁজিবাজারের সূচক ছয় হাজার ৩০০ পয়েন্টে ছুঁয়েছে, সেইসঙ্গে লেনদেন আরও বাড়া দরকার। এছাড়া জিডিপিতে (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাত দশমিক ২৮ শতাংশ, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ এবং মূল্যস্ফীতিও মোটামুটি স্থিতিশীল অবস্থানে আছে। সব মিলিয়ে মাইক্রো ইকোনমিক পরিস্থিতি ভালো বা স্থিতিশীল অবস্থায় আছে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। মো. ছায়েদুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন বিডি নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান প্রতিবেদক আবদুর রহিম হারমাছি ও দৈনিক সমকালের বিজনেস এডিটর মো. জাকির হোসেন।
আবদুর রহিম হারমাছি বলেন, সব মিলিয়ে ২০১৭ সাল অবশ্যই ভালো কেটেছে পুঁজিবাজারের জন্য। ২০০৯-১০ সালে পুঁজিবাজার ধসের পর বাজারসংশ্লিষ্ট সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ২০১৭ সাল অনেক ভালো কেটেছে। দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কারণে বাজার ভালো হয়েছে। অর্থনীতি মোটামটি ভালো বা স্থিতিশীল ছিল এবং রাজনৈতিক অবস্থাও ছিল বেশ শান্ত। পাশাপাশি ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বাজারের প্রতি কিছুটা আস্থা ফিরে এসেছে এবং তাদের মধ্যেও এক ধরনের সচেতনতার সৃষ্টি হয়েছে। সব দিক বিবেচনায় ২০১৭ সাল ভালো ছিল পুঁজিবাজারের জন্য। তিনি বলেন, গত ছয় মাসে আমদানি প্রায় ২৯ শতাংশ বেড়েছে। আর আমদানি বাড়ার মূল কারণ ক্যাপিটাল মেশিনারিজ তো আছেই, পাশাপাশি সরকারি বড় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের পর্যায়ে চলে এসেছে। এতে দেশের অর্থনীতি বাড়ার সঙ্গে এ কাজগুলোও কিন্তু মানুষের মধ্যে এক ধরনের আস্থা সৃষ্টি করেছে। কাজেই আমরা প্রত্যাশা করতে পারি ২০১৮ সালও ভালো যেতে পারে। তবে ২০১৮ সালের শেষদিকে দেশে জাতীয় নির্বাচন। আর এটিকে কেন্দ্র করে দেশের কী অবস্থা দাঁড়ায় সেটিও চিন্তার বিষয়।
মো. জাকির হোসেন বলেন, ২০১৭ সাল পুঁজিবাজারের জন্য খুব ভালো কেটেছে, তা বলব না। তবে বাজার ধসের পর গত পাঁচ-ছয় বছরের মধ্যে তুলনামূলকভাবে ভালো কেটেছে। লক্ষ করলে দেখবেন সূচক ঊর্ধ্বমুখী হলেও লেনদেন খুব বেশি বাড়েনি। আমাদের যে বাজার মূলধন অথবা বাজারে যতগুলো কোম্পানি আছে সে তুলনায় লেনদেন ৫০০-৭০০ কোটি টাকা না হয়ে আরও বেশি হওয়া উচিত। এ বছরই পুঁজিবাজারের সূচক ছয় হাজার ৩০০ পয়েন্টে ছুঁয়েছে, সেইসঙ্গে লেনদেনও আরও বাড়া দরকার। সবশেষ হিসাব অনুযায়ী, জিডিপিতে (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাত দশমিক ২৮ শতাংশ, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ এবং মূল্যস্ফীতিও মোটামুটি স্থিতিশীল অবস্থায় আছে। এটি ছয় শতাংশের আশপাশেই ছিল, যা বিভিন্ন সময় ৮-১০ শতাংশও হতে দেখেছি। সব মিলিয়ে মাইক্রো ইকোনোমিক পরিস্থিতি ভালো বা স্থিতিশীল অবস্থায় আছে। আর অর্থনীতি ভালো থাকলে পুঁজিবাজারও ভালো থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা সব সময় ঘটে না। এবার তার কিছুটা মিল খুঁজে পাওয়া গেছে। ফলে গত বছর বাজার মোটামুটি ইতিবাচক ছিল বলা যায়।
শ্রুতি লিখন: রাহাতুল ইসলাম