২০২০ সালের টিআইএনে ৮ বছর আগের রিটার্ন

রহমত রহমান: ২০২০ সালের ৩ মার্চ টিআইএন নেয় করদাতা। ৮ মার্চ দেয় আট বছরের রিটার্ন। ১৬ মার্চ আট বছরের কর মামলা নিষ্পত্তি করা হয়। মাত্র ১৬ দিনেই বিদ্যুৎ গতিতে শেষ হয় কর মামলা। করদাতার রিটার্নে দেখানো হয় ১৩ কোটি টাকার সম্পদ, যার সপক্ষে নেই কোনো প্রমাণ। করদাতা একটি গ্রুপ অব কোম্পানির পরিচালক। পরিচালক হিসেবে কোম্পানি যে সার্কেলে নিবন্ধিত, সেখানে এই পরিচালকের টিআইএন নিবন্ধন ও রিটার্ন দেয়ার নিয়ম। কিন্তু এই করদাতার সঙ্গে কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই – এমন সার্কেলে টিআইএন নেয়া হয়। অনিয়ম এখানেই শেষ নয়।

তদন্তে অনিয়ম বের হওয়ার পর আরও অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন করদাতা। আরেক করদাতার ১০ ডিজিটের টিআইএন এই করদাতার নামে বানানো হয়। বানানো হয় অন্য কর অঞ্চল ও সার্কেলের তিন বছরের আয়কর রিটার্ন। নেয়া হয় আয়কর সনদ। সেই ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে ট্যাক্সেস আপিলাত ট্রাইব্যুনাল থেকে চার কোটি টাকা কর বিলোপ নেয়া হয়েছে। মূলত কর কর্মকর্তা, আইনজীবীর যোগসাজশে করফাঁকির এমন অভিনব কৌশল নেয়া হয়েছে। সামায়া হাসান নামে একজন করদাতার কর ফাইল যাচাইয়ে এমন অনিয়ম উঠে এসেছে। তিনি ডিভাইন গ্রুপের পরিচালক। কর অঞ্চল-১২, সার্কেল-২৬৩ (মানিকগঞ্জ)-এর করদাতা তিনি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি)-এর তদন্তে অনিয়ম উঠে আসে। পরে কর অঞ্চল-১২ তদন্ত করলে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে। বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি এনবিআরকে প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে।

কর অঞ্চল-১২-এর তদন্তে মিজানুর রহমান এফসিএ’র জালিয়াতির বিষয়টি উঠে এসেছে। পেশাগত অসদাচরণের জন্য মিজানুর রহমানের এনরোলমেন্ট নাম্বার বাতিলে ইনস্টিটিউট অব চাটার্ড অ্যকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) প্রেসিডেন্টকে প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করদাতা সামায়া হাসানের ২০১২-১৩ থেকে ২০১৯-২০ করবর্ষের মামলা ২০২০ সালের ১৬ মার্চ নিষ্পত্তি করা হয়েছে। অতিরিক্ত সহকারী কর কমিশনার মো. সামসুদ্দিন সাধারণ পদ্ধতিতে এই কর মামলা নিষ্পত্তি করেন। এই করদাতার নথির রেকর্ড অনুযায়ী, ২০১২-১৩ করবর্ষে ১৩ কোটি ১০ লাখ ৬৭ হাজার ৭২০ টাকার নিট সম্পদ দেখানো হয়েছে। আয় দেখানো হয়েছে দুই লাখ ২৫ হাজার টাকা। মামলা নিষ্পত্তিতে নিরূপিত আয় দুই লাখ ৩০ হাজার টাকা। দাবি সৃষ্টি হয় তিন হাজার টাকা। একইভাবে ২০১৩-১৪ করবর্ষে নিট সম্পদ ১৩ কোটি ১২ লাখ ৫১ হাজার ৭২০ টাকা। আয় দেখানো হয় দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা।

নিরূপিত আয় দুই লাখ ৫৪ হাজার টাকা। দাবি সৃষ্টি তিন হাজার টাকা। ২০১৪-১৫ করবর্ষে নিট সম্পদ ১৩ কোটি ১৪ লাখ ৫৪ হাজার ৭২০ টাকা। আয় দেখানো হয় দুই লাখ ৭৫ হাজার টাকা। নিরূপিত আয় দুই লাখ ৭৮ হাজার টাকা। দাবি সৃষ্টি তিন হাজার টাকা। ২০১৫-১৬ করবর্ষে নিট সম্পদ ১৩ কোটি ১৬ লাখ ৭৬ হাজার ৭২০ টাকা। আয় দেখানো হয় তিন লাখ টাকা। নিরূপিত আয় তিন লাখ দুই হাজার টাকা। দাবি সৃষ্টি তিন হাজার টাকা। ২০১৬-১৭ করবর্ষে আয় দেখানো হয় ১৩ কোটি ১৯ লাখ দুই হাজার ৭২০ টাকা। আয় দেখানো হয় তিন লাখ ১০ হাজার টাকা। নিরূপিত আয় তিন লাখ ১৬ হাজার টাকা। দাবি সৃষ্টি তিন হাজার টাকা। ২০১৭-১৮ করবর্ষে নিট সম্পদ ১৩ কোটি ২১ লাখ ৩২ হাজার ৭২০ টাকা। আয় দেখানো হয় তিন লাখ ২০ হাজার টাকা। নিরূপিত আয় তিন লাখ ২৫ হাজার টাকা। দাবি সৃষ্টি তিন হাজার টাকা। ২০১৮-১৯ করবর্ষে নিট সম্পদ ১৩ কোটি ২৩ লাখ ৬৬ হাজার ৭২০ টাকা। আয় দেখানো হয় তিন লাখ ৩০ হাজার টাকা। নিরূপিত আয় তিন লাখ ৩৪ হাজার টাকা। দাবি সৃষ্টি তিন হাজার ৪০০ টাকা। ২০১৯-২০ করবর্ষে নিট সম্পদ ১৩ কোটি ২৬ লাখ চার হাজার ৭২০ টাকা। আয় দেখানো হয় তিন লাখ ৪০ হাজার টাকা। নিরূপিত আয় তিন লাখ ৪৮ হাজার টাকা। দাবি সৃষ্টি চার হাজার ৮০০ টাকা। ২০২০-২১ করবর্ষের আয়কর রিটার্ন কর-১২-এর ২৫৪ সার্কেলে দাখিল করা হয়েছে।

করদাতা সামায়া হাসানের টিআইএন অনুযায়ী, নিবন্ধন নেয়া হয় ২০২০ সালের ৩ মার্চ। আর নিবন্ধন নেয়ার পাঁচ দিন পর ৮ মার্চ ২০১২-১৩ করবর্ষ থেকে ২০১৯-২০ করবর্ষ পর্যন্ত আট বছরের রিটার্ন জমা দেয় হয়। রিটার্ন জমার আট দিন পর ১৬ মার্চ মামলা নিষ্পত্তি করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১২ সালের জুলাই মাসে ১২ ডিজিটের অটো জেনারেটেড টিআইএন পদ্ধতি চালু হয়। এর আগে ১০ ডিজিটের টিআইএন পদ্ধতি চালু ছিল। যেসব করদাতা ১০ ডিজিটের টিআইএনধারী ছিলেন, সেসব করদাতা ১২ ডিজিটের টিআইএন নিবন্ধনের সময় ১০ ডিজিটের টিআইএন ইনপুট দিতেন। তবে করদাতা সামায়া হাসান তা না করেই ১২ ডিজিটের টিআইএন করেছেন। এতে প্রতীয়মান হয় যে, এই করদাতার ১০ ডিজিটের টিআইএন ছিল না।

সিআইসির তদন্ত প্রতিবেদন ও করদাতার নথি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, করদাতা সামায়া হাসান ডিভাইন গ্রুপের ডিভাইন স্পিনিং মিলস লিমিটেড (কর অঞ্চল-১১, সার্কেল-২২৮) ও ডিভাইন ফিড মিলস লিমিটেডের (কর অঞ্চল-১৩, সার্কেল-২৭১) পরিচালক। এনবিআরের আদেশ অনুযায়ী, কোম্পানির পরিচালক হিসেবে এই করদাতা দুটি কর অঞ্চলের মধ্যে যেকোনো একটি সার্কেলের করদাতা হিসেবে নিবন্ধিত হওয়ার কথা। কিন্তু এই দুই সার্কেলের কোনোটিতেই করদাতা টিআইএন নিবন্ধন করেননি। এই করদাতা আট বছরের রিটার্নে ডিভাইন গ্রুপের পরিচালক হিসেবে কোম্পানি হতে পারিতোষিক বা অন্য কোনো আয় দেখাননি। বিবিধ মালের ব্যবসা হতে আয় দেখিয়েছেন রিটার্নে। করদাতার টিআইএন ও আয়কর রিটার্নে বর্তমান ঠিকানা ডিওএইচএস মহাখালী, স্থায়ী ঠিকানা চৌগাছা, যশোর। কিন্তু টিআইএন নিয়েছেন সার্কেল-২৬৩ (মানিকগঞ্জ), কর অঞ্চল-১২। এই করদাতা আয়কর রিটার্নের সঙ্গে যেসব প্রমাণপত্র দিয়েছেন, তাতে তিনি মানিকগঞ্জ জেলার করদাতা হওয়ার আলামত পাওয়া যায়নি। যেমন তিনি মানিকগঞ্জ জেলায় পড়াশোনা, চাকরি, ব্যবসা ও অন্য পেশায় নিযুক্ত রয়েছেন বা ছিলেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করদাতা সামায়া হাসানের ১০ ডিজিটের পুরোনো টিআইএন নেই। তিনি ১২ ডিজিটের নতুন নিবন্ধন নিয়ে সার্কেল-২৬৩ (মানিকগঞ্জ) একসঙ্গে আট বছরের রিটার্ন দাখিল করেছেন। কিন্তু ২০২০-২১ করবর্ষের রিটার্ন সার্কেল-২৬৩-এ দাখিল না করে সার্কেল-২৫৪, কর অঞ্চল-১২, ঢাকায় রিটার্ন দাখিল করেছেন। করদাতার প্রথম করবর্ষে নিট সম্পদ ১৩ কোটি ১০ লাখ ৬৭ হাজার ৭২০ টাকা থাকা সত্ত্বেও প্রতি বছর রিটার্ন দাখিল করেননি। সব নিয়ম নীতি ভঙ্গ করে একসঙ্গে আট বছরের রিটার্ন দাখিল করেছেন। এতে প্রমাণিত হয়, এই করদাতা একজন নিয়মিত বা স্বাভাবিক করদাতা নয়।

আয়কর নথি অনুযায়ী, করদাতা টিআইএন নিয়েছেন ২০২০ সালের তিন মার্চ। টিআইএন গ্রহণের হিসাব অনুযায়ী, এই করদাতা ২০২০-২১ করবর্ষে  প্রথম বছর রিটার্ন দাখিলের কথা। কিন্তু সার্কেল কর্মকর্তা অতিরিক্ত সহকারী কর কমিশনার (ইএসিটি) মো. সামসুদ্দিন টিআইএন নিবন্ধনের দিন, অর্থাৎ তিন মার্চ ২০১২-১৩ থেকে ২০১৯-২০ করবর্ষ পর্যিন্ত রিটার্ন চেয়ে করদাতাকে আয়কর অধ্যাদেশের ৯৩ ধারায় নোটিশ ইস্যু করেন। প্রশ্ন হলো, করদাতার টিআইএন নিবন্ধনের তারিখেই কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দিন কীভাবে বুঝলেন যে, করদাতার এই আট করবর্ষে করযোগ্য আয় রয়েছে।

কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দিন ও করদাতার পারস্পারিক যোগসাজশে করদাতার কাছে এই রিটার্ন চাওয়া হয়। আর করদাতা সঙ্গে সঙ্গেই রিটার্ন দাখিল করেন। ২০১২-১৩ করবর্ষে কর মামলার ক্ষেত্রে ফাঁকি দেয়া রাজস্ব যাতে পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে কর বিভাগ ৯৩ ধারার কার্যক্রম গ্রহণ করতে না পারে, কর কর্মকর্তা সেই অসৎ উদ্দেশ্যে একসঙ্গে আট করবর্ষের রিটার্ন চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে করদাতা তা দাখিল করেন। কিন্তু ১২০ ধারা প্রয়োগের বিষয়টি করদাতা ও কর কর্মকর্তার মাথায় আসেনি। কর কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দিন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দিকনির্দেশনা ব্যতীত আট করবর্ষের মামলা নিষ্পত্তি করেছেন। এতে প্রতীয়মান হয়, কর কর্মকর্তা নিয়ম-নীতি অনুসরণ না করেই মামলা নিষ্পত্তি করেছেন এবং প্রথম করবর্ষে করদাতার ১৩ কোটি ১০ লাখ ৬৭ হাজার ৭২০ টাকার প্রদর্শিত নিট বিনা প্রশ্নে মেনে নিয়েছেন।

এনবিআর সূত্রমতে, সিআইসি করদাতা সামায়া হাসানের আয়কর নথি তদন্ত করে অনিয়ম পায়। পরে ব্যবস্থা নিতে কর অঞ্চল-১২ কমিশনারকে প্রতিবেদন দেয়। প্রতিবেদনে দুটি নির্দেশনা দেয়া হয়। এর মধ্যে একটি হলোÑএই করদাতার মামলা অস্বাভাবিক দ্রুত গতিতে নিষ্পন্ন হওয়ার বিষয়টি তদন্ত করা। অপরটি হলোÑকরদাতা ২০১২-১৩ করবর্ষের রিটার্নে কোনো প্রমাণাদি না থাকা সত্ত্বেও পূর্বের কোনো জের হিসেবে করমুক্ত সম্পদ ১৩ কোটি ৯ লাখ দুই হাজার ৭২০ টাকা প্রদর্শন করেছেন, যা কর কর্মকর্তা মেনে নিয়েছেন। করফাঁকিতে সহায়তা করায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার ব্যাখ্যা ও ফাঁকি দেয়া কর আদায় করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেয়া হয়।

সূত্রমতে, সিআইসির নির্দেশনা পাওয়ার পর আয়কর অধ্যাদেশের ১২০ ধারায় আট বছরের কর মামলা নিষ্পত্তি করা হয়। এতে করদাতা সামায়া হাসানের ২০১২-১৩ করবর্ষের মোট আয় ১২ কোটি ৯৯ লাখ ৩২ হাজার ৭২০ টাকা এবং চার কোটি আট লাখ ৯৩ হাজার ৫৬৭ টাকা দাবি সৃষ্টি করা হয়। এছাড়া এনবিআর থেকে কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দিনকে কারণ দর্শানো নোটিশ ও বিভাগীয় কার্যয়ক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। ১২০ ধারা অনুযায়ী আয় ও কর নির্ধারণ করায় করদাতা আপিল করেন। আপিলে এই আয় ও কর বহাল রাখা হয়। পরে করদাতা ট্যাক্সেস আপিলাত ট্রাইব্যুনালে আপিল দায়ের করেন। করদাতার পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন মিজানুর রহমান এফসিএ। মিজানুর রহমান চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি আপিল দায়ের করেন, যাতে ট্রাইব্যুনালে ২০০৯-১০ করবর্ষের রিটার্নে ১৩ কোটি ছয় লাখ ৩৪ হাজার ৭২০ টাকা প্রদর্শন করেন। একই সঙ্গে ২০০৯-১০, ২০১০-১১, ২০১১-১২ করবর্ষের রিটার্নের কপি ও ২০০৯-১০ করবর্ষের কর পরিশোধের সনদ দাখিল করেন। ট্রাইব্যুনাল করদাতার নিট সম্পদ ১৩ কোটি ৯ লাখ দুই হাজার ৭২০ টাকা বিবেচনায় নিয়ে ১২০ ধারার আদেশটি সংশোধন করতে উপকর কমিশনারকে নির্দেশ দেয়, যার ফলে করদাতার ২০১২-১৩ করবর্ষের ১২০ ধারার সৃষ্ট দাবি চার কোটি আট লাখ ৯৩ হাজার ৫৬৭ টাকা বিলোপ বা বাতিল করেন।

সূত্র আরও জানায়, কর ফাঁকি দেয়ার পরও সৃষ্ট দাবি বাতিল হওয়ায় অবাক হন কর কর্মকর্তারা। পরে ট্রাইব্যুনালে করদাতার পক্ষ থেকে যে প্রমাণাদি দাখিল করা হয়েছে, তা সংগ্রহ করা হয়। এতে দেখা যায়, করদাতা সামায়া হাসানের নামে ১০ ডিজিটের একটি টিআইএন (৭৪০-১০০-২২৪৪) দাখিল করা হয়েছে, যার সার্কেল-৭০ ও কর অঞ্চল-৬। এই সার্কেলে করদাতা সামায়া হাসানের নামে ২০০৯-১০ থেকে ২০১১-১৩ করবর্ষ পর্যন্ত তিন করবর্ষের রিটার্ন দাখিল করা হয়েছে। এই টিআইএন অনুযায়ী, ২০০৯-১০ করবর্ষে আয়কর পরিশোধের সনদও রয়েছে। কর সার্কেল মানিকগঞ্জ থেকে সেই ১০ ডিজিটের টিআইএন যাচাই করা হয়, যাতে দেখা গেছে, এই ১০ ডিজিটের টিআইএনের করদাতা সামায়া হাসান নন, মো. জাহাঙ্গীর আলম। সামায়া হাসানের নামে ১০ ডিজিটের কোনো টিআইএন নেই। অর্থাৎ করদাতাকে বাঁচাতে ১০ ডিজিটের ভুয়া টিআইএন ও ২০০৯-১০ থেকে ২০১১-১২ করবর্ষ পর্যন্ত রিটার্ন, কর পরিশোধের সনদ নিজেরাই তৈরি করেছেন। করদাতার প্রতিনিধি মিজানুর রহমান এফসিএ ভুয়া এই কাগজপত্র তৈরি করে অপেশাদার আচরণ করেছেন বলে কর অঞ্চল-১২ অভিযোগ করা হয়। সেজন্য তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইসিএবি’কে চিঠি দেয়া হয়। তবে মিজানুর রহমান বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, ‘একনাবীনকে অ্যাপয়েনমেন্ট করেছে। স্যার আমাকে অ্যাপয়েনমেন্ট করেছে ২০২৩ সালে শুধু ট্রাইব্যুনালে হিয়ারিং দেয়ার জন্য। আমি একনাবীনে চাকরি করি। একনাবীনের হয়ে আমি ট্রাইব্যুনালে হেয়ারিং দিয়েছি। সব কাজ করেছেন করদাতার আগে লইয়ার। করদাতা ও করদাতার লইয়ার ডিসিটি লেবেলে কাজ করেছে, আপিল লেবেলে কাজ করেছে, ওয়েবারের জন্য কমিশনারের কাছে আবেদন করেছে, এরপর ট্রাইব্যুনালেও ফাইল করেছে। সমস্ত কাজ তাদের আগের লইয়ার শেষ করেছেন। আমাদের শুধু ট্রাইব্যুনালে যে ফাইল করেছে, ওই ফাইলের বিপরীতে হেয়ারিংয়ের জন্য আমাদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিয়েছে। আমাদের যে ডকুমেন্ট দিয়েছে, সেই ডকুমেন্ট আমরা ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করেছি। এখানে আমাদের কোনো প্রকার ইনভলভমেন্ট নেই।’ উল্লেখ্য, সামায়া হাসানের হয়ে এসব ডকুমেন্ট উপস্থাপন করে জামান অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস। হেয়ারিং দিয়েছেন আইনজীবী মো. ওমর ফারুক।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে করদাতা সামায়া হাসানের টিআইএনে দেয়া মোবাইল নাম্বারে ফোন করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। বক্তব্য জানতে সামায়া হাসানের বাবা ডিভাইন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হাসানুজ্জামানের মোবাইল নাম্বারে ফোন করা হলেও তিনি পরে কথা বলবেন বলে ফোন কেটে দেন। পরে ফোন করা হলেও রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে আইসিএবি’র প্রেসিডেন্ট মো. মনিরুজ্জামান এফসিএ শেয়ার বিজকে বলেন, ২০২২ পর্যকন্ত করদাতার একজন লইয়ার ছিল। ২০২৩ সালে যে ইনভলভ হলো তার নামে কর অঞ্চল-১২ প্রতিবেদন দিয়ে দিয়েছে। সে তো ট্রাইব্যুনাল থেকে ২০২৩ সালে বেনিফিট নিয়ে দিয়েছেন। এখন সবাই তার পেছনে লেগেছেন। সমস্যা হলে করদাতা আর আগের লইয়ারকে ধরবে। ১০ ডিজিটের টিআইএন মিজানুর রহমান বানিয়েছেন কি নাÑএমন প্রশ্নের জবাবে প্রেসিডেন্ট বলেন, তিনি কীভাবে বানাবেন? এটা তো আগে থেকে বানানো হয়েছে। সহজে তো একটা মামলা ট্রাইব্যুনালে যায় না। ডিসিটি, আপিল হয়ে তো ট্রাইব্যুনালে গিয়েছে। সেখানে তারা দেখেনি?

অভিযোগের বিষয় অস্বীকার করেন অতিরিক্ত সহকারী কর কমিশনার মো. সামসুদ্দিন। টিআইএন নেয়ার পরপরই কীভাবে আট বছরের রিটার্ন দেয়া যায়Ñএ বিষয়ে তিনি বলেন, আপনি ইচ্ছা করে ২০ বছরের রিটার্ন দিলে অফিসারকে তো তা নিতে হবে। যোগসাজশের বিষয় অস্বীকার করে তিনি বলেন, যোগসাজশ করে আমার সমস্যা কী? আমি কী করেছি? আমি কি কোনো বেনিফিট নিয়েছি? আমি কি তাদের সম্পদ হোয়াইট করে দিয়েছি? প্রতিবেদনে যা বলা হয়েছে, তা ভুল বলা হয়েছে। ১০ ডিজিটের টিআইএন ছিল বলে জানান তিনি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০