নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০২১ সালে সারাদেশে সড়ক, নৌ ও রেলপথে সব মিলিয়ে চার হাজার ৯৮৩টি দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন পাঁচ হাজার ৬৮৯ জন এবং আহত হয়েছেন পাঁচ হাজার ৮০৫ জন। জাতীয় প্রেস ক্লাবে গতকাল শনিবার ২০২১ সালের সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এক পরিসংখ্যানে এ তথ্য জানায়।
অনুষ্ঠানে নিসচার প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার সঠিক পরিসংখ্যান সরকারিভাবে দিতে পারছে না। এ জন্য তৈরি হচ্ছে নানা পরিসংখ্যানে বিভ্রান্তি। তাই সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান সরকারি উদ্যোগে প্রকাশের দাবি জানান তিনি।
ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, দেশের সড়ক দুর্ঘটনা গত বছর বিগত দুই বছরের তুলনায় বেড়েছে। ২০২১ সালটিও ছিল মহামারির বছর, প্রায় ছয় মাস জরুরি যানবাহন ছাড়া অন্যান্য যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। যে কারণে সড়ক দুর্ঘটনা আরও কম হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত হচ্ছে এ বছর সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনা পরিসংখ্যানে।
‘নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)’ এর পরিসংখ্যান দেয়ার পর তিনি বলেন, ইতিপূর্বে সরকার অথবা অন্য কোনো পক্ষ থেকে সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদন প্রকাশ করা হতো না। ২০১২ সাল থেকে আমাদের সংগঠন নিয়মিতভাবে সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে আসছে। বারবার বলা সত্ত্বেও দেশের সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে ডাটা সেন্টার করা হচ্ছে না। তাই সড়ক দুর্ঘটনার সঠিক পরিসংখ্যান কেউ দিতে পারছে না। তবু আমরা তৈরি করছি।
গত দুই বছরে সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনার জন্য নিসচা যে কারণগুলো চিহ্নিত করেছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছেÑসড়কের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও তদারকির অভাব, টাস্কফোর্সের ১১১টি সুপারিশ বাস্তবায়ন না হওয়া, চালকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা ও বেপরোয়াভাব, দৈনিক চুক্তিভিক্তিক গাড়ি চালনা, লাইসেন্স ছাড়া চালক নিয়োগ, পথচারীদের মধ্যে সচেতনতার অভাব, সড়ক ও মহাসড়কে মোটরসাইকেল ও তিন চাকার গাড়ি বৃদ্ধি, মহাসড়কে নির্মাণ ত্রুটি প্রভৃতি।
এ পরিসংখ্যান ও প্রতিবেদনের কাজটি করা হয়েছে পুরোপুরি সেকেন্ডারি তথ্যের ওপর ভিত্তি করে। যেখানে ছিল ইলেকট্রনিক মিডিয়া, ১১টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকা, অনলাইন পোর্টাল, অনুমেয় বা অপ্রকাশিত ঘটনা এবং শাখা সংগঠনগুলোর প্রতিবেদনের তথ্য। অনুষ্ঠানের শুরুতে নিহতদের প্রতি শোক জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার প্রকারভেদে দেখা যায়, সড়ক পথে তিন হাজার ৭৯৩টি দুর্ঘটনায় চার হাজার ২৮৯ জন নিহত এবং পাঁচ হাজার ৪২৪ জন আহত হন; রেলপথে ২৭০টি দুর্ঘটনায় ২৫৪ জন নিহত এবং ৪২ জন আহত হন; নৌপথে ৯০টি দুর্ঘটনায় ১৯৮ জন নিহত, ১৮৬ জন নিখোঁজ এবং ৩৩৯ জন আহত হন; অপ্রকাশিত তথ্যে প্রায় ৮৩০টি দুর্ঘটনায় ৯৪৮ জন নিহত হন। এছাড়া হাসপাতালে ভর্তির পর এবং হাসপাতাল থেকে রিলিজের পর আনুমানিক ২০ শতাংশের মৃত্যু হয়েছে।
তিন বছরের সড়ক দুর্ঘটনার চিত্রে দেখা গেছে, ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট দুর্ঘটনার সংখ্যা প্রায় চার হাজার ৯৮৩টি। ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালের সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা বেশি হয়েছে ৮৯১টি। ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট দুর্ঘটনার সংখ্যা প্রায় চার হাজার ৭০২টি। ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালের সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা কম ৬১০টি। কিন্তু এবারে ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালের সড়ক দুর্ঘটনা বেশি লক্ষণীয়, যা ২০২০ সালের দুর্ঘটনার অনুপাত থেকে ২১ শতাংশ বেশি। বিশ্বব্যাপী কভিড মহামারি দেখা দেয়ায় বাংলাদেশেও এর ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে অফিস-আদালত, দোকানপাট ও গণপরিবহন বন্ধ থাকে। মূলত ২০২১ সালে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা কম হওয়ার কথা তারপরও আগের বছরের তুলনায় সড়ক দুর্ঘটনা বেশি হওয়াটা উদ্বেগের বলছে সংগঠনটি।