ইসমাইল আলী: করোনার প্রভাবে ২০২০ সালে বিশ্ব অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে সে ধাক্কা কাটিয়ে গত বছর বৈশ্বিক অর্থনীতি কিছুটা গতি পেয়েছে। এ সময় বাড়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ। এর প্রভাবে গত বছর জাহাজ ভাঙা শিল্পেও বিশ্বব্যাপী দেখা গেছে চাঙ্গাভাব। এতে বরাবরের মতো গত বছরও শিল্পটিতে দাপট অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ।
২০২১ সালে জাহাজ ভাঙায় পরিমাণের দিক থেকে টানা সপ্তমবারের মতো শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ। জাহাজ ভাঙা ও এর ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে বিশ্বব্যাপী কাজ করা বেলজিয়ামভিত্তিক গবেষণা সংস্থা এনজিও শিপব্রেকিং প্ল্যাটফর্মের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল বিশ্বব্যাপী এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
এতে বলা হয়, ২০২১ সালে বিশ্বব্যাপী জাহাজ ভাঙা হয় ৭৬৩টি। এর মধ্যে বড় আকারের অয়েল ট্যাংকার, পণ্যবাহী বাল্ক জাহাজ, অফশোর প্ল্যাটফর্ম, কার্গো ও ক্রুজ শিপ ৫৮৩টি ভাঙা হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার তিন দেশে। আর পরিমাণের দিক থেকেও গত বছর বিশ্বের প্রায় ৯০ শতাংশ জাহাজই ভাঙা হয়েছে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের ইয়ার্ডগুলোয়।
প্রতিবেদনের তথ্যমতে, গত বছর বাংলাদেশেই ভাঙা হয় ২৫৪টি জাহাজ। ২০২০ সালে এ সংখ্যা ছিল ১৪৪টি। অর্থাৎ ২০২১ সালে বাংলাদেশের ইয়ার্ডগুলোয় জাহাজ ভাঙা বেড়েছে ১১০টি তথা ৭৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ। আর গত বছর ভারতে ভাঙা হয়েছে ২১০টি জাহাজ, ২০২০ সালে যা ছিল ২০৩টি। এছাড়া গত বছর পাকিস্তানে ১১৯টি, তুরস্কে ৭৭টি, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ৩৭টি ও বিশ্বের অন্যান্য দেশে ৬৬টি জাহাজ ভাঙা হয়েছে।
এদিকে ২০২১ সালে বিশ্বব্যাপী জাহাজ ভাঙার পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৬০ লাখ ১৪ হাজার ৪৬৪ টন। এর মধ্যে বাংলাদেশের ইয়ার্ডগুলোয় ভাঙা হয়েছে ৮০ লাখ ৩৬ হাজার ৫৫৪ টন। অর্থাৎ গত বছর বিশ্বের ৫০ দশমিক ১৮ শতাংশ জাহাজ ভাঙা হয়েছে চট্টগ্রামের ইয়ার্ডগুলোয়। আর ২০২০ সালে বাংলাদেশের ইয়ার্ডগুলোয় জাহাজ ভাঙা হয়েছিল ৬৯ লাখ ৬৪ হাজার ৭৭৪ টন। অর্থাৎ গত বছর ১৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ জাহাজ ভাঙা বেড়েছে দেশে।
এদিকে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ভারতে ২০২১ সালে জাহাজ ভাঙার পরিমাণ ছিল ৩১ লাখ ৪৪ হাজার ১৩৫ টন। ২০২০ সালে এর পরিমাণ ছিল ৪৫ লাখ ১৫ হাজার ৯৭৩ টন। অর্থাৎ গত বছর ভারতে জাহাজ ভাঙা কমেছে ৩০ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
তৃতীয় অবস্থানে থাকা পাকিস্তানে গত বছর জাহাজ ভাঙার পরিমাণ ছিল ২৯ লাখ ৭২ হাজার ৫৮৫ টন। চতুর্থ স্থানে থাকা তুরস্কে ভাঙা হয়েছে ১৩ লাখ ৬৮ হাজার ৯২৯ টন জাহাজ। এছাড়া গত বছর ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এক লাখ চার হাজার ৯৮৩ টন ও বিশ্বের অন্যান্য দেশে তিন লাখ ৮৭ হাজার ২৭৮ টন জাহাজ ভাঙা হয়েছে।
এদিকে ২০১৯ সালে বিশ্বে ১ কোটি ৩৫ লাখ ১৪ হাজার ৪৫৮ টন জাহাজ ভাঙা হয়েছিল। এর মধ্যে বাংলাদেশে ভাঙার পরিমাণ ছিল ৭৮ লাখ ৪৯ হাজার ৫৬৯ টন। একইভাবে ২০১৮ সালে বিশ্বব্যাপী জাহাজ ভাঙার পরিমাণ ১ কোটি ৮৮ লাখ ৯১ হাজার ৩২২ টন। এর মধ্যে বাংলাদেশেই ভাঙা হয় ৭৯ লাখ ৩৬ হাজার ১৮৬ টন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়েক বছর ধরেই অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা বন্দর ছাড়াও চলছে বড় বেশকিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র ও অবকাঠামো নির্মাণকাজ। পাশাপাশি করোনা-পরবর্তী সময়ে বাজেটে নানা সুবিধা দেয়ায় আবাসন খাতেও মন্দা কাটতে শুরু করেছে। এর প্রভাবে দেশে রডের চাহিদা বাড়ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন শিল্পেও লোহার ব্যবহার বাড়ছে। এ চাহিদা পূরণে অন্যতম ভূমিকা রাখছে জাহাজ ভাঙা। ফলে এ শিল্পে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ।
এনজিও শিপব্রেকিং প্ল্যাটফর্মের তথ্যমতে, ২০১৭ সালে বিশ্বব্যাপী জাহাজ ভাঙার পরিমাণ প্রায় ২ কোটি সাত লাখ টন। এর মধ্যে বাংলাদেশে ভাঙা হয় ৬৫ লাখ ৬৮ হাজার ২২৭ টন। এছাড়া ২০১৬ সালে বিশ্বব্যাপী জাহাজ ভাঙার পরিমাণ ২ কোটি ৭৪ লাখ টন। এর মধ্যে বাংলাদেশে ভাঙা হয় ৯৫ লাখ ৫৩ হাজার ৯৩০ টন। এর আগে ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাপী জাহাজ ভাঙার পরিমাণ ২ কোটি চার লাখ টন। এর মধ্যে বাংলাদেশে ভাঙা হয় ৬৭ লাখ ৫৯ হাজার ৬৩৩ টন।