‘২০২২ সালের মধ্যেই শেষ হবে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ’

নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামী বছরের জুন মাসে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হবে এমনটাই ঠিক করা ছিল। কিন্তু বৈশ্বিক করোনাভাইরাস মহামারি আর এবারের অতিরিক্ত বন্যায় এ সেতু নির্মাণকাজে বাধা সৃষ্টি করেছে; তাই আগামী জুনে এটা সম্ভব হচ্ছে না। ২০২২ সালের মধ্যেই পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

গতকাল সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে তিনি এ কথা বলেন। সেতু নির্মাণকাজ শেষ হতে সময় বেশি লাগার জন্য পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের মূল সেতু ও নদীশাসন কাজ তদারকির জন্য পরামর্শক সংস্থার মেয়াদ আরও ৩৪ মাস বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলেও জানান অর্থমন্ত্রী। এজন্য সরকারের ব্যয় হবে ৩৪৮ কোটি এক লাখ ৩২ হাজার টাকা।

এখন যে খরচ বাড়ানো হলো এতে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে কত হলোÑজানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রকল্প ব্যয় যা ছিল তাই থাকবে। প্রকল্প ব্যয়ে এটা অলরেডি ধরা ছিল, সেখান থেকেই অ্যাডজাস্ট করা হবে।’

পদ্মা সেতু নির্মাণকাজ কবে নাগাদ শেষ হবে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘করোনার মতো কোনো ভাইরাস নিয়ে আমরা চিন্তা করিনি; তাই ২০২১ সালের মধ্যে কাজ শেষ হবে বলে বলা হয়েছিল। এটা আমাদের সবারই প্রত্যাশা ছিল এবং সেভাবেই কাজটা এগোচ্ছিল। আমাদের পরিপূর্ণ ধারণা ছিল যে, ২০২১ সালের মধ্যে আমরা এটা শেষ করে দেশের মানুষের উপকার করতে পারব।’

‘করোনাভাইরাস সবকিছু ওলটপালট করে দিয়েছে। এ প্রকল্পটিও সেখানে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ২০২২ সাল পর্যন্ত এ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়েছি। আমরা আশা করি, এর মধ্যেই এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।’

সূত্র জানায়, বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস সংক্রমিত হওয়ায় সব ধরনের কর্মকাণ্ড প্রায় স্থবির হয়ে পড়ে। এতে দেশের বৃহত্তম প্রকল্প পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। অনেক বিদেশি প্রকল্প এলাকা ছেড়ে নিজ দেশে চলে যান। এছাড়া সাম্প্রতিক বন্যায় পদ্মা নদী ভয়াল রূপ ধারণ করে। প্রকল্প এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এসব কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি শ্লথ হয়ে পড়ে। ফলে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়াতে হয়েছে।

এ অবস্থায় পদ্মা সেতু প্রকল্পের কন্সট্রাকশন সুপারভিশন কনসালট্যান্ট (সিএইসি) নিয়োগের লক্ষ্যে কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশন (কেইসি) অ্যান্ড এএমপি অ্যাসোসিয়েটসের মেয়াদ ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত ২২ মাস নির্মাণকাজ তদারকি এবং ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ড (ডিএলপি) ১২ মাসসহ মোট ৩৪ মাস বাড়ানো হচ্ছে।

সূত্র জানায়, প্রকল্পের কনসালট্যান্সি ব্যয় বাবদ চুক্তিমূল্য বাংলাদেশি টাকায় ৩৪৮ কোটি ১ লাখ ৩২ হাজার টাকায় কন্ট্রাক্ট অ্যাওয়ার্ড অনুমোদন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। চুক্তি মূল্যের ৫৫ দশমিক ৬৮ শতাংশ বাংলাদেশি মুদ্রায় এবং ৪৪ দশমিক ৩২ শতাংশ বৈদেশিক মুদ্রায় পরিশোধ করা হবে।

সূত্র আরও জানায়, পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের মূল সেতু নির্মাণ ও নদীশাসন কাজ তদারকিতে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত ‘কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশন’র (কেইসি) মেয়াদ চলতি মাসে (আগস্ট) শেষ হবে। কিন্তু প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় পরামর্শক সেবার মেয়াদ আরও ৩৪ মাস বাড়ানো এবং বর্ধিত সময়ের জন্য ‘কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালট্যান্ট’ নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

এ প্রেক্ষাপটে পুনঃপ্রস্তাবের মাধ্যমে নিয়োগকৃত কেইসি’র মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নতুন বর্ধিত সময়ের জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে অতিরিক্ত ৩৪৮ কোটি টাকা দিতে হবে।

এর আগে প্রকল্পের মেয়াদ ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মেয়াদ বাড়ানোর কারণে চলতি মাস (আগস্ট) পর্যন্ত কেইসির প্রাপ্য অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬০৯ কোটি ১৪ লাখ টাকা। সে হিসাবে মূল সেতু নির্মাণ ও নদীশাসন কাজ তদারকিতে মোট পরামর্শক ব্যয় দাঁড়াচ্ছে প্রায় ৯৫৭ কোটি ১৫ লাখ টাকা।

সেতু বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত জুলাই পর্যন্ত মূল সেতুর কাজের অগ্রগতি ৮৯ দশমিক ২৫ শতাংশ, নদীশাসনের কাজের ৭৪ শতাংশ এবং প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি হচ্ছে ৮১ শতাংশ।

বিষয় ➧

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০