ইসমাইল আলী: ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রভাবে গত বছর বিশ্ব অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বৈশ্বিক ব্যবসা-বাণিজ্য কমার ধাক্কা লাগে সব খাতে, যার থেকে জাহাজ ভাঙা শিল্পও মুক্তি পায়নি। গত বছর এ শিল্পে বিশ্বব্যাপী বড় ধরনের মন্দাভাব দেখা গেছে। এক বছরে জাহাজ ভাঙার পরিমাণ কমেছে ৫০ শতাংশের বেশি। যদিও পড়ন্ত এ বাজারে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। তবে ২০২২ সালে দেশে জাহাজ ভাঙা কমেছে ৬৪ শতাংশ।
জাহাজ ভাঙা ও এর ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে বিশ্বব্যাপী কাজ করা বেলজিয়ামভিত্তিক গবেষণা সংস্থা এনজিও শিপব্রেকিং প্ল্যাটফর্মের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা যায়, ২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী জাহাজ ভাঙা কমেছে প্রায় ৪২ শতাংশ।
প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০২১ সালে বিশ্বব্যাপী জাহাজ ভাঙা হয় ৭৬৩টি। গত বছর তা কমে দাঁড়িয়েছে ৪৪৩টি। অর্থাৎ এক বছরে জাহাজ ভাঙা কমেছে ৩২০টি। আর ২০২১ সালে বিশ্বব্যাপী জাহাজ ভাঙার পরিমাণ ছিল এক কোটি ৬০ লাখ ১৪ হাজার ৪৬৪ মেট্রিক টন। গত বছর তা কমে দাঁড়িয়েছে ৭৯ লাখ ৬২ হাজার ১৯২ মেট্রিক টন। অর্থাৎ ২০২২ সালে জাহাজ ভাঙার পরিমাণ কমেছে ৮০ লাখ ৫২ হাজার ২৭২ মেট্রিক টন বা ৫০ দশমিক ২৮ শতাংশ।
যদিও দক্ষিণ এশিয়ার তিন দেশেই বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের ইয়ার্ডগুলোয় বিশ্বের বেশিরভাগ জাহাজ ভাঙা হয়েছে।
প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০২১ সালে বাংলাদেশে ভাঙা হয় ২৫৪টি জাহাজ। ২০২২ সালে এ সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১২২টি। অর্থাৎ ২০২২ সালে বাংলাদেশের ইয়ার্ডগুলোয় জাহাজ ভাঙা কমেছে ১৩২টি তথা ৫২ শতাংশ। আর গত বছর ভারতে ভাঙা হয়েছে ১২৭টি জাহাজ, ২০২১ সালে যা ছিল ২১০টি। এছাড়া গত বছর পাকিস্তানে ৪৩টি, তুরস্কে ৪৯টি, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ৩৩টি ও বিশ্বের অন্যান্য দেশে ৬৯টি জাহাজ ভাঙা হয়েছে।
এদিকে ২০২১ সালে বাংলাদেশের ইয়ার্ডগুলোয় জাহাজ ভাঙার পরিমাণ ছিল ৮০ লাখ ৩৬ হাজার ৫৫৪ মেট্রিক টন। ২০২২ সালে তা কমে দাঁড়ায় ২৯ লাখ ২৭ হাজার ছয় মেট্রিক টন। অর্থাৎ গত বছর বাংলাদেশে জাহাজ ভাঙা কমেছে ৬৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ। আর ২০২০ সালে বাংলাদেশের ইয়ার্ডগুলোয় জাহাজ ভাঙা হয়েছিল ৬৯ লাখ ৬৪ হাজার ৭৭৪ টন। অর্থাৎ করোনাকালীন সময়ের তুলনায় গত বছর ৫৮ শতাংশ জাহাজ ভাঙা কমেছে দেশে।
এদিকে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ভারতে ২০২১ সালে জাহাজ ভাঙার পরিমাণ ছিল ৩১ লাখ ৪৪ হাজার ১৩৫ মেট্রিক টন। ২০২২ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৩ লাখ ৫৮ হাজার ১৫০ মেট্রিক টন। অর্থাৎ গত বছর ভারতে জাহাজ ভাঙা কমেছে প্রায় ২৫ শতাংশ। তৃতীয় অবস্থানে থাকা পাকিস্তানে ২০২১ সালে জাহাজ ভাঙার পরিমাণ ছিল ২৯ লাখ ৭২ হাজার ৫৮৫ মেট্রিক টন। গত বছর তা কমে দাঁড়ায় ১২ লাখ ৯৭ হাজার ৯৬৫ মেট্রিক টন। অর্থাৎ পাকিস্তানে ২০২২ সালে জাহাজ ভাঙা কমেছে ৪৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
চতুর্থ স্থানে থাকা তুরস্কে গত বছর ভাঙা হয়েছে সাত লাখ ৬৭ হাজার ৪৪০ মেট্রিক টন জাহাজ, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ৭৩ হাজার ১৬৩ মেট্রিক টন ও বিশ্বের অন্যান্য দেশে পাঁচ লাখ ৩৮ হাজার ৪৬৮ মেট্রিক টন।
এনজিও শিপব্রেকিং প্ল্যাটফর্মের তথ্যমতে, ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী জাহাজ ভাঙার পরিমাণ ছিল প্রায় ১ কোটি ৫৮ লাখ ৬৬ হাজার ৭০৪ মেট্রিক টন। এর মধ্যে বাংলাদেশে ভাঙা হয় ৬৯ লাখ ৬৪ হাজার ৭৭৪ মেট্রিক টন, ভারতে ৪৫ লাখ ১৫ হাজার ৯৭৩ মেট্রিক টন, পাকিস্তানে ২২ লাখ ৫৬ হাজার ৭০৫ মেট্রিক টন, তুরস্কে ১৬ লাখ ২৪ হাজার ৫৬৮ মেট্রিক টন জাহাজ। এছাড়া চীনে দুই লাখ ১৬ হাজার মেট্রিক টন, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এক লাখ ২৭ হাজার ৮৪৩ মেট্রিক টন ও বিশ্বের অন্যান্য দেশে এক লাখ ৬০ হাজার ৮৪১ মেট্রিক টন জাহাজ ভাঙা হয়েছে।
এদিকে ২০১৯ সালে বিশ্বে ১ কোটি ৩৫ লাখ ১৪ হাজার ৪৫৮ মেট্রিক টন জাহাজ ভাঙা হয়েছিল। এর মধ্যে বাংলাদেশে জাহাজ ভাঙার পরিমাণ ছিল ৭৮ লাখ ৪৯ হাজার ৫৬৯ মেট্রিক টন, ভারতে ৩৬ লাখ ৬৫ হাজার ৯৬৩ মেট্রিক টন, তুরস্কে ১১ লাখ ৬৯ হাজার ১৬৩ মেট্রিক টন, চীনে তিন লাখ চার হাজার ৩২০ মেট্রিক টন ও পাকিস্তানে দুই লাখ ৮৫ হাজার ১৮৯ মেট্রিক টন।
২০১৮ সালে বিশ্বব্যাপী জাহাজ ভাঙার পরিমাণ ১ কোটি ৮৮ লাখ ৯১ হাজার ৩২২ মেট্রিক টন। এর মধ্যে বাংলাদেশেই ভাঙা হয় ৭৯ লাখ ৩৬ হাজার ১৮৬ মেট্রিক টন। ২০১৭ সালে বিশ্বব্যাপী জাহাজ ভাঙার পরিমাণ প্রায় ২ কোটি সাত লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে বাংলাদেশে ভাঙা হয় ৬৫ লাখ ৬৮ হাজার ২২৭ মেট্রিক টন। এছাড়া ২০১৬ সালে বিশ্বব্যাপী জাহাজ ভাঙার পরিমাণ ২ কোটি ৭৪ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে বাংলাদেশে ভাঙা হয় ৯৫ লাখ ৫৩ হাজার ৯৩০ মেট্রিক টন। এর আগে ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাপী জাহাজ ভাঙার পরিমাণ ২ কোটি চার লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে বাংলাদেশে ভাঙা হয় ৬৭ লাখ ৫৯ হাজার ৬৩৩ মেট্রিক টন।