ইসমাইল আলী: এক যুগ ধরে বড় অঙ্কের লোকসান দিচ্ছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনে কম মূল্যে বিক্রি করায় লোকসান বাড়ছে রাষ্ট্রায়ত্ত এ সংস্থাটির। এ ঘাটতি পূরণে পিডিবিকে নিয়মিতই ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার। তবে গত দুই অর্থবছর ধরে এ খাতে সরকারের ব্যয় অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে।
পিডিবির তথ্যমতে, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল ও কয়লার মূল্যবৃদ্ধিতে গত অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় অনেক বেড়ে যায়। যদিও ফেব্রæয়ারির পর থেকে ব্যয় কমতে শুরু করে। তবে সার্বিকভাবে পুরো অর্থবছরের উৎপাদন ব্যয় অনেক বেশি ছিল। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রের বাড়তি ক্যাপাসিটি চার্জ। এতে ২০২২-২৩ অর্থবছর রেকর্ড লোকসানের মুখে পড়েছে পিডিবি।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গত অর্থবছরের জন্য রেকর্ড ৪২ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা ভর্তুকি চাওয়া হয়েছে। যদিও ছাড় করা হয়েছে অনেক কম। আর ২০২১-২২ অর্থবছর পিডিবিকে ভর্তুকি দেয়া হয়েছিল ২৯ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত অর্থবছর সংস্থাটির ভর্তুকি চাহিদা বেড়ে গেছে ১৩ হাজার ১৪০ কোটি টাকা বা ৪৪ দশমিক ১৬ শতাংশ।
এদিকে ২০২০-২১ অর্থবছরে পিডিবিকে ভর্তুকি দেয়া হয় ১১ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত তিন অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত এ সংস্থাটির ভর্তুকি চাহিদা দাঁড়িয়েছে ৮৪ হাজার ৪২৪ কোটি টাকা। যদিও এ পরিমাণ অর্থ দিয়ে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও টানেল নির্মাণ করা যেত।
পিডিবির তথ্যমতে, সংস্থাটির বড় অঙ্কের লোকসান শুরু হয় মূলত ২০১০-১১ অর্থবছর থেকে। সে অর্থবছর পিডিবিকে ভর্তুকি দেয়া হয় চার হাজার কোটি টাকা। পরের (২০১১-১২) অর্থবছর পিডিবির লোকসান আরও বাড়লে ভর্তুকি দেয়া হয় ছয় হাজার ৩৫৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। ২০১২-১৩ অর্থবছর লোকসান কিছুটা কমায় ভর্তুকির পরিমাণ কমে দাঁড়ায় চার হাজার ৪৮৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা। আর ২০১৩-১৪ অর্থবছর লোকসান বাড়ায় ভর্তুকি দেয়া হয় ছয় হাজার ১০০ কোটি টাকা।
২০১৪-১৫ অর্থছর পিডিবির লোকসান আরও বেড়ে যায়। সে অর্থবছর সংস্থাটিকে ভর্তুকি দেয়া হয় আট হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছর পিডিবির লোকসান অর্ধেকে নামায় ভর্তুকি কমিয়ে দেয়া হয় চার হাজার ৩৬৫ কোটি ২৪ লাখ টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছর পিডিবির লোকসান আরও কমে। এতে সংস্থাটিকে ভর্তুকি দেয়া হয় তিন হাজার ৯৯৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা। ওই অর্থবছর পর্যন্ত ভর্তুকির অর্থ ঋণ হিসেবে দেয়া হতো।
২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে সরাসরি অনুদান হিসেবে ভর্তুকি দেয়া শুরু হয়। ওই অর্থবছর ভর্তুকি দেয়া হয়েছিল পাঁচ হাজার ৪৮৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা। পরের (২০১৮-১৯) অর্থবছর ভর্তুকি দেয়া হয় সাত হাজার ৫০০ কোটি ৪৪ লাখ টাকা এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে সাত হাজার ৪৩৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ ২০১০-১১ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত ১০ বছরে পিডিবিকে ভর্তুকি দেয়া হয়েছে ৫৮ হাজার ৭০৬ কোটি টাকা।