Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 9:35 pm

২০২৩ সালে চীনে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৫ শতাংশ

শেয়ার বিজ ডেস্ক:চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ২০২৩ সালে প্রায় ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে সামরিক খাতের বরাদ্দ ৭ দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি করে ২২ হাজার ৪০০ কোটি ডলার করা হয়েছে। খবর: সিএনএন।

চলতি বছর চীন তাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রায় ৫ শতাংশ রাখার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বলে দেশটির সরকারি কাজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। গতকাল রোববার চীনের পার্লামেন্ট ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের (এনপিসি) অধিবেশনের উদ্বোধনী দিনে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী লি কুছিয়াং বলেন, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে অগ্রাধিকার দেয়া অপরিহার্য। তিনি এ বছর চীনের শহরগুলোয় এক কোটি ২০ লাখের মতো চাকরি সৃষ্টির লক্ষ্যমাত্রার কথাও জানান, গত বছর যা ছিল এক কোটি ১০ লাখ।

অর্থনৈতিক উন্নতির বিষয়টি উঠে এসেছে ঋণমান যাচাইকারী বৈশ্বিক সংস্থা মুডিসের পূর্বাভাসেও। ২০২৩ ও ২০২৪ সালে চীনের জন্য ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে মুডিস। গত বছর তা ৪ শতাংশ ছিল। তবে কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ অনুমান করেছিলেন, চলতি অর্থবছরের জন্য আরও বেশি (৫ শতাংশের বেশি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করবে উচ্চাভিলাষী চীন। তবে সে রকম কিছু খসড়া বাজেটে দেখা যায়নি। এছাড়া আগামীকাল চলতি বছরের প্রথম দুই মাসের আমদানি ও রপ্তানি তথ্য প্রকাশ করবে চীন। এটি থেকেও বিশ্ব বাণিজ্যে চীনের অবস্থানের একটি ধারণা পাওয়া যাবে।

গত বছর চীনের জিডিপি বেড়েছিল ৩ শতাংশ। তিন বছরের কভিড-১৯ বিধিনিষেধ, আবাসন খাতে সংকট, বেসরকারি উদ্যোক্তাদের ওপর তুমুল চাপ সৃষ্টি এবং চীনা রপ্তানি পণ্যের চাহিদা কমতে থাকায় কয়েক দশকের মধ্যে দেশটি এত খারাপ প্রবৃদ্ধি দেখল। লি এবার সরকারের বাজেট ঘাটতিও জিডিপির ৩ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধাণ করেছেন বলে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর এ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ দশমিক ৮ শতাংশ।

বেইজিং নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি এবং কভিডে বিপর্যস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ খুঁজছে। পাশাপাশি এবারের এনপিসির অধিবেশনে কয়েক দশকের মধ্যে চীন সরকারের ভেতর সবচেয়ে বড় রদবদলও দেখা যাবে। লি ও তার মতো সংস্কারমুখী অর্থনৈতিক নীতির পক্ষের অনেক কর্মকর্তা এ অধিবেশনে দায়িত্ব ছাড়তে যাচ্ছেন, প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের কাছের লোকজনকে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোয় বসার পথ করে দেয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে গত বছরের অক্টোবরে ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেসে রেকর্ড ভেঙে তৃতীয় মেয়াদের জন্য দলের নেতৃত্ব নেয়া শি’র প্রভাব আরও পাকাপোক্ত হবে।

এবারের অধিবেশনে ক্ষমতাসীন দলের সাংহাইয়ের সাবেক নেতা লি চিয়াং দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পাবেন বলে অনুমান করা হচ্ছে। নতুন পদে তার প্রধান কাজ হবে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করা। সাধারণত এনপিসির অধিবেশনে যেসব সিদ্ধান্ত হয়, তার বেশ কয়েকটি আগেই চীনের ক্ষমতাসীন পার্টির পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটিতে অনুমোদন হয়। এ কারণে পার্লামেন্টে কেবল আনুষ্ঠানিকতা থাকে।

এবারের অধিবেশনে অংশ নেয়া প্রতিনিধিরা রাষ্ট্র ও কমিউনিস্ট পার্টির বিস্তৃত ও ব্যাপক পুনর্গঠন পরিকল্পনা নিয়েও আলোচনা করবেন। এ পুনর্গঠনের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কাঠামোগুলোয় কমিউনিস্ট পার্টি আরও জেঁকে বসবে বলে অনুমান পশ্চিমা বিশ্লেষকদের।

গতকাল রোববার ব্যাপক নিরাপত্তার মধ্যে রাজধানী বেইজিংয়ের তিয়ানআনমেন স্কয়ারের পশ্চিম পাশে অবস্থিত গ্রেট হল অব দ্য পিপলে জড়ো হওয়া ২ হাজার ৯৪৮ প্রতিনিধিকে নিয়ে এনপিসির

অধিবেশন শুরু হয়। দেশজুড়ে বিরল বিক্ষোভের পর ডিসেম্বরে চীন তড়িঘড়ি তাদের শূন্য কভিড নীতি তুলে নেয়ার পর এটাই এনপিসির প্রথম অধিবেশন।

দক্ষিণ চীন সাগরে আধিপত্য বাড়ানো এবং তাইওয়ান ও হংকং ইস্যুতে কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বলয়ের সঙ্গে উত্তেজনা চলছে চীনের। উভয় পক্ষই মাঝে মধ্যে সামরিক মহড়া দিচ্ছে ওই অঞ্চলে। ফলে চলতি বছর চীনের সামরিক ব্যয় কিছুটা যে বাড়বে, তা অনুমিত ছিল। এর প্রতিফলন দেখা গেছে খসড়া বাজেটে।