Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 10:07 pm

২০২৩ সালে ভারতে যাওয়া বাংলাদেশি রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ৪৮%

শেয়ার বিজ ডেস্ক : আগের বছরের তুলনায় ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে ভারতগামী চিকিৎসা পর্যটকের সংখ্যা ৪৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে ভারতভিত্তিক সংবাদপত্র বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

২০২২ সালের মোট ৩ লাখ ৪ হাজার ৬৭ জন বাংলাদেশি চিকিৎসা পর্যটকের তুলনায় ২০২৩ সালে ৪ লাখ ৪৯ হাজার ৫৭০ জন চিকিৎসা পর্যটক ভারতে গিয়েছেন।

এদিকে ভারতের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ভারত ২০২৩-২৪ সালে শ্রীলঙ্কানদের মাত্র ১ হাজার ৪৩২টি মেডিকেল ভিসা দিয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১১.৭ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।

মিয়ানমারের নাগরিকরা ৩ হাজার ১৯টি মেডিকেল ভিসা পেয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। পাকিস্তানিরা ২০২৩-২৪ সালে মাত্র ৭৬টি মেডিকেল ভিসা পেয়েছে যেখানে আগের বছর পেয়েছিল ১০৬টি।

ভারতের একটি বেসরকারি হাসপাতাল চেইন ম্যাক্স হেলথকেয়ারের প্রধান বিক্রয় ও বিপণন কর্মকর্তা এবং জ্যেষ্ঠ পরিচালক আনাস আব্দুল ওয়াজিদ বলেন, ‘রোগীরা [বাংলাদেশি] সাধারণত প্রতিস্থাপন, কার্ডিগান বিজ্ঞান, নিউরো, অর্থো এবং অনকোলজি-সম্পর্কিত (ক্যানসার) চিকিৎসার জন্য ভারতে আসেন। ম্যাক্স হেলথকেয়ারের ঢাকায় প্রতিনিধি রয়েছে, যারা আমাদের হাসপাতালে রোগীদের তাদের ভ্রমণে সহায়তা করেন।’”

ওয়াজিদ বলেন, ‘রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা-সংক্রান্ত সমস্যার কারণে আমরা পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে রোগী পাচ্ছি না। ভারত সরকার এ দেশগুলোর রোগীদের ভিসা দেয় না। আমরা নেপাল থেকে রোগীদের সংখ্যা যথেষ্ট পরিমাণে বৃদ্ধি পেতে দেখেছি।’”

তিনি আরও বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে আসা রোগীর সংখ্যাও ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে অবৈধ কিডনি প্রতিস্থাপনের বিষয়ে ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের তদন্তের পর, দূতাবাস এবং কর্তৃপক্ষ মেডিকেল ভিসা দেয়ার ক্ষেত্রে আরও সতর্ক এবং পরিশ্রমী হয়েছে।’”

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে রোগীদের আগমনে সাময়িক বিরতি ছিল এবং লোকসভা নির্বাচনের সময় কম ভিসা দেয়া হয়েছিল।’

ওয়াজিদ বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ‘ভারতীয় দূতাবাস সর্বোত্তম চেষ্টা করার মধ্যেই প্রায়ই মেডিকেল ভিসার অসংখ্য অনুরোধ পাচ্ছে। এর ফলে রোগীদের ভিসা পেতে যথেষ্ট সময় অপেক্ষা করতে হয়।’”

গত আর্থিক বছরে ভারতের বেসরকারি হাসপাতাল চেইন ম্যাক্স হেলথকেয়ারের একাই আগের বছরের তুলনায় আন্তর্জাতিক ব্যবসায় ২২ শতাংশ বৃদ্ধি রেকর্ড করেছে। ভারতীয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছে, ভারত ও বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত সম্পর্কও রোগীদের আকৃষ্ট করতে সাহায্য করে।

ভারতের আরেকটি হাসপাতাল চেইন পারাস হেলথের গ্রæপ চিফ অপারেটিং অফিসার সান্তি সাজন বলেছেন, ভৌগোলিক নৈকট্য (কেউ বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় সড়কপথে যাতায়াত করতে পারে) এবং ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক সখ্যতা বাংলাদেশের চিকিৎসা পর্যটকের সংখ্যা বৃদ্ধিতে গুরূত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে।

তিনি বলেন, এটি ছাড়াও প্রাইভেট মেডিকেল শুরু থেকেই সম্পূর্ণ প্যাকেজ আকারে বিভিন্ন পরিষেবা অফার করে যার মধ্যে ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট এবং চিকিৎসা উপদেষ্টা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা প্রক্রিয়াটিকে আরও সহজলভ্য করে তোলে। পারাস হেলথে আমরা বাংলাদেশি রোগীদের সংখ্যা বৃদ্ধি দেখার পাশাপাশি অন্যান্য প্রতিবেশী দেশ, এমনকি পশ্চিমা দেশ থেকে আসা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে দেখেছি।”

বাংলাদেশের প্রতিবেশী অঞ্চল পশ্চিমবঙ্গে করোনা মহামারির পর থেকেই বাংলাদেশ থেকে আসা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।

কলকাতা মেডিকেল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ইউনিটপ্রধান সোমব্রত রায় বলেছেন, “পশ্চিমবঙ্গে মহামারির পর বাংলাদেশ থেকে আসায় রোগীর সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। রোগীর প্রবাহ ১০ শতাংশ বেড়েছে। এই বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কারণ রয়েছে: পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের মধ্যে ভৌগোলিক নৈকট্য, সরাসরি ট্রেন এবং বাস চলাচলের মাধ্যমে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং অঞ্চলগুলোর মধ্যে ভাগাভাগি করা সাংস্কৃতিক, ভাষাগত এবং রন্ধনসংক্রান্ত সম্পর্ক।”

চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ভারতে বাংলাদেশি পর্যটকদের সংখ্যা বাড়ার কারণে দুই দেশের মধ্যকার বিমান চলাচল ব্যবস্থাও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

এয়ার ইন্ডিয়া ২০২৩ সালের জুন মাসে তিনটি সাপ্তাহিক ফ্লাইটের পরিবর্তে প্রতি সপ্তাহে ১৪টি ফ্লাইট চালু করার মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে তাদের পরিষেবা সম্প্রসারিত করেছে।

অন্য দুটি ভারতীয় এয়ারলাইনসÑইন্ডিগো এবং ভিস্তারা বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যথাক্রমে ৩৫টি এবং ১১টি সাপ্তাহিক ফ্লাইট পরিচালনা করে।

এয়ার ইন্ডিয়ার একজন এক্সিকিউটিভ বলেছেন, ভারত-বাংলাদেশ রুটে চাহিদা এত বেশি যে তারা এই রুটে ওয়াইডবডি প্লেন পরিচালনা করলেও সেগুলো যাত্রী দিয়ে পূর্ণ হয়ে যাবে।

বর্তমানে এয়ার ইন্ডিয়া ন্যারোবডি প্লেন ব্যবহার করে ভারত-বাংলাদেশ রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে। একটি ওয়াইডবডি প্লেনে আসন সংখ্যা অনেক বেশি।

চিকিৎসা পর্যটনকে আরও সহজ করার জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২২ জুন বলেছিলেন, ভারত বাংলাদেশিদের জন্য একটি ই-মেডিকেল ভিসা সুবিধা চালু করবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুই দিনের ভারত সফরের সময় তার সঙ্গে বৈঠকের পরে নরেন্দ্র মোদি এ ঘোষণা দিয়েছিলেন।

মোদি আরও বলেছিলেন, বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের জনগণের সুবিধার্থে ভারত রংপুরে একটি নতুন সহকারী হাইকমিশন খোলার উদ্যোগ নিয়েছে।