২০২৩-২৪ অর্থবছর: চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং বেড়েছে ৪.১৮%

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম : ডলারের বিনিময় হার বেশি থাকলেও গতিশীল হচ্ছে দেশের আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্য। দেশের প্রধান গেটওয়ে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সমাপ্ত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ৩১ লাখ ৬৮ হাজার ৬৯০ টিইইউএস। আগের অর্থবছরে হয়েছিল ৩০ লাখ সাত হাজার ৩৪৪ টিইইউএস। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিং বেড়েছে এক লাখ ৬১ হাজার ৩৪৬ টিইইউএস। একই সময়ে কার্গো হ্যান্ডলিং বেড়েছে চার দশমিক ১৮ শতাংশ। তবে জাহাজ হ্যান্ডলিং কমেছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশের আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যের প্রায় ৯২ শতাংশ কার্যক্রম সম্পাদিত হয়। দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর দিয়ে শিল্পের কাঁচামাল, মূলধনি যন্ত্রপাতি, বাণিজ্যিক পণ্য সবই আনা হয় কনটেইনারে। আবার সমুদ্রপথে রপ্তানি পণ্যের প্রায় পুরোটাই কনটেইনারে পাঠানো হয়। দেশের মোট কনটেইনারের ৯৮ শতাংশ পরিবহন হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। ফলে এই বন্দরের কনটেইনারের সংখ্যার হিসাব দিয়ে দেশের অর্থনীতির সামগ্রিক চিত্র পাওয়া যায়। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরে মূল জেটি, ঢাকার কমলাপুর কনটেইনার ডিপো ও কেরানীগঞ্জের পানগাঁও নৌ-টার্মিনালে আমদানি-রপ্তানি পণ্যবাহী ও খালি কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ৩১ লাখ ৬৮ হাজার ৬৯০ টিইইউএস, যা আগের অর্থবছরের হয়েছিল ৩০ লাখ সাত হাজার ৩৪৪ টিইইউএস। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিং বেড়েছে এক লাখ ৬১ হাজার ৩৪৬ টিইইউএস। অর্থাৎ প্রবৃদ্ধি পাঁচ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেড়েছে। একই সময়ে বেড়েছে কার্গো হ্যান্ডলিং। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরে কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ১২ কোটি ৩২ লাখ ৪২ হাজার ৭৪৮ মেট্রিক টন, যা আগের অর্থবছরে ছিল ১১ কোটি ৮২ লাখ ৯৭ হাজার ৬৪৩ মেট্রিক টন। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্গো হ্যান্ডলিং বেড়েছে ৪৯ লাখ ৪৫ হাজার ১০৫ মেট্রিক টন। অন্যদিকে বন্দরের জাহাজ আগমন কমেছে। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর জলসীমায় পণ্য ও কনটেইনারবাহী জাহাজ হ্যান্ডলিং হয় তিন হাজার ৯৭১টি, যা আগের বছরে ছিল চার হাজার ২৫৩টি। অর্থাৎ ১২ মাসে জাহাজ হ্যান্ডলিং কমেছে ২৮২টি।

আমদানিকারক ও বন্দর ব্যবহারকারীরা বলেন, ২০২২ সালের মাঝামাঝি থেকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও ডলার-সংকটে পণ্য আমদানি কমতে থাকে। আর ২০২৩ সালে বছরজুড়ে আমদানি নিয়ন্ত্রণে আরও কড়াকড়ি অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এসবের প্রভাবে ২০২২-২৩ অর্থবছরের

দেশে আমদানি ও রপ্তানি কম হয়েছিল। ফলে বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিং কম হয়েছিল। এখন ডলারের বিনিময় হার বেড়েছে। তবে স্বাভাবিক হয়েছে দেশের আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রম। ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিং বেড়েছে, যা দেশের অর্থনীতির ইতিবাচক চিত্র।

বন্দরের কর্মকর্তারা বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় চট্টগ্রাম বন্দরে অপারেশনাল ও কনটেইনার পরিবহন সক্ষমতা বাড়ানো হয়। এছাড়া বন্দর পরিষেবায় নতুন নতুন যন্ত্রপাতি, পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল চালু ও বন্দরের জলসীমার পরিসর বাড়ছে, জাহাজের ড্রাফটের পরিমাণসহ বহুমাত্রিক নতুন নতুন সুবিধা যুক্ত হয়েছে। আগের বছরের তুলনায় অর্থনীতির গতিশীল হচ্ছে। সবমিলিয়ে বন্দরের কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিং বেড়েছে।

জানতে চাইলে তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ী কাট্টলি টেক্সটাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমদাদুল হক চৌধুরী শেয়ার বিজকে বলেন, ইউরোপে এখনও মন্দা চলছে। তাদের পোশাকের চাহিদা কম। দেশে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ায় পোশাক খাতে খরচ বেড়েছে। এমনিতে আমাদের ডলারের বিনিময় হার বেশি। তবু আমদানি ও রপ্তানি গতিশীল হওয়ার কারণে বন্দরের কনটেইনার ও কার্গো পরিবহন বেড়েছে, যা ইতিবাচক। এ পরিস্থিতিতে গ্যাস-বিদ্যুৎ খরচসহ কিছু খরচ কমিয়ে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার চেষ্টা করতে হবে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সোহায়েল সাম্প্রতিক আলাপকালে বলেন, গত অর্থবছর সাফল্যজনক ছিল। পিসিটিতে বিদেশি অপারেটর নিয়োগ দিতে সক্ষম হয়েছি। এতে বন্দর তথা রাষ্ট্র উপকৃত হবে। বৈদেশিক আয় বাড়বে। শতভাগ নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে সব ইকুইপমেন্ট চলে আসবে। গতানুগতিক সিস্টেম থেকে বেরিয়ে ল্যান্ডলর্ড সিস্টেমে বন্দর পরিচালনা শুরু করেছি। তিনি বলেন, কভিড অতিমারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা বিশ্ব অর্থনীতির প্রত্যাশিত গতি মন্থর করলেও চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে তেমন প্রভাব ফেলেনি। সর্বোচ্চ দুই দিনে জাহাজ লোড আনলোড শেষ করে পরবর্তী গন্তব্যে ছেড়ে দিচ্ছি। দক্ষিণ এশিয়ার পোর্ট হাব হবে চট্টগ্রাম। এর মধ্যে বে-টার্মিনাল তিনটি টার্মিনাল অপারেটরে যুক্ত হতে আগ্রহী আবুধাবি পোর্ট গ্রæপ (এডি পোর্টস), সিঙ্গাপুরের পিএসএ, দুবাইয়ের ডিপি ওয়ার্ল্ড এবং দেশি ইস্টকোস্ট গ্রæপের সঙ্গে জড়িত বিদেশি একাধিক জ্বালানি কোম্পানির কনসোর্টিয়াম। তাদের সম্মিলিত বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনালে ডেনমার্কের টার্মিনাল অপারেটর এপিএম টার্মিনালস। তাদের সঙ্গে চলতি বছরে আমাদের চুক্তি হবে। এছাড়া মাতারবাড়ী বন্দরের কাজও শুরু হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০