পিডিবির প্রতিবেদন

২০২৫ সালে অলস বসে থাকবে ১৫,৭৩৫ মেগাওয়াটের কেন্দ্র

ইসমাইল আলী: দেশে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ২১ হাজার মেগাওয়াট। যদিও সর্বোচ্চ উৎপাদন ১৩ হাজার মেগাওয়াটও ছাড়ায়নি। এরপরও উৎপাদনে আসছে একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র। লাইসেন্স দেয়া হয়েছে আরও বেশকিছু বিদ্যুৎকেন্দ্রের। সেগুলো উৎপাদন শুরুর পাশাপাশি বাড়বে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানিও। তবে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে না আশানুরূপ হারে। এতে ২০২৫ সালে অলস বসে থাকবে ১৫ হাজার ৭৩৫ মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, নতুন বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসার পাশাপাশি পাঁচ বছরে রেন্টাল-কুইক রেন্টালসহ বেশকিছু কেন্দ্র অবসরে যাবে। ফলে ২০২৫ সাল শেষে বিদ্যুৎ সরবরাহ সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়াবে ৩৫ হাজার ৬৩৫ মেগাওয়াট। যদিও সে সময় সম্ভাব্য সর্বোচ্চ চাহিদা দাঁড়াবে ১৯ হাজার ৯০০ মেগাওয়াট। ফলে চাহিদার সর্বোচ্চ ব্যবহার হলেও সে সময় ১৫ হাজার ৭৩৫ মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র বসে থাকবে। উৎপাদন সক্ষমতার তা ৪৪ শতাংশেরও বেশি।

প্রতিবেদনের তথ্যমতে, চলতি বছর উৎপাদনে আসবে তিন হাজার ৫৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র। তবে কিছু কেন্দ্র অবসরে যাওয়ার পর ২০২১ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়াবে ২২ হাজার ২৬৯ মেগাওয়াট। কিন্তু চলতি বছর সর্বোচ্চ চাহিদা দাঁড়াবে ১৪ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। এতে চলতি বছর শেষে সাত হাজার ৭৬৯ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র বসে থাকবে।

২০২২ সালে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে আরও চার হাজার ৬৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এতে আগামী বছর শেষে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়াবে ২৬ হাজার ৯৫৯ মেগাওয়াট। কিন্তু সে সময় সর্বোচ্চ চাহিদা বেড়ে দাঁড়াবে ১৫ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট। এতে ২০২২ সাল শেষে বসে থাকা বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা বেড়ে দাঁড়াবে ১১ হাজার ১৫৯ মেগাওয়াট।

এদিকে ২০২৩ সালে আরও নেট তিন হাজার ৬২৬ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসবে। এতে সে বছর বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়াবে ৩০ হাজার ৫৮৫ মেগাওয়াট। কিন্তু সে সময় সর্বোচ্চ চাহিদা বেড়ে দাঁড়াবে ১৭ হাজার ১০০ মেগাওয়াট। এতে ২০২৩ সাল শেষে বসে থাকা বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়াবে ১৩ হাজার ৪৮৫ মেগাওয়াট।

একইভাবে ২০২৪ সালে নেট চার হাজার ৬২৬ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। এতে সে বছর বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়াবে ৩৪ হাজার ৯৭৮ মেগাওয়াট। কিন্তু সে সময় সর্বোচ্চ চাহিদা বেড়ে দাঁড়াবে ১৮ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। এতে ২০২৪ সাল শেষে বসে থাকা বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়াবে ১৬ হাজার ৪৭৮ মেগাওয়াট।

যদিও ২০২৫ সালে উৎপাদনে আসা বিদ্যুৎকেন্দ্রের সক্ষমতা কমিয়ে আনা হবে। এতে সে বছর নেট ৬৫৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। এতে ২০২৫ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়াবে ৩৫ হাজার ৬৩৫ মেগাওয়াট। আর সে সময় সর্বোচ্চ চাহিদা বেড়ে দাঁড়াবে ১৯ হাজার ৯০০ মেগাওয়াট। এতে ২০২৫ সাল শেষে বসে থাকা বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা দাঁড়াবে ১৫ হাজার ৭৩৫ মেগাওয়াট।

জানতে চাইলে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন শেয়ার বিজকে বলেন, বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকারীরা বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমতি পেতে অস্থির হয়ে আছে। অথচ বিদ্যুতের মাস্টারপ্ল্যানের বাইরে নতুন কেন্দ্রের প্রয়োজন নেই। তাই নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন না দিতে সরকারের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে।

যদিও নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন বন্ধ নেই। পিডিবির তথ্যমতে, বর্তমানে ৬টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের দরপত্র মূল্যায়ন চলছে। এগুলো সক্ষমতা ৬৫০ মেগাওয়াট। এর বাইরে ১৬টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে চুক্তি স্বাক্ষর প্রক্রিয়াধীন রয়েছে; যেগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা আরও দুই হাজার ৯৬১ মেগাওয়াট। এছাড়া নির্মাণাধীন ৩৯টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের সক্ষমতা ১৪ হাজার ৭৯ মেগাওয়াট, যেগুলো ২০২৫ সালের মধ্যে উৎপাদন শুরু করবে। এরপরও ২০৩০ সাল নাগাদ আরও ১৫ হাজার ১৯ মেগাওয়াটের ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।

জানতে চাইলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘বিদ্যুতের মাস্টারপ্ল্যান আমরা রিভিউ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বাংলাদেশে বিদ্যুতের প্রকৃত চাহিদা কত, সেটা এখন আবার নিরূপণ করা দরকার। কারণ অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র অলস বসে থাকে। এতে সরকারের ক্ষতি হয়। এর মধ্যে আবার কভিড-১৯ কারণে চাহিদার যে প্রাক্কলন করা হয়েছিল, সেটিও হবে না। মাস্টারপ্ল্যান রিভিউ করার পর যদি দেখা যায় প্রাক্কলনের চেয়ে চাহিদা কম, তাহলে পরিকল্পনাধীন কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিল করা হবে। এছাড়া তিন হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে, যার বেশিরভাগই রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল।’

বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের কারণে পর্যায়ক্রমে কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখতে হয়। এতে স্বাভাবিকভাবে চাহিদার ১০ শতাংশ অধিক ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র রাখলেই চলে। সে হিসাবে, বর্তমানে দেশে ১৪ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র থাকলেই চলে। আর ২০২৫ সালে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে উৎপাদন সক্ষমতা লাগবে ২২ হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু সর্বোচ্চ চাহিদার চেয়ে ৪৪ শতাংশ বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

ক্যাবের জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, বর্তমানে দেশে অলস বসে আছে প্রায় ৫০ শতাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্র। উৎপাদন না হলেও বেসরকারি খাতের এসব কেন্দ্রের জন্য মোটা অঙ্কের ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হচ্ছে। ভারসাম্যহীন পরিকল্পনার কারণে সরকারকে এ খাতে প্রতি বছর প্রচুর ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। এ অবস্থায় নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রের লাইসেন্স দেয়া বন্ধ করা উচিত।

উল্লেখ্য, বর্তমানে দেশে সরকারি কেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা ৯ হাজার ১৬১ মেগাওয়াট আর বেসরকারি খাতে রয়েছে ৯ হাজার ৩৬৪ মেগাওয়াট। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগের রয়েছে এক হাজার ২৪৪ মেগাওয়াট কেন্দ্র। আর ভারত থেকে আমদানি করা হচ্ছে এক হাজার ১৬০ মেগাওয়াট। সব মিলিয়ে গত জানুয়ারি শেষে বিদ্যুৎ সরবরাহ সক্ষমতা দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৯২৯ মেগাওয়াট।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০