Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 1:09 am

২০২৬ সালে বে-টার্মিনাল চালু করবে চট্টগ্রামবন্দর

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের ৯৭ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে; দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটি চালু করা হবে। ২০২৪ সালে বে-টার্মিনাল চালু করার কথা থাকলেও করোনা মহামারি এবং বৈশ্বিক দুর্যোগ ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বহুবিধ সমস্যায় আছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা বসে নাই। আমাদের সক্ষমতা আছে। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। বে-টার্মিনালের বৃহৎ অংশ মাল্টিপারপাস টার্মিনাল যেটি চট্টগ্রাম বন্দর করবে সেটির ডিটেইল প্লান তৈরি হচ্ছে। ২০২৫ সালের শেষে বা ২০২৬ সালের শুরুতে বে-টার্মিনালের বৃহৎ অংশ মাল্টিপারপাস টার্মিনাল যেটি চট্টগ্রাম বন্দর করবে সেটি চালু করতে সক্ষম হব। আর মাতারবাড়ী বন্দর ২০২৬ সালের মাঝামাঝি অথবা শেষের দিকে চালু করতে পারব। গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দরের সিসিটি-১ এলাকায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের জেটিতে সর্বপ্রথম ২০০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজের বার্থিংয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এসব কথা বলেন।

চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তফা কামাল, চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম, বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. আরিফ এবং কর্ণফুলী রিভার স্টাডি কনসালটেন্ট এইচ আর ওয়ালিংফোর্ডয়ের বাংলাদেশের পার্টনার ইন্টারপোর্টের পরিচালক ড. মঞ্জুরুল হক।

নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, চট্টগ্রাম বন্দর দেশের অর্থনীতির হƒৎপিণ্ড। গত ১৪ বছরে চট্টগ্রাম বন্দর একি দনের জন্য বন্ধ হয়নি। বন্ধ হয়নি বলে বাংলাদেশ  এখন উন্নয়নের রোল মডেল। পদ্মা সেতু নির্মাণ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মেট্রোরেল নির্মাণের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের ভূমিকা রয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৫তম। ২০০৮ সালে ছিল ৬০তম স্থানে। ১৪ বছরে ৩৫তম স্থানে উন্নয়নে অধিকাংশ কৃতিত্বের অধিকারী চট্টগ্রাম বন্দর। গত ১৪  বছরে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি আরও বলেন, অনেকে বলেছেন বাংলাদেশ শ্রীলংকার মতো হয়ে যাবে। তা হয়নি। কেন হলো নাÑএটা অনেকের মনে কষ্ট হচ্ছে। আগে বাংলাদেশ বাজেট তৈরির জন্য বিদেশিদের কাছে যেতে হতো। এখন দাতাগোষ্ঠী আমাদের পেছনে হাঁটছে। এখন তারা ফান্ড নিয়ে আমাদের পেছরে ঘুরে। বৈদেশিক বিনিয়োগ অপেক্ষা করছে। সমগ্র পৃথিবীর বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে আসবে। এজন্য দরকার স্থিতিশীলতা। গত ১৪ বছরে স্থিতিশীলতা আছে বলেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। অনেকেই স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে চায়। সেটি সম্ভব নয়। শেখ হাসিনা যে উন্নয়ন করেছেন; দেশের মানুষকে যে সম্মান দিয়েছেন; সেখানে দেশের মানুষ শেখ হাসিনার বিকল্প অন্য কিছু ভাবছে না। আগামী নির্বাচনে আরও বেশি সমর্থন নিয়ে শেখ হাসিনা সরকার গঠন করবে। কোনো বিদেশি চাপে পিছিয়ে যাবে না। দেশের মানুষকে নিয়ে এগিয়ে যাবে।

ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন বলেন, ১০ মিটার ড্রাফটে জাহাজ আসা চট্টগ্রাম বন্দর ও বাংলাদেশের জন্য ঐতিহাসিক দিন। ২০০ মিটার লম্বা বড় জাহাজ ভিড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে। এর ফলে বাংলাদেশের আমদানি রপ্তানিতে আরও গতি আসবে। 

সভাপতির বক্তব্যে বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, ২০০ মিটার লম্বা ও ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ‘কমন অ্যাটলাস’ ভিড়েছে, যা আমাদের বন্দরের জন্য ঐতিহাসিক মুহূর্ত। বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আর বে-টার্মিনাল জাতির চাহিদা। ডিপিপি প্রণয়নের কাজ চলছে। করোনার মধ্যেও প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি। তিন মিলিয়ন কনটেইনার ক্লাবে অবস্থান ধরে রাখতে পেরেছি। বন্দর ব্যবহারকারী ও দেশকে সর্বোচ্চ সেবা দিতে আমরা সচেষ্ট। বাংলাদেশের জাহাজ মালিকরা বড় বড় জাহাজ নিয়ে আসছেন। এর জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক হাইড্রোলিক সংস্থা এইচআর ওয়েলিংফোর্ডের প্রতিনিধি ড. মনজুরুল কাদের বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের এ স্টাডি ছিল চ্যালেঞ্জিং। করোনার কারণে এটি আরও কঠিন হয়ে পড়েছিল। আজ বড় জাহাজ ভিড়েছে এটিই বাস্তবতা।

এদিকে গতকাল সকালে বহির্নোঙর থেকে বন্দরের ন্্িউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনালে ব্রাজিল থেকে মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের অপরিশোধিত চিনি নিয়ে বাংলাদেশে আসে কমন আটলাস নামে প্রায় ২০০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানোর হয়। এর মধ্যে দিয়ে নতুন যুগে যাবে চট্টগ্রাম বন্দর।