Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 10:34 pm

২০২৬ সালে লবণের চাহিদা হবে ২৫ লাখ মেট্রিক টন

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে বর্তমানে চারটি খাতে লবণ ব্যবহƒত হচ্ছে। সে জন্য প্রতি বছর দেশীয় লবণের চাহিদা ও ব্যবহার বাড়ছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছর দেশে পরিশোধিত লবণের চাহিদা রয়েছে প্রায় ১৯ লাখ মেট্রিক টন। আর অপরিশোধিত লবণের চাহিদা হবে প্রায় ২৩ লাখ মেট্রিক টন। তবে ২০২৫-২৬ অর্থবছর পরিশোধিত লবণের চাহিদা হবে প্রায় ২৫ লাখ মেট্রিক টন, আর অপরিশোধিত লবণের চাহিদা হবে প্রায় ৩০ লাখ মেট্রিক টন। ‘জাতীয় লবণনীতি, ২০২২’-এর খসড়ায় এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। লবণের চাহিদা পূরণ, দেশীয় লবণ শিল্পের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে ২৩ মার্চ শিল্প মন্ত্রণালয় এ লবণনীতি প্রকাশ করা হয়েছে।

নীতিতে বলা হয়, ২০২৬ সবচেয়ে বেশি শিল্প খাতে লবণের চাহিদা বাড়বে। ২০২১-২২ অর্থবছর শিল্প খাতে লবণের চাহিদা ছিল ৬ দশমিক ৯২ লাখ মেট্রিক টন; যা ২০২২-২৩ অর্থবছর হবে ৭ দশমিক ৯৬ লাখ মেট্রিক টন, ২০২৩-২৪ অর্থবছর ৯ দশমিক ১৫ লাখ মেট্রিক টন, ২০২৪-২৫ অর্থবছর ১০ দশমিক ৫২ লাখ মেট্রিক টন ও ২০২৫-২৬ অর্থবছর দাঁড়াবে ১২ দশমিক ১০ লাখ মেট্রিক টন।

অন্যদিকে, চাহিদার দ্বিতীয় অবস্থানে থাকবে ভোজ্য লবণ। নীতিমালায় বলা হয়, জাতীয় লবণ নীতি-২০১৬ অনুযায়ী জনপ্রতি প্রতিদিন ভোজ্য লবণ গ্রহণের পরিমাণ নির্ধারিত হয়েছে ১৪ দশমিক ৫০ গ্রাম। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দিন দিন লবণ গ্রহণের পরিমাণ কমানোর বিষয়ে সুপারিশ করেছে। সে জন্য জনপ্রতি প্রতিদিন ভোজ্য লবণ গ্রহণের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ গ্রাম। সে হিসেবে ২০২১-২২ অর্থবছর ভোজ্য লবণের চাহিদা ছিল ৮ দশমিক ৭৬ লাখ মেট্রিক টন, ২০২২-২৩ অর্থবছর ৮ দশমিক ৮৮ লাখ মেট্রিক টন, ২০২৩-২৪ অর্থবছর ৯ লাখ মেট্রিক টন, ২০২৪-২৫ অর্থবছর ৯ দশমিক ১২ লাখ মেট্রিক ও ২০২৫-২৬ অর্থবছর হবে ৯ দশমিক ২৪ লাখ মেট্রিক টন। আর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে ২০২১-২২ অর্থবছর চাহিদা ছিল ৩ দশমিক ৭০ লাখ মেট্রিক টন। ২০২৫-২৬ অর্থবছর এই চাহিদা বেড়ে দাঁড়াবে ৩ দশমিক ৯৬ লাখ মেট্রিক টন।

জাতীয় লবণ নীতিমালার ১৪টি উদ্দেশ্যের কথা নীতিমালায় বলা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছেÑদেশীয় লবণ শিল্পের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ; পরিবেশবান্ধব উন্নত ও আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে অল্প জমিতে অধিক পরিমাণ লবণ উৎপাদন, সংরক্ষণ, সরবরাহ ও ন্যায্য মূল্যে বাজারজাতকরণের কৌশল নির্ধারণ এবং তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ; আয়োডিনযুক্ত লবণ আইন, ২০২১ ও তদধীন প্রণীত বিধিমালা অনুযায়ী, লবণ মিল পর্যায়ে গুণগতমানসম্পন্ন আয়োডিনযুক্ত লবণ উৎপাদন ও ভোক্তা পর্যায়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ মান ও স্বাস্থ্যসম্মত লবণ সরবরাহ নিশ্চিতকরণে সহায়তা প্রদান; লবণ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে নতুন নতুন এলাকা চিহ্নিতকরণ ও সম্প্রসারণ; লবণ চাষিদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা, প্রশিক্ষণ ও স্বল্প সুদে সহজ শর্তে ঋণ প্রদান নিশ্চিতকরণ; খাতভিত্তিক লবণের বার্ষিক চাহিদা নিরূপণ; প্রকৃত লবণ চাষিদের নিকট লবণ চাষের জমি বরাদ্দকরণ; ন্যূনতম এক লাখ মেট্রিক টন লবণের বাফার স্টক নিশ্চিতকরণ; আমদানি নিয়ন্ত্রিত পণ্যের তালিকায় লবণকে অন্তর্ভুক্তকরণ, লবণ আমদানি শুল্কহার যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণ এবং মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে লবণ আমদানি বন্ধের পদক্ষেপ গ্রহণ; বিশেষ পরিস্থিতিতে লবণ আমদানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ; লবণ উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য পরিবেশবান্ধব লবণ শিল্পাঞ্চল প্রতিষ্ঠাকরণ; লবণ শিল্পের সার্বিক কার্যক্রম নিয়মিতভাবে মনিটরিং; উৎপাদিত লবণের মান নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিতকরণ এবং ভোজ্য লবণের দেশী উৎপাদন বৃদ্ধি করে পর্যায়ক্রমে আমদানি হ্রাসকরণ।

লবণের চাহিদা নিরূপণ, লবণনীতি বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটি গঠনের কথা নীতিমালায় বলা হয়েছে। এই কমিটিতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব সভাপতি ও বিসিক চেয়ারম্যানকে সদস্য সচিব করে ২৫ সদস্যের এই কমিটি গঠিত হবে। কমিটির কাজ হবে বিভিন্ন খাতে ব্যবহƒত লবণের বার্ষিক চাহিদা নিরূপণ, লবণ উৎপাদন মৌসুমের শুরুতেই লবণের বার্ষিক চাহিদা অনুযায়ী লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ এবং লবণ শিল্পের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রয়োজনে জরুরি সভা আহ্বান করে তা মোকাবিলার ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

এছাড়া লবণ শিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারকে সভাপতি ও বিসিক চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালককে সদস্য সচিব করে লবণ উপদেষ্টা বোর্ড গঠিত হবে। আর লবণ শিল্পের উন্নয়নে উৎপাদন পর্যায়ে স্থানীয় কমিটি গঠনের কথা নীতিমালায় বলা হয়েছে।