শেয়ার বিজ ডেস্ক: ২০৪০ সালের মধ্যে জাপানে প্রায় চারগুণ বেশি বিদেশি কর্মী দরকার। সরকার ঘোষিত অর্থনৈতিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তাদের এই অভিবাসী কর্মী দরকার বলে জানিয়েছে টোকিওভিত্তিক একটি সরকারি থিঙ্কট্যাঙ্ক গ্রুপ। এ গ্রুপের সঙ্গে রয়েছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ও দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। খবর: নিক্কেই এশিয়া।
একটি জরিপে দেখা গেছে, অতীতের তুলনায় জাপানে জনসংখ্যা কমেছে। তবে অভিবাসী কর্মীদের ওপর তাদের নির্ভরতাও বাড়ছে। বিদেশি প্রতিভা আকর্ষণ করার ক্ষমতাও রয়েছে দেশটির। অথচ কভিড-১৯ মহামারির কারণে বিদেশি শিক্ষার্থী ও কর্মীদের জাপানে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
২০৪০ সালের মধ্যে জাপানে প্রায় ৬৭ লাখ ৪০ হাজার কর্মী দরকার। অর্থাৎ বর্তমানের তুলনায় প্রায় ৩০০ শতাংশ বেশি কর্মী প্রয়োজন। টেকসই বার্ষিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে এ কর্মীদের দরকার। বর্তমানে ১৭ লাখ দুই হাজার বিদেশি কর্মী রয়েছে জাপানে। এই কর্মীরা দেশটির মোট কর্মশক্তির দুই দশমিক ৫ শতাংশ চাহিদা পূরণ করছে।
জাইকার প্রেসিডেন্ট শিনিচি কিতাওকা একটি সম্মেলনে বলেন, জরুরি ভিত্তিতে বিদেশি কর্মী নিয়োগ নিয়ে আমাদের আলোচনায় বসা উচিত। চীনের মতো প্রতিযোগীর সঙ্গে টেক্কা দিতে এর বিকল্প নেই বলে জানান তিনি। বিদেশি কর্মীদের কাছে জাপানকে আকর্ষণীয় করে তুলতে দীর্ঘমেয়াদে পরিকল্পনা করতে হবে।
জাপানের জনসংখ্যা সর্বোচ্চ পর্যায়ে ছিল ২০০৮ সালে। এরপর জনসংখ্যা কমতে থাকে। নি¤œ জš§হারকে এজন্য দায়ী করা হয়। আর বয়স বেড়ে যাওয়ায় কর্মক্ষম ব্যক্তির সংখ্যা দ্রুত কমে আসছে। নৃতাত্ত্বিক স্বকীয়তা বজায় রাখতে জাপানে দীর্ঘদিন ধরে অভিবাসনকে ট্যাবু হিসেবে দেখা হচ্ছে। তাই বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বৃদ্ধি ও মারাত্মক শ্রমিক সংকটের কারণে অভিবাসীদের জন্য সীমান্ত খুলে দিতে সরকারের ওপর চাপ বেড়েছে।
গবেষণায় মূলধনকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে, যা প্রতি বছর বাড়ছে। এক বছরের মধ্যে দেশটির প্রবৃদ্ধি বাড়বে। এজন্য অটোমেশন খাতের বিনিয়োগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন দেশটির ব্যবসায়ীরা। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটিতে অভিবাসন প্রক্রিয়া বেশ জটিল। তাই ভিসানীতিতে পরিবর্তন আনার কথা জানান তারা।
জাপানে অভিবাসী কর্মীদের বেশিরভাগ এসেছেন ভিয়েতনাম ও চীন থেকে। থিঙ্কট্যাঙ্ক গ্রুপটি জানায়, দুই দশকের মধ্যে নি¤œ আয়ের দেশগুলো যেমন কম্বোডিয়া ও মিয়ানমার থেকে বেশি কর্মী আসবে দেশটিতে। যদিও গ্রুপটি মনে করছে, বর্তমান অভিবাসন নীতির কারণে পর্যাপ্ত কর্মী পাবে না জাপান। তাই দেশটিকে ভিসানীতির সংশোধন করতে হবে। মহামারির কারণে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করার ফলে জাপানে কর্মীর সংখ্যা কমছে। তা ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে অভিবাসীদের জন্য দরজা বন্ধ রয়েছে জাপানে। এ নীতি অব্যাহত থাকলে জাপান প্রত্যন্ত অঞ্চলে পরিণত হবে, যেখানে কেবল অল্পসংখ্যক বিদেশি কর্মীকে স্বাগত জানানো হবে।
সম্প্রতি এ নীতি পরির্বতন করার উদ্যোগ নিয়েছে জাপান। নির্দিষ্ট কাজের জন্য কর্মী হিসেবে বিদেশিদের নেয়া শুরু করতে যাচ্ছে দেশটি। দেশটির বিচার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা গত বছর জানান, ২০২২ অর্থবছরের শুরুতে এসব কর্মী নেয়া শুরু হতে পারে। তারা দেশটিতে অনির্দিষ্ট সময় থাকতে পারবে। ২০১৯ সালে অভিবাসীবান্ধব একটি আইন কার্যকর করে জাপান। এ আইনের অধীন ১৪টি খাতে নির্দিষ্ট দক্ষ কর্মীদের পাঁচ বছরের ভিসা দেয়া শুরু করে জাপান। কৃষি, নার্সিং ও পরিচ্ছন্নতার মতো খাতগুলোয় এসব কর্মীদের পরিবারের সদস্যদের জাপানে নেয়ার সুযোগ ছিল না। জাপানের প্রতিষ্ঠানগুলো এসব সীমাবদ্ধতার কারণে বিদেশি কর্মী নিতে দ্বিধায় থাকে। সরকারকে এসব সীমাবদ্ধতা শিথিল করতে হবে বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা। জাপান সরকারের নতুন উদ্যোগ কার্যকর হলে এসব কর্মী অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য ভিসা নবায়ন করতে পারবেন আর নিজেদের পরিবার নিয়ে যেতে পারবেন।