শেয়ার বিজ ডেস্ক: কার্বন নিঃসরণ ২০৫০ সালের মধ্যে শূন্যের কোঠা বা ‘নেট জিরো’তে নামিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইএইউ)। মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশগুলোর মধ্যে প্রথম দেশ হিসেবে এ ঘোষণা দিল দেশটি। পাশাপাশি শূন্য কার্বন নিঃসরণ ও পরিচ্ছন্ন (ক্লিন এনার্জি) বিকল্প জ্বালানির পেছনে ২০৫০ সালের মধ্যে ১৬৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার কথাও জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ও দুবাইয়ের শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম। খবর: আল জাজিরা, ব্ল–মবার্গ।
এ ব্যাপারে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবির জ্বালানি বিভাগ এক বিবৃতিতে জানায়, বিকল্প জ্বালানি ও শূন্য কার্বন নিঃসরণ উত্তরণে আমাদের প্রচেষ্টাকে আরও গতিশীল ও সুনির্দিষ্ট করবে সরকারের এ উদ্যোগ।
এদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের এ শূন্য নিঃসরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণকে সাধুবাদ জানিয়েছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা। দেশটির এ উদ্যোগ বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলাফলজনিত ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোর ক্ষেত্রে বিশ্বকে কিছুটা হলেও আশার আলো দেখাচ্ছে বলে মনে করছেন তারা।
নভেম্বরে স্কটল্যান্ডের রাজধানী গ্লাসগোতে জাতিসংঘের পৃষ্ঠপোষকতায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন বা ‘কপ২৬’। এ সম্মেলন শুরুর আগে কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের ব্যাপারে সংযুক্ত আরব আমিরাতের উদ্যোগকে তাৎপর্যপূর্ণ মনে করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ব্রিটেন এরই মধ্যে বিশ্বের প্রথম সারির তেল-গ্যাস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণের তাগাদা দিয়ে আসছে। আরব আমিরাতের এ উদ্যোগ তাদের এ প্রচেষ্টায় আরও গতির সঞ্চার করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থনীতি ব্যাপকভাবে তেল ও গ্যাস রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল। কয়েক দশক ধরেই তারা তাদের অর্থনীতিকে তেল-গ্যাসনির্ভরতা থেকে মুক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে আসছে। তার পরও এ মুহূর্তে আরব আমিরাতের জিডিপির প্রায় ৩০ শতাংশই আসে তেল ও গ্যাস রপ্তানির হাত ধরে। পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো বিশ্বের সর্বোচ্চ মাথাপিছু কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলোর কাতারে অবস্থান করছে তারা। সে হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের এ উদ্যোগকে উচ্চাভিলাষী বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টোনের রাইস বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো জিম ক্রেন বলেন, আরব আমিরাতের মতো বিশ্বের সবচেয়ে তেলনির্ভর অর্থনীতিগুলোর শূন্য কার্বন নিঃসরণের অঙ্গীকার সত্যিই তাৎপর্যপূর্ণ। তাদের এ অঙ্গীকার এ-সংক্রান্ত বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। অবশ্য আমিরাতের সরকারের এখনই জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসার কোনো পরিকল্পনা নেই। বরং সম্প্রতি তাদের রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি প্রতিষ্ঠান আবুধাবি ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি তেলের উৎপাদন বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে তেলের উৎপাদন বাড়ালেও এর সঙ্গে তাদের কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার উদ্যোগ সাংঘর্ষিক নয়। জাতিসংঘের এ-সংক্রান্ত আইনই এর প্রধান কারণ। জাতিসংঘ কোনো দেশের সীমান্তের ভেতরের কার্বন নিঃসরণকেই শুধু হিসাব করে। তাই সীমান্তের বাইরে আরব আমিরাতের তেল-গ্যাসসহ জীবাশ্ম জ্বালানি রপ্তানি ও উৎপাদন বৃদ্ধি তার এই নেট জিরো কার্বন লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়।
আমিরাত এরই মধ্যে পরিচ্ছন্ন জ্বালানি ও শূন্য নিঃসরণের ব্যাপারে কিছু কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আবুধাবিতেই অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল রিনিউয়েবল এনার্জি এজেন্সি। এছাড়া নগরীর ২৪০ বিলিয়ন ডলারের স্বার্বভৌম সম্পদ তহবিল ‘মুবাদালা’ তার অধীনস্থ রূপান্তরযোগ্য জ্বালানি প্রতিষ্ঠান মাসদারে ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ করেছে। পাশাপাশি আবুধাবি ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি এরই মধ্যে নতুন প্রজšে§র জ্বালানি ‘ব্লু হাইড্রোজেন’-এর পরীক্ষামূলক রপ্তানি শুরু করেছে। এ ব্লু হাইড্রোজেনকে দূষণমুক্ত জ্বালানি রূপান্তরের পথে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে।