Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 9:29 pm

২০ জেলায় ৪০ প্রার্থীর ভোট বর্জন

শেয়ার বিজ ডেস্ক: শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দেশের ২০ জেলা থেকে ৪০ প্রার্থীর ভোট বর্জনের খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সিলেটের বিভিন্ন আসন থেকে মোট সাতজন প্রার্থী ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। এ ছাড়া কুমিল্লায় পাঁচজন, কক্সবাজারে চারজন, ময়মনসিংহে চারজন, পাবনার তিনজন খুলনা, নড়াইল, মৌলভীবাজার ও জামালপুরে দুজন করে প্রার্থীর নির্বাচন বর্জন করে। রোববার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলাকালে এসব ঘোষণা আসে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে।

সিলেট-২: বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর উপজেলা নিয়ে গড়া এ আসনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো প্রার্থীরা হলেনÑগণফোরামের প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান (উদীয়মান সূর্য), স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বিশ্বনাথ পৌরসভার মেয়র মুহিবুর রহমান (ট্রাক), জাতীয় পার্টির প্রার্থী ও সাবেক সংসদ সদস্য ইয়াহিয়া চৌধুরী এবং তৃণমূল বিএনপির মোহাম্মদ আবদুর রব (সোনালী আঁশ)। রোববার দুপুরে ওসমানীনগর উপজেলার গোয়ালাবাজারে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে তারা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।

সিলেট-৪: এদিকে প্রায় একই সময়ে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ তুলে সিলেট-৪ (কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট এবং জৈন্তাপুর) আসনের তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী আবুল হোসেনও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।

সিলেট-৩: এ আসনের ভোট বর্জন করেছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল (ট্রাক) ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক।

কুমিল্লা-১: কুমিল্লা-১ আসনের ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার নাঈম হাসান ও জাতীয় পার্টির লাঙল প্রতীকের আমির হোসেন সংবাদ সম্মেলন করে ভোট বর্জন করেন। নির্বাচনে তারা ব্যাপক কারচুপি, অনিয়ম ও প্রশাসনের অসহযোগিতার অভিযোগ করেন।

কুমিল্লা-১১: এ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান ভোট বর্জনের ঘোষণায় বলেছেন, ‘ভোটের পরিবেশ নেই।’

কুমিল্লা-৭: কুমিল্লা-৭ (চান্দিনা) আসনে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে পুনরায় ভোটগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীকের মুনতাকিম আশরাফ টিটু। তিনি চান্দিনার ৮৯টি কেন্দ্রেই জালভোটের অভিযোগ তুলেছেন।

কুমিল্লা-১০: এ ছাড়া কুমিল্লা-১০ সংসদীয় আসনে নির্বাচন বর্জন করেছে জাতীয় পার্টির প্রার্থী জোনাকি মুন্সি।

কক্সবাজার-৪: ভোট চলাকালে রোববার দুপুর একটার দিকে প্রথম ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে জাতীয় পার্টির মনোনীত লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী নুরুল আমিন সিকদার ভুট্টো।

কক্সবাজার-১: বেলা সাড়ে ৩টার দিকে নিজের ফেসবুক পেজে ভিডিও বার্তায় ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন কক্সবাজার-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান এমপি জাফর আলম। তিনি বলেন, ‘কেন্দ্র থেকে আমার এজেন্টদের মারধর করে বের করে দেয়া হয়। অনেক প্রিজাইডিং অফিসারকেও আহত করা হয়। তাই আমি ভোট বর্জন করলাম।’

কক্সবাজার-৩: সদর-রামু-ঈদগাহ এলাকার এ আসনের ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী আইনজীবী ফোরামের নেতা ব্যারিস্টার মিজান সাঈদ ভোট বর্জন করে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন। বেলা ২টার দিকে ব্যারিস্টার মিজান সাঈদ নিজেই বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

চট্টগ্রাম-১২: পটিয়ার এ আসন থেকে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) নোঙর প্রতীকের প্রার্থী এম এয়াকুব আলী। নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে কেন্দ্র দখলের পাশাপাশি ভোটে প্রভাব বিস্তার, নোঙ্গর প্রতীকের এজেন্টকে বের করে দেয়াসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তোলেন তিনি।

রোববার বিকাল ৩টার দিকে উপজেলার কুসুমপুরা ইউনিয়নের হরিণখাইন এলাকায় তার প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন থেকে এ ঘোষণা দেন এয়াকুব আলী।

ঢাকা-২ আসন: কেন্দ্রে অনিয়ম, ভোটারদের মারপিট, পোলিং এজেন্টদের বুথ থেকে বের করে দেয়াসহ নানা অভিযোগে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা-২ (কেরানীগঞ্জ, কামরাঙ্গীরচর-সাভার একাংশ) আসনের ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. হাবিবুর রহমান। রোববার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে তার নিজ বাসভবন থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন ট্রাক প্রতীকের এ প্রার্থী।

নারায়ণগঞ্জ-২: নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনে প্রায় সব কেন্দ্রে প্রকাশ্যে নৌকায় সিল মারার অভিযোগ তুলে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী আলমগীর শিকদার লোটন। রোববার তার নিজ এলাকায় রামচন্দ্রদী কেন্দ্রে নৌকার এজেন্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললে সেখানে বাদানুবাদ ঘটে। এ বাদানুবাদের একপর্যায়ে অতিরিক্ত পুলিশ এসে গুলি ছুড়লে পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হন। এ কারণে নির্বাচন বর্জন করেন তিনি।

খুলনা-১: খুলনা-১ আসনের (দাকোপ-বটিয়াঘাটা) তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী ও হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক সাড়ে ৩টার দিকে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।

খুলনা-৩: অন্যদিকে খুলনা-৩ আসনের (খালিশপুর-দৌলতপুর-খানজাহান আলী) স্বতন্ত্র প্রার্থী ফাতেমা জামান সাথী বেলা ৩টার দিকে নিজের ফেসবুক আইডি থেকে লাইভে এসে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।

যশোর-১: নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে ৫৫টি কেন্দ্র দখলের অভিযোগে এনে ভোট বর্জন করেছেন যশোর-১ আসনের ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলম লিটন। রোববার বেলা ১১টার দিকে বেনাপোল মাদ্রাসা কেন্দ্রের পাশে নিজের একটি নির্বাচনী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেন লিটন।

লিটন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বেনাপোলের সাবেক পৌর মেয়র।

নড়াইল-২ : ভোটগ্রহণে ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ এনে নড়াইল-২ আসনে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি মনোনীত হাতুড়ি প্রতীকের প্রার্থী অ্যাডভোকেট শেখ হাফিজুর রহমান ভোট বর্জন করেছেন। রোববার বিকাল ৩টার কিছু আগে তিনি ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। একই অভিযোগ তুলে স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীকের লায়ন নূর ইসলামও ভোট বর্জন করেছেন। বিকাল ৩টার পর ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন এ প্রার্থী।

ময়মনসিংহ-১০: গফরগাঁওয়ের এ আসনে অনিয়মের অভিযোগ এনে ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট কায়সার আহাম্মদ এবং ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. আবুল হোসেন দীপু নির্বাচন বর্জন করেছেন। রোববার সকালে কায়সার আহাম্মদ গফরগাঁওয়ের ধামাইলে তার নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। অপর প্রার্থী আবুল হোসেন দীপু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। পরে তিনি এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

ময়মনসিংহ-২: একই ধরনের অভিযোগ এনে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন ময়মনসিংহ-২ (ফুলপুর-তারাকান্দা) আসনে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী এনায়েত হোসেন মণ্ডল। রোববার দুপুর ২টার দিকে ভোট বর্জন করার ঘোষণা দেন এনায়েত হোসেন মণ্ডল।

ময়মনসিংহ-৭: ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসনের তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী ডক্টর আব্দুল মালেক ফরাজি ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী কোটি কোটি টাকা খরচ করে নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘন করছে। কিন্তু এ নিয়ে আইনি কোনো পদক্ষেপ নেই। তাই আমি ভোট বর্জন করে এই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছি।’

জামালপুর ৫ ও ৩: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামালপুর-৩ (মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ) আসনের জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী মীর শামসুল আলম লিপ্টন ও জামালপুর-৫ (সদর) আসনের ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল করিম ভোট বর্জন করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। এ সময় প্রার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, ‘কেন্দ্র থেকে তাদের এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে।’

ঠাকুরগাঁও-১: ঠাকুরগাঁও-১ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী রেজাউর রাজি স্বপন চৌধুরী জালভোটের অভিযোগ এনে ভোট বর্জন করেছেন। রোববার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে সাংবাদিকদের কাছে তিনি ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন।

মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া): আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ এনে ভোট বর্জন করেছেন ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যক্ষ একেএম সফি আহমদ সলমান ও তৃণমূল বিএনপির সোনালী আঁশ প্রতীকের প্রার্থী এমএম শাহীন। রোববার বিকালে ফেসবুক লাইভে এসে তারা এ ঘোষণা দেন।

বাগেরহাট-৪: জালভোট, কর্মী-সমর্থকদের মারধর, এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়াসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে বাগেরহাট-৪ (মোরেলগঞ্জ- শরণখোলা) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জামিন হোসাইন ভোট বর্জন করেছেন।  রোববার দুপুরে তিনি নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেন।

টাঙ্গাইল-২: টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আস?নে ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ইউনুছ ইসলাম তালুকদার ঠান্ডু জাল ভোট, এজেন্ট?দের মারধরসহ বি?ভিন্ন অভি?যো?গ এনে ভোট বর্জনের ঘোষণা দি?য়ে?ছেন। রোববার দুপু?রে গোপালপুর উপ?জেলার ঝাওয়াইল বাজার প্রচার-প্রচারণার নির্বাচন অফিসে সংবাদ সম্মেলন করে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন তিনি।

চাঁদপুর-৪: নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ এনে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন চাঁদপুর-৪ আসনের জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী সাজ্জাদ রশিদ।  রোববার দুপুর ২টার দিকে ফরিদগঞ্জ প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন তিনি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩: এ আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) নোঙ্গর প্রতীকের প্রার্থী মাওলানা আব্দুল মতিন ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। রোববার দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের ফেসবুকে ৫৬ সেকেন্ডের লাইভে তিনি এ ঘোষণা দেন।

ফেনী-৩: ১৪ দলীয় জোট মনোনীত প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে জালভোট ও কারচুপির অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জন করেছেন ফেনী-৩ আসনের ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী হাজী রহিম উল্যাহ। রোববার বেলা ১টার দিকে দাগনভূঞা বাজারের জিরো পয়েন্টে সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন তিনি।

লালমনিরহাট-২: লালমনিরহাট-২ আসনের জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন দুপুর ১২টার দিকে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।

তিনি বলেন, ‘ভোটে ব্যাপক অনিয়ম, জালভোট ও পেশিশক্তির প্রয়োগ হচ্ছে। বিষয়গুলো প্রশাসনের দৃষ্টিতে আনা হলেও তারা কার্যকর কোনো উদ্যোগ না নেয়ায় ভোট বর্জন করতে বাধ্য হচ্ছি। এভাবে তো আর ভোটে থাকা যায় না।’

এছাড়া চুরি ও ভোট ডাকাতির অভিযোগ তুলে নির্বাচনকে ‘প্রহসনের নির্বাচন’ বলে পাবনা-২ আসনের বিএনএমের প্রার্থী ডলি সায়ন্তনী, পাবনা-৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী পাঞ্জাব আলী বিশ্বাস ও পাবনা-৫ আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী মো. জাকির হোসেন ভোট বর্জন করেছেন।