নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে চলমান ২০টি মেগা প্রকল্পের মোট ব্যয় ৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ৪৩ বিলিয়ন ডলার বিদেশি ঋণ। প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নে যে হার, তাতে অনেকগুলো ২০৩০ সালেও সম্পন্ন হবে না। কিন্তু ২০২৪ সাল থেকেই এসব প্রকল্পের বিদেশি ঋণ পরিশোধ শুরু করতে হবে। প্রথম চাপটা আসবে চীন থেকে। এরপর রাশিয়া এবং তারপর জাপান। এখন থেকে প্রস্তুতি না নিলে অর্থনৈতিক বিপর্যয় আসার আশঙ্কা আছে বলে জানান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
গতকাল ‘বাংলাদেশের বৃহৎ বিশটি মেগা প্রকল্প: প্রবণতা ও পরিস্থিতি’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল মিডিয়া ব্রিফিংয়ে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ও সিপিডি’র সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমরা ৭০ বিলিয়ন ডলারের ঋণ নিয়ে আলোচনা করছি, যা দিয়ে ২০টি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। ২০টির মোট দায়-দেনা পরিস্থিতি কত? এতে দেখা যায়, স্থানীয় মুদ্রায় আছে ২৭ বিলিয়ন ডলার এবং বিদেশি অর্থায়ন ৪৩ বিলিয়ন ডলার। ৭০ বিলিয়ন ডলারের দুই তৃতীয়াংশ বিদেশি অর্থায়ন উৎস থেকে আসবে। ২০টি প্রকল্পের ১৫টিই ভৌত অবকাঠামো সম্পর্কিত। ৭০ বিলিয়ন ডলারের ৫০ শতাংশ প্রকল্প যোগাযোগ খাতে ব্যয় হবে। এছাড়া ৩৫ শতাংশ ব্যয় হবে বিদ্যুৎ খাতে। বাকি অর্থ স্বাস্থ্যসহ অন্য খাতে ব্যয় হবে। এসব প্রকল্পে বড় ধরনের ধাক্কা দেয়ার প্রবণতা আছে। আমাদের সবাইকে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। সে জন্যই ২০টি মেগা প্রকল্প বেছে নিয়েছি। ২০২২-২৩ সালে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বেশি বরাদ্দ দেয়া হয়।
গতকালের আলোচনার ২০টি মেগা প্রকল্পের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, ঢাকা মাস র্যাপিড ট্রানজিট-১, মাতারবাড়ী ১২০০ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প, ঢাকা মাস র্যাপিড ট্রানজিট লাইন-৫, এমআরটি লাইন-৬, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ, চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্প, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ডিপিডিসির পাওয়ার সিস্টেম শক্তিশালীকরণ প্রকল্প, যমুনা নদীতে বঙ্গবšু¬ শেখ মুজিব রেলওয়ে ব্রিজ প্রকল্প, কর্ণফুলী টানেল প্রকল্প, সেফ ওয়াটার সাপ্লাই প্রকল্প ও কভিড ইমারজেন্সি রেসপন্স ও প্যানডেমিক প্রিপারেডেন্স প্রকল্প ইত্যাদি। আর ২০টি মেগা প্রকল্পের ব্যয় ৭০ দশমিক শূন্য ৭ বিলিয়ন ডলার বা ৫ লাখ ৫৬ হাজার ৯৫৬ কোটি টাকা। যার ৬১ শতাংশ আসবে বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান থেকে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০টি প্রকল্পের ১৫টিই সড়ক ও যোগাযোগসহ ভৌত অবকাঠামোগত খাতের। যার মধ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বড় বিনিয়োগ রয়েছে। বাজেটের ৩০ শতাংশ অর্থাৎ এক-তৃতীয়াংশ গেছে মেগা প্রকল্পে। মেগা প্রকল্পগুলো যতই যৌক্তিক হোক শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা খাতকে অবহেলার সুযোগ নেই। ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১১টি প্রকল্পের বাস্তবায়ন হার ১০ শতাংশের কাছাকাছি। ২০১৮ সালের পর নেয়া প্রকল্প বাস্তবায়নের হার দুর্বল। ওই প্রকল্প বাস্তবায়নের হার ১০-এর নিচে।
ঋণের পরিমাণের দিক থেকে চীন তৃতীয় হলেও দায়-দেনা পরিশোধের সময়সূচি হিসেবে দেশটিকে সবার আগে ঋণ পরিশোধ করতে হবে বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের ২০টি মেগা প্রকল্পের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের সবচেয়ে বড় ধাক্কা আসবে ২০২৪ ও ২০২৬ সালে। আর ঋণের সবচেয়ে বড় অংশ যাবে রাশিয়া, জাপান ও চীনের কাছে। অনুদান জাতিসংঘ, জাইকার কাছ থেকে এসেছে। তবে ঋণের বড় অংশ যাবে রাশিয়ার কাছে ৩৬ দশমিক ৬ শতাংশ, দ্বিতীয় যাবে জাপানের কাছে প্রায় ৩৫ শতাংশ এবং তৃতীয় চীনের কাছে প্রায় ২১ শতাংশের ওপর। অর্থাৎ এই মুহূর্তে বাংলাদেশ সব থেকে বেশি দেনাদার রাশিয়া, চীন ও জাপানের কাছে। তাদের দায়-দেনা পরিশোধ করতে হবে। দেনার রেয়াতকাল (গ্রেস পিরিয়ড) শেষ হয়ে যাচ্ছে। সব থেকে বড় বড় অঙ্কের দেনা ২০২৪ ও ২০২৬ সালে পরিশোধ করতে হবে। চীন ও রাশিয়াকে বেশি দেনা পরিশোধ করতে হবে। আর ২০২৪ সাল থেকেই চীনকে বেশি দায়-দেনা পরিশোধ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বড় বড় অনেক প্রকল্পের দায়-দেনা পরিশোধের সময় এগিয়ে আসছে অর্থাৎ সাশ্রয়ী সময় শেষ হয়ে আসছে। এখন দেনা পরিশোধ করতে হবে।