২০ হাজার কোটি টাকা কমছে এনবিআরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক: অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আদায় বেড়েছে। প্রবৃদ্ধিও ভালো অবস্থানে রয়েছে। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। ফলে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়েছে। সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়াচ্ছে ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। এনবিআর সূত্রমতে, চলতি অর্থবছরের বাজেটে এনবিআরকে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়। কিন্তু অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি হয়েছে ২৩ হাজার ২২৭ কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরে বাড়তি রাজস্ব আদায়ের চাপ আছে। একদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত অনুসারে মোট দেশজ উৎপাদনের দশমিক ৫ শতাংশ বাড়তি রাজস্ব আদায়ের চাপ। অন্যদিকে বিদেশি ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বাড়ছে, তাই অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সম্পদ আহরণ বৃদ্ধির চাপ আছে। এছাড়া সরকারের বাজেটের আকার প্রতি বছর বাড়ছে। সেটির সঙ্গে তাল মিলিয়ে অর্থের জোগান দেয়ার পুরোনো চাপ তো আছেই। এমন অবস্থায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট মনিটরিং ও সম্পদ কমিটি এনবিআরের মাধ্যমে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে। এখন আয়কর, মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট এবং শুল্ক খাতে কী পরিমাণ লক্ষ্য কমানো হবে তা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।

আইএমএফের অনুমোদিত ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণের অন্যতম শর্ত হলো চলতি অর্থবছর থেকেই মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) দশমিক ৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক-কর আদায়ের যে শর্ত আছে, তা দেখাতে হবে তৃতীয় কিস্তির অর্থছাড়ের আগেই। সেই হিসাবে আইএমএফের তরফ থেকে এনবিআরকে অন্তত ৪ লাখ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্য দেয়া হয়।

এনবিআর সূত্রমতে, গত জুলাই-ডিসেম্বর ছয় মাসে সব মিলিয়ে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৬৩০ কোটি টাকার শুল্ক-কর আদায় হয়েছে। এ সময়ে আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারিত ছিল ১ লাখ ৮৮ হাজার ৮৫৬ কোটি টাকা। গত ছয় মাসে গড়ে সাড়ে ২৭ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। কিন্তু সংশোধিত লক্ষ্য অর্জনে প্রতি মাসে গড়ে ৪০ হাজার ৭২৩ কোটি টাকা আদায় করতে হবে। এনবিআর ইতঃপূর্বে কখনোই এভাবে ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এত শুল্ক-কর আদায় করতে পারেনি। এছাড়া আগামী জুন মাসের মধ্যে এনবিআরের বেশ কিছু সংস্কারও করার বাধ্যবাধকতা আছে। রাজস্ব খাতের সংস্কারে আইএমএফের অন্যতম শর্ত হলো আয়কর, মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট এবং শুল্ক খাতে বছরের পর বছর যেসব কর ছাড় দেয়া হয়েছে, তা কমাতে হবে। এর দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখাতে আগামী জুনের আগেই কাজটি শুরু করতে হবে। এ লক্ষ্যে এনবিআরের সদস্য সামস উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্ব একটি দল কাজ করছে।

সম্প্রতি এনবিআর আয়কর খাতে কত ছাড় দেয়া হয়েছে, সেটির হিসাব করেছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের হিসাব অনুযায়ী, দেশে বছরে ১ লাখ ২৫ হাজার ৮১৩ কোটি টাকার আয়কর ছাড় দেয়া হয়। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে ৮৫ হাজার ৩১৫ কোটি টাকার করপোরেট কর ছাড় দেয়া হয়। বাকি ৪০ হাজার কোটি টাকা ছাড় দেয়া হয় ব্যক্তিপর্যায়ের করদাতাদের ক্ষেত্রে। এনবিআরের এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে ৯৭টি খাতে করছাড় দেয়া হয়।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০