নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড চকবাজার শাখার খেলাপি গ্রাহক ফয়জুন অ্যাসিটিলিন প্লান্ট, বিআর স্টিল মিলস, ফয়জুন অক্সিজেন প্লান্ট ও আহমদ মোস্তফা রি-রোলিং মিলস চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার মাদামবিবির হাটে অবস্থিত। মোট পাঁচ একর ৩০ শতাংশ ভূমির ওপর স্থাপিত চারটি কারখানার ভ্যালুয়েশন করেছিল ২১৫ কোটি টাকা। অথচ ঢাকা ব্যাংক চকবাজার (তৎকালীন মুরাদপুর) শাখা নিজেদের ভ্যালুয়েশন উপেক্ষা করে এই কারখানা ৪৩ কোটি ৭২ লাখ টাকায় স্থানীয় একটি শিল্প গ্রুপের কাছে নিলামে বিক্রির চেষ্টা করছেÑএমন অভিযোগ উঠেছে। এতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ প্রকৃত মূল্যপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে খেলাপি গ্রাহকও দায়মুক্তি মিলবে না।
ঢাকা ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ১ অক্টোবর ২০০৯ ঢাকা ব্যাংক স্মারকÑ ডিবিএল/আইবিবি/এজিআর/০৯/৭৪০ নম্বর অনুযায়ী মুজিবুর রহমান মিলন স্ক্রাব জাহাজের বিপরীতে ৮৫ কোটি টাকা ঋণপত্রের মাধ্যমে জাহাজ জামদানি করেন। এর বিপরীতে কোনো অর্থ পরিশোধ না করায় ঢাকা ব্যাংকের উল্লিখিত মিলনের ঋণের সমুদয় টাকা খেলাপি হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় মুজিবুর রহমান মিলন মিথ্যা এবং প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে মিজানুর রহমান শাহীনকে বোঝান যে ঢাকা ব্যাংক ৪০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ দিতে আগ্রহী, শাহীন এবং মিলনের যৌথ পুরোনো রি-রোলিং মিলকে সম্পূর্ণভাবে অটোমেটিক রি-রোলিং স্টিল মিল এবং কাঁচামাল আমদানি বাবদ সর্বমোট বিনিয়োগ দেবেন ৪০০ কোটি টাকা। এ সময়ে ঢাকা ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখা চট্টগ্রাম মিলনের পুরোনো ২০০৯ সালের ঋণে সমুদয় অর্থ শাহীনের যৌথ ব্যবসায় হস্তান্তর করে দেন, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালার সম্পূর্ণ বিপরীত। পরবর্তী সময় কাঁচামালের সংকট ও এত বড় ঋণের বোঝার বিপরীতে দুই বছর পর ২ আগস্ট ২০১২ শাহীন তার অন্যান্য ব্যবসায়ের আয় থেকে ঢাকা ব্যাংককে নগদ ট্রান্সফার এবং পে অর্ডারের মাধ্যমে ১৬ কোটি টাকা দেন। পাশাপাশি অতিরিক্ত ৫০ কোটি টাকা মূল্যের গাজীপুর, উত্তর খুলশী, জঙ্গল সেলিমপুর, ভাটিয়ারী ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কের সঙ্গে লাগানো জায়গা বন্ধক দেয়ার সাপেক্ষে এককভাবে ব্যবসা পরিচালনোর চেষ্টা করেন। তখন পাঁচ একর ৩০ শতকের ওপর স্থাপিত চারটি কারখানার ভ্যালুয়েশন করেছিল প্রায় ২১৫ কোটি টাকা। এসব কারখানার জায়গা ঢাকা ব্যাংকের অনুকূলে বন্ধক দেয়া হয়েছিল। এর এক মাস পর শাহীন জানতে পারেন পুরোটা ছিল প্রতারণা। অন্যদিকে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতায় শাহীন ব্যবসায় বিশাল অংকের লোকসান করেন এবং ঋণ পরিশোধের ব্যর্থ হন।
সাম্প্রতিক সময়ে অর্থ ঋণ আদালত খেলাপি পাওনা আদায়ে ঢাকা ব্যাংক চকবাজার শাখার খেলাপি গ্রাহক সীতাকুণ্ডের মাদামবিবির হাটে অবস্থিত ফয়জুন অ্যাসেটিলিন প্লান্ট, বিআর স্টিল মিলস, ফয়জুন অক্সিজেন প্লান্ট এবং আহমদ মোস্তফা রি-রোলিং মিলস কারখানার মোট পাঁচ একর ৩০ শতকের ওপর স্থাপিত চারটি কারখানার জমি নিলামে বিক্রয়ের উদ্যোগ নেয়। চট্টগ্রামের স্থানীয় একটি শিল্প গ্রুপ ৪৩ কোটি ৭২ লাখ টাকায় নিলামে কেনা আগ্রহ প্রকাশ করে। ঢাকা ব্যাংক চকবাজার শাখা নিজেদের ভ্যালুয়েশন উপেক্ষা করে চার কারখানা ৪৩ কোটি ৭২ লাখ টাকায় নিলামে বিক্রির আগ্রহ প্রকাশ করে। বিষয়টি নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে মিজানুর রহমান শাহীনের আইনজীবী রফিকুল আলম বলেন, ঢাকা ব্যাংক পাঁচ একর ৩০ শতকের ওপর স্থাপিত চারটি কারখানার জমির ভ্যালুয়েশন করেছিল ২১৫ কোটি টাকা। কিন্তু ঢাকা ব্যাংক নিজেদের ভ্যালুয়েশন উপেক্ষা করে এই কারখানা ৪৩ কোটি ৭২ লাখ টাকায় নিলামে বিক্রির উদ্যোগ নিচ্ছে; যা প্রকৃত দাম থেকে অনেক কম। আমাদের পর্যবেক্ষণে এসব জমির প্রকৃত দাম ১০০ থেকে ১২০ কোটি টাকা। ৮৫ কোটি টাকা ঋণ আদায়ের জন্য চারটি কারখানার উল্লিখিত জমি পানির ধরে নিলামে বিক্রয় হলে এতে এক দিকে ঢাকা ব্যাংক গ্রাহকের অনাদায়ী ঋণ আদায়ের বিশাল পরিমাণ অর্থ হারাবেন। অন্যদিকে গ্রাহকও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই প্রকৃত বাজারমূল্যে এসব সম্পত্তি বিক্রয় করা উচিত। বিষয়টি আমরা মাননীয় আদালতকে জানিয়েছি।
ঢাকা ব্যাংক চকবাজার শাখার ব্যবস্থাপক মীর কাশেম শেয়ার বিজকে বলেন, উল্লিখিত কারখানাগুলোর নামে ২০০৯ সালে ঋণ নেয়া হয়, যা ২০১৩ সালে খেলাপি হয়ে যায়। তখন ১০৯ কোটি টাকার আদায়ে অর্থঋণ আদালতে মামলা করা হয। পরে মোট খেলাপি পাওনা ২৩৯ কোটি টাকা আদায়ে অর্থঋণ জারি মামলাও করা। যখন কোম্পানিগুলোকে ঋণ দেয়া হয়, তখন তাদের চার কারখানার ভ্যালুয়েশন করা হয়েছিল প্রায় ২০০ টাকা। অথচ তখন স্টিল মিল বিক্রয়ের অফার পেয়েছিলেন ১০০ কোটি টাকা। কিন্তু তিনি ১২০ কোটি টাকা বিক্রয় করবেনÑএমন সিদ্ধান্তের কারণে আর বিক্রয় করতে পারেনি। এখন স্টিল মিলগুলো স্ক্র্যাব হয়ে গেছে। এসবে বাজারমূল্য নেই। আর অক্সিজেন কারখানা ২টি চালু আছে। এছাড়া পাঁচতলা একটি ভবন আছে। এসব কিছু বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৬৫ কোটি টাকা। আর এসব সম্পত্তি কেনার জন্য প্রথম নিলামে এসএল গ্রুপ এবং ২য় নিলামে টিকে গ্রুপ আগ্রহ প্রকাশ করেন। এর মধ্যে সম্ভাব্য ক্রেতা ৫০-৫৫ কোটি টাকা পর্যন্ত দর দিয়েছেন। এগুলো বিক্রয় হলে আমাদের লোকসান কিছুটা কমবে। এর জন্য একাধিক বড় বড় প্রতিষ্ঠান ও শিল্প গ্রুপের কাছে গিয়েছি।
ঋণ দেয়ার সময় ২০০ কোটি আর এখন ৫০ কোটি ভ্যালুয়েশনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তখন কারখানার যন্ত্রপাতি সচল ছিল। কিন্তু যন্ত্রপাতিগুলো এখন স্ক্র্যাব। তাই এর বাজারমূল্য কমেছে। এ বিষয়ে মাননীয় আদালতও জানতে চাইতে পারেন। আর আদালতের অনুমতি নিয়ে বিক্রয় হতে পারে।