নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন গত বছরের তুলনায় বেড়েছে। কিন্তু ২১টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের এডিপি বাস্তবায়ন হার পাঁচ শতাংশেরও নিচে। এর মধ্যে দু-একটির বাস্তবায়ন শূন্য বা শূন্য শতাংশের কাছাকাছি।
সম্প্রতি সেপ্টেম্বর মাসের বার্ষিক উন্নয়ন অগ্রগতি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে এডিপি বাস্তবায়নের হার ৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ। গত পাঁচ অর্থবছরের মধ্যে প্রথম প্রান্তিকে এটি সর্বোচ্চ বাস্তবায়ন। গত অর্থবছরের একই সময়ে এটি বাস্তবায়নের হার ছিল ৮ দশমিক ২৬ শতাংশ। তবে কিছু মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এডিপি বাস্তবায়নে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। এক্ষেত্রে অর্থ সাশ্রয়ের লক্ষ্যে সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতি ও বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর অদক্ষতা প্রধান ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
আইএমইডির হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, বেশ কিছু মন্ত্রণালয় ও বিভাগের এডিপি বাস্তবায়নের হার সন্তোষজনক হলেও প্রায় ২১টি মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার বাস্তবায়ন হার ৫ শতাংশের নিচে। এসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের সংখ্যা ২১৩টি। পিছিয়ে থাকা সংস্থাগুলোর মধ্যে জননিরাপত্তা বিভাগ, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এডিপি বাস্তবায়ন হার শূন্য।
এর মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ৭ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ১০১ কোটি ৪১ লাখ টাকা। এ মন্ত্রণালয়ের অধীনের প্রকল্পগুলো হলো পাকিস্তানের ইসলামাবাদে চ্যান্সারি কমপ্লেক্স নির্মাণ, বন্দরসেরি বেগওয়ান বাংলাদেশ চ্যান্সারি কমপ্লেক্স ও হাইকমিশনারের ভবন নির্মাণ, ভুটানে বাংলাদেশ চ্যান্সারি কমপ্লেক্স নির্মাণ, জার্মানিতে বাংলাদেশ চ্যান্সারি কমপ্লেক্স নির্মাণ, সৌদি আরবের রিয়াদে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ভবন নির্মাণ এবং সৌদি আরবের জেদ্দায় চ্যান্সারি কমপ্লেক্স ও অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরায় বাংলাদেশ চ্যান্সারি ভবন নির্মাণ প্রকল্প। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি প্রকল্পের কাজ শুরু করতে পারেনি এখনও।
এছাড়া যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ১৪ প্রকল্পের জন্য এ বছর বরাদ্দ রয়েছে ৩০২ কোটি টাকা। তিন মাস পেরিয়ে গেলেও এ মন্ত্রণালয় একটি টাকাও খরচ করতে পারেনি। এর মধ্যে বিকেএসপির আওতায় চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে ক্রীড়া স্কুল প্রতিষ্ঠার তৃতীয় সংশোধিত প্রকল্প, বিকেএসপির শুটিং জোনের আধুনিকায়ন, ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের আধুনিকায়ন, পাবনার শেখ আমিনউদ্দিন স্টেডিয়ামের আধুনিকায়ন ও সুইমিংপুল নির্মাণ, কুষ্টিয়ার শেখ কামাল স্টেডিয়ামের অধিকতর উন্নয়নসহ মোট ১৪টি প্রকল্পে এক টাকাও খরচ করেনি এ মন্ত্রণালয়।
অন্যদিকে জননিরাপত্তা বিভাগের অধীনে থাকা ১৮টি প্রকল্পের জন্য এ বছর বরাদ্দ ১ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা। এ প্রকল্পগুলোর অধীনে তিন মাসে এক টাকাও খরচ করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট বিভাগ। এর মধ্যে ইউনিসেপের অর্থায়নে চাইল্ড প্রটেকশন অ্যান্ড মনিটরিংয়ের প্রথম সংশোধিত প্রকল্প, বাংলাদেশ পুলিশের ১৩টি প্রকল্প, যেমনÑপুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ, সন্ত্রাস দমন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ প্রতিরোধ কেন্দ্র নির্মাণ, হাইওয়ে পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধি, র্যাব ফোর্সেসের আভিযানিক সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ মোট ১৮ প্রকল্পে এ তিন মাসে এক টাকাও খরচ হয়নি জননিরাপত্তা বিভাগের।
আইএমইডির হালনাগাদ তথ্যে আরও দেখা যায়, বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ১৪ প্রকল্পের জন্য ৬৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও এ মন্ত্রণালয় তিন মাসে বরাদ্দের ১
শতাংশও খরচ করতে পারেনি। তাদের বাস্তবায়নের হার দশমিক ১০ শতাংশ। অর্থাৎ মাত্র ৬১ লাখ টাকা খরচ করেছে তারা।
অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের ৪টি প্রকল্পে বরাদ্দ ৩৬৩ কোটি টাকা। প্রথম প্রান্তিকে এ বিভাগেরও খরচ হয়েছে মাত্র দশমিক ১৫ শতাংশ। মাত্র ৫৩ লাখ টাকা খরচ করতে পেরেছে এ বিভাগ। দুর্নীতি দমন কমিশনের বরাদ্দ ১৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা, খরচ হয়েছে মাত্র ৩ লাখ টাকা অর্থাৎ মোট বরাদ্দের দশমিক ১৭ শতাংশ খরচ করতে পেরেছে প্রতিষ্ঠানটি। একই অবস্থা বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের, ১টি প্রকল্পের জন্য ৩৬ কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও খরচ হয়েছে মাত্র ১০ লাখ টাকা। অর্থাৎ দশমিক ২৭ শতাংশ খরচ করেছে এ প্রতিষ্ঠান। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ১৪ প্রকল্পে বরাদ্দ ৬৩০ কোটি টাকা, খরচ হয়েছে ৬১ লাখ টাকা, বরাদ্দের দশমিক ১০ শতাংশ খরচ করেছে এ প্রতিষ্ঠানটি।
এডিপির হালনাগাদ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এ অর্থবছর মোট ১ হাজার ৪৯৬টি প্রকল্প এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত আছে। এ প্রকল্পগুলোর জন্য বরাদ্দ অর্থ খরচে উন্নতি হয়েছে অন্য বছরের তুলনায়। একক মাস হিসেবে সেপ্টেম্বরে খরচ হয়েছে মাত্র ৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ, আগের বছর একই সময় যা ছিল ৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ। প্রথম প্রান্তিকে মোট খরচ হয়েছে ২৪ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা, শুধু সেপ্টেম্বরে খরচ ১৪ হাজার ৩০৪ কোটি টাকা। এ বছর এডিপিতে মোট বরাদ্দ ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটির বেশি।