Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 9:36 pm

২১ মাস আগের অবস্থানে ডিএসইর লেনদেন

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: পতনের ধাক্কায় লেনদেন খরায় ভুগছে পুঁজিবাজার। বর্তমানে ডিএসইতে লেনদেন ৩০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকার ঘরে ঘুরপাক খাচ্ছে। কালেভদ্রে দু-এক দিন লেনদেন বেশি হলেও তা স্থায়ী হচ্ছে না। ১০ মাস ধরে ডিএসইতে এক হাজার কোটি টাকা লেনদেন হতে দেখা যায়নি। গতকাল লেনদেন নেমে গেছে ৩০০ কোটি টাকার নিচে।

গতকাল ডিএসইতে মোট ২৩৯ কোটি টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়, যা গত ২১ মাস বা ৪১৭ দিনের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে ২০১৮ সালের ২৫ মার্চ ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ২২৪ কোটি টাকা। ওই দিনের পর গতকাল ডিএসইতে সবচেয়ে কম লেনদেন হয়।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, চলতি বছরের সর্বমোট ১২ কার্যদিবস ডিএসইতে এক হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়। সর্বশেষ ৩০ জানুয়ারি ডিএসইতে লেনদেন হতে দেখা যায় এক হাজার ২৪ কোটি টাকা। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর চলতি বছরের শুরুতে পুঁজিবাজার কিছুটা চাঙা হলে বাজারে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়, কিন্তু এই পরিস্থিতি বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। এরপর আবারও পতনের ধারায় ফিরে যায় পুঁজিবাজার। কমে তালিকাভুক্ত অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারদর। পাশাপাশি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচকের পাশাপাশি বাজার মূলধনও আশঙ্কাজনকহারে কমে যায়। ফলে লেনদেনও তলানিতে নেমে যায়।

এদিকে গতকালও ডিএসইতে সূচক হ্রাস পেতে দেখা গেছে। এদিন তিন শতাংশ কমে সূচকের অবস্থান হয় চার হাজার ৩৯০ পয়েন্টে। সংশ্লিষ্টদের মতে, বর্তমান বাজারের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ তলানিতে নেমেছে। পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে বেরিয়ে যাচ্ছে। এর প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ছে বাজারে। আর এতে দিন দিন আস্থাহীনতা বাড়ছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের। ফলে পুঁজিবাজারও স্বরূপে ফিরতে পারছে না।

আলাপকালে বাজারসংশ্লিষ্টরা জানান, ডিএসইতে গড়ে প্রতিদিন দেড় হাজার থেকে দুই হাজার কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হওয়া উচিত। কিন্তু বাজার সামান্য ঘুরে দাঁড়ালেও হাজার কোটির টাকার ওপরে লেনদেন চোখে পড়ে না। তাদের মতে, ডিএসইতে এখন যে পরিমাণ প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত রয়েছে, তাতে এক হাজার থেকে দেড় হাজার কোটি টাকা লেনদেন খুবই স্বাভাবিক।

এ প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, সাম্প্রতিক বাজার পতনের কোনো ব্যাখ্যা আমার কাছে নেই। বাজারে তারল্য সংকট রয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বাজারে না থাকলে এই সমস্যা দেখা দেয়। অন্যদিকে বিদেশিরাও শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। এটাও বাজারের জন্য ভালো খবর নয়। তবে আমি বলব, বিনিয়োগকারীদের হতাশা থেকেই এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। লেনদেন কমে যাওয়ার প্রধান কারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা। বর্তমানে তারাও বাজার থেকে দূরে রয়েছে, যে কারণে এমন হয়েছে বাজার পরিস্থিতি।’

বর্তমান বাজার পরিস্থিতি নিয়ে তারা বলেন, পুঁজিবাজারে লেনদেন হ্রাস-বৃদ্ধি একটি স্বাভাবিক ঘটনা, কিন্তু লেনদেন হতে হবে সন্তোষজনক। এ বাজারে যে লেনদেন হচ্ছে তা মোটেও সন্তোষজনক নয়। এটা দেখে বোঝা যায়, বাজারে তারল্য সংকট চলছে। এটা দূর করতে না পারলে বাজার পরিস্থিতি ভালো হবে না বলে মন্তব্য করেন তারা। তবে কেউ কেউ বাজারের এ পরিস্থিতির কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি।

ডিবিএ’র সভাপতি শাকিল রিজভী বলেন, ‘আমাদের মার্কেটের যে আকার, সে অনুযায়ী লেনদেন হয় না। এই মার্কেটে স্বাভাবিক লেনদেন হলে এক হাজার থেকে দেড় হাজার কোটি টাকা লেনদেন হওয়া উচিত। বিভিন্ন কারণে বিনিয়োগকারীদের আস্থার লেভেলটা আরও নিচে নেমে যাচ্ছে, বাজারে যার প্রভাব পড়ছে।’

একই প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বাজার উত্থান-পতনে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনাবেচা তেমন ভূমিকা রাখে না। এক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করেন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। তারা শেয়ার কেনাবেচা করলেই শুধু বাজারের সার্বিক চেহারা বদলে যায়। বর্তমানে সেই পরিস্থিতি চলছে। তিনি বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি চক্র পুঁজিবাজার থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। এখন তারা বাজারে সক্রিয় নেই, যার প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারে।