২২টি দলের প্রায় সব প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে কোনো রাজনৈতিক দলের কোনো প্রার্থী নির্বাচনে জয়ী হতে পারেননি। যে চারটি দল নির্বাচনে জিতেছে, আওয়ামী লীগ ওই আসনগুলো তাদের ছেড়ে দিয়েছিল। তাদের কেউ কেউ নৌকা প্রতীক নিয়ে, আবার কেউ আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী ২৭টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২২টি রাজনৈতিক দল কোনো আসন পায়নি। তাদের প্রায় সব প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে তিন কিংস পার্টির (তৃণমূল বিএনপি, বিএনএফ ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি) কোনো প্রার্থীই জামানত রক্ষা করতে পারেননি। প্রাপ্ত হিসাবে দেখা গেছে, জাতীয় পার্টির ২৫০ প্রার্থীও জামানত হারিয়েছেন। জাপার যে ১১ জন বিজয়ী হয়েছেন, তার সবগুলোই আওয়ামী লীগের ছেড়ে দেয়া আসন। আওয়ামী লীগ করুণা করেনি, এমন কোনো আসনে দলটির কোনো প্রার্থী জয়ী হতে পারেননি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৬৬ জন, জাতীয় পার্টি ২৬৫ জন, জাকের পার্টি ২১ জন তৃণমূল বিএনপি ১৩৫ জন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি ১২২ জন, বাংলাদেশ কংগ্রেস ৯৬ জন, জাসদ ৬৬ জন, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি ৭৯ জন, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট ৬৩ জন, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএ) ৪৫ জন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) ৫৬ জন, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন ৩৮ জন, ইসলামী ঐক্যজোট ৪২ জন, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ ৩৯ জন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ৩৭ জন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ৩০ জন, ওয়ার্কার্স পার্টি ২৬ জন, গণফ্রন্ট ২১ জন, জাতীয় পার্টি (জেপি) ১৩ জন, কল্যাণ পার্টি ১৬ জন, খেলাফত আন্দোলন ১১ জন, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ ১০ জন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি পাঁচজন, গণফোরাম ৯ জন, সাম্যবাদী দল চারজন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) পাঁচজন, মুসলিম লীগ (বিএমএল) চারজনকে প্রার্থী হিসেবে দেয়। আওয়ামী লীগ বাদে যে চারটি দল নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছে, সেগুলো হলোÑজাতীয় পার্টি ১১টি, জাসদ একটি, ওয়ার্কাস পার্টি একটি এবং কল্যাণ পার্টি একটি।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ২৬টি আসনে ছাড় পেয়েছিল জাতীয় পার্টি। এই ২৬ আসনের মধ্যে মাত্র ১১টিতে জিততে পেরেছেন জাপার প্রার্থীরা। ২৬৫টি আসনে দলটির প্রার্থী থাকলেও সমঝোতার বাইরে কোনো প্রার্থী জিততে পারেননি। উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে জাপার চেয়ারম্যান জিএম কাদের, মহাসচিব মো. মুজিবুল হক, কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার জয়ী হয়েছেন। চরম দর কষাকষি করে আওয়ামী লীগ থেকে নেয়া ঢাকার একমাত্র আসনে (ঢাকা-১৮) চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের স্ত্রী ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শেরীফা কাদের জামানত হারিয়েছেন। তিনি হেরেছেন আওয়ামী লীগের অলিখিত  প্রার্থী খসরু চৌধুরীর কাছে।

২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠিত হয় ১৪ দলীয় জোট। এই জোটকে আওয়ামী লীগের আদর্শিক জোট হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে ঐক্যের বন্ধনে থাকা ১৪ দলীয় জোটকে ছয়টি আসনে নৌকা দেয় আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে তাদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগই আবার অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী দেয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ নেন। এর ফলে ছয়টি আসনের মধ্যে চারটিতেই আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে হেরে গেছেন ১৪  দলীয় জোটের শরিকেরা। জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা ও জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু হেরেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে। তারা দীর্ঘকাল ধরে আওয়ামী লীগকে সহায়তা দিয়ে আসছিলেন।

১৪ দলীয় জোটের শরিকদের চাওয়া ছিল ভাগে পাওয়া আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী সরিয়ে দেয়া। কিন্তু আওয়ামী লীগ শরিকদের সেই দাবি আমলে নেয়নি। ফলে ভাগে পাওয়া ছয়টি আসনে জেতার বিষয়ে অনেকটাই অনিশ্চয়তায় ছিলেন শরিক দলের প্রার্থীরা। শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গে হেরে তাদের সেই আশঙ্কা সত্য প্রমাণিত হলো।

এই নির্বাচনে তিন কিংস পার্টির আবির্ভাব ঘটেছিল। তাদের মধ্য বিএনএফ অন্য জোটগুলোকে সঙ্গে নিয়ে সরকার গঠনের প্রত্যাশার কথাও জানিয়েছিল। আর তৃণমূল বিএনপি সংসদের প্রধান বিরোধী দল হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। এই দুটি দলের সব প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। এর মধ্যে তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকার পেয়েছেন মাত্র তিন হাজার ১৯০ ভোট। আর চেয়ারম্যন শমসের মোবিন চৌধুরী পেয়েছেন ১০ হাজার ভোট। অপর কিংস পার্টি সুপ্রিম পার্টিরও সব প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন। পার্টির চেয়ারম্যান সাইফুদ্দিন আহমদ মাইজভাণ্ডারী পেয়েছেন  মাত্র তিন হাজার ১৩৮ ভোট।

আন্দোলনের কাফেলা ছেড়ে নির্বাচনে যোগ দিয়েছিল কল্যাণ পার্টি। তাদের চেয়ারম্যান ছাড়া সব প্রার্থীও জামানত খুইয়েছেন। দলটি চেয়ারম্যান জেনারেল (অব.) মুহাম্মদ ইব্রাহিম আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়ে নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন। তার পক্ষে বিশেষ সংস্থা কাজ করেছে বলে ইসিতে অভিযোগ দাখিল হয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০