Print Date & Time : 28 June 2025 Saturday 10:44 am

২২ বছরের পুরোনো জাহাজ আমদানি করা যাবে

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ হিসেবে গভীর সমুদ্রে চলাচলের জন্য পুরোনো জাহাজ আমদানির শর্ত শিথিল করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এখন থেকে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) অব্যাহতি সুবিধায় ২২ বছরের পুরোনো জাহাজ আমদানি করা যাবে। গত ১৯ জুন এনবিআর এ-সংক্রান্ত আদেশ জারি করে। আগে ভ্যাটমুক্ত সুবিধায় সর্বোচ্চ ১৫ বছরের পুরোনো জাহাজ আমদানির অনুমতি ছিল। এ আদেশের মাধ্যমে পুরোনো জাহাজ আমদানির ক্ষেত্রে জটিলতা নিরসন হলো।
আদেশে বলা হয়েছে, ২২ বছর পর্যন্ত পুরোনো ন্যূনতম পাঁচ হাজার টনের সমুদ্রগামী জাহাজ আমদানিতে সব ধরনের মূসক থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো। তবে এক্ষেত্রে সমুদ্রে বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ পরিচালনায় কমপক্ষে ৭০ শতাংশ বাংলাদেশি নাগরিক নিয়োগ দেওয়াসহ কিছু শর্ত পালন করতে হবে।
আমদানির শর্ত অনুযায়ী, বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ হিসেবে নিবন্ধন করতে হবে। ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের যেসব আন্তর্জাতিক কনভেনশনে বাংলাদেশ সই করেছে সেসব নিয়ম মেনে জাহাজ আমদানি করতে হবে। আগের আদেশে ১৫ বছরের পুরোনো জাহাজ আমদানিতে সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আগের আদেশ সংশোধন করে আমদানির ১৫ বছরের জায়গায় ২২ বছরের জাহাজ আমদানির সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে পাঁচ বছর বাংলাদেশের পতাকাবাহী সমুদ্রগামী জাহাজ হিসেবে পণ্য পরিবহন করতে হবে। পাঁচ বছরের আগে তা বিক্রি বা হস্তান্তর করা যাবে না বা অন্য কাজে ব্যবহার করা যাবে না। এ সময়ের মধ্যে তা অন্য কাজে ব্যবহার করলে বা বিক্রি করলে আমদানির সময় অব্যাহতি পাওয়া প্রযোজ্য মূসক পরিশোধ করতে হবে। প্রতি এক বছর অন্তর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের তথ্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের মাধ্যমে এনবিআরকে প্রত্যয়নপত্র দিয়ে জানাতে হবে।
শর্তে আরও বলা হয়, জাহাজ আমদানির পর তেল পরিবহনে সমুদ্র দূষণ রোধে এমএআরপিওএল কনভেনশন অনুযায়ী জাহাজ আমদানি করতে হবে। জাহাজে কর্মরত সব পর্যায়ের জনবলের কমপক্ষে ৭০ শতাংশ বাংলাদেশি নাগরিক হতে হবে। শুধু তাই নয়, আমদানিকারকরা এসব শর্ত পালন করা হবে মর্মে ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে অঙ্গীকারনামা এনবিআরকে দিতে হবে। এই আদেশের অধীন জাহাজ আমদানির এক বছর পর আমদানিকারকরা শর্তাবলি পালন করছে কি না, তা তদন্ত করতে পারবে এনবিআর। তদন্তে শর্ত পরিপালন করেনি প্রতিবেদনে এমন তথ্য পেলে মূসক আমদানিকারকদের কাছ থেকে মূসক আদায় করবে এনবিআর।
বাংলাদেশি জাহাজশিল্পকে এগিয়ে নেওয়া ও স্থানীয় শিল্পকে প্রণোদনা দিতে এনবিআর এ মূসক অব্যাহতি দিয়েছে। এ খাতের আমদানিকারকরা দীর্ঘদিন শর্ত শিথিল করতে এনবিআরকে অনুরোধ জানিয়ে আসছে। যদিও এসব শর্ত পালন করে জাহাজ আমদানি করা কঠিন বলে এনবিআরকে জানিয়েছেন আমদানিকারকরা।
এর আগে গত ১৪ মার্চ এ-সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছিল এনবিআর। সেখানে ১৫ বছরের বেশি পুরোনো জাহাজ আমদানি করা যাবে না বলে শর্ত দেওয়া হয়েছিল। পরে এ শর্তের বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যানসহ সরকারের বিভিন্ন দফতরে চিঠি দিয়েছিল জাহাজ আমদানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ ওশান গোয়িং শিপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিওজিএসওএ)। তারা ২৫ বছরের পুরোনো জাহাজ আমদানির সুযোগ চেয়েছিলেন। কিন্তু এনবিআরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিলÑযেসব জাহাজ আমদানি করা হবে সেগুলোর আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আয়ুষ্কাল ২১ থেকে ২২ বছর। তাই ২৫ বছরের পুরোনো জাহাজ আমদানির সুযোগ দিলে সেগুলো স্ক্র্যাপ হিসেবে ব্যবহƒত হতে পারে। তবে শেষ পর্যন্ত আমদানিকারকদের দাবির মুখে ১৫ বছরের পরিবর্তে ২২ বছরের পুরোনো জাহাজ আমদানির অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনবিআর। কিন্তু মার্চেল আদেশে উল্লেখ করা ছয়টি শর্তের মধ্যে অন্য শর্তগুলো বহাল থাকবে।