২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত মায়ের কাছেই থাকবে জাপানী দুই শিশু

আদালত প্রতিবেদক: আগামী ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত মা নাকানো এরিকোর কাছেই থাকবে জাপানি দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা। এসময় বারিধারার হোটেল ইসকর্ট প্যালেসে থাকবেন তারা। তবে প্রতিদিন সকাল ৯ থেকে রাত ৯টার মধ্যে যেকোন সময় সন্তানদের সঙ্গে তাদের বাংলাদেশি বাবা ইমরান শরীফ দেখা করতে পারবেন। এ সময়ের মধ্যে শিশুদের মাকে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধ নিয়মিত আপিল দায়ের করতে। আগামী ২৪ জানুয়ারি পরবর্তী আদেশ দেবেন আপিল বিভাগ।

সোমবার (৩ জানুয়ারি) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।

এর আগে, গত ২১ নভেম্বর জাপানি দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা বাংলাদেশে তাদের বাবা ইমরান শরীফের কাছে থাকবে বলে রায় দেন হাইকোর্ট।

পরে গত ৫ ডিসেম্বর দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে নিজের জিম্মায় নিতে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন জাপানি মা নাকানো এরিকো।

ওই বেঞ্চ ১২ ডিসেম্বর সকালে দুই দিনের জন্য শিশু দুটিকে মায়ের কাছে দিতে বলেছিল। ওই দিন রাত ১০টার মধ্যে মায়ের কাছে দেয়ার কথা থাকলেও সেই নির্দেশ মানেননি বাবা ইমরান শরীফ।

এই নির্দেশনা না মানায় পরের দিন ইমরান শরীফের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনেন মা এরিকো। দুই শিশুসহ বাবাকে ডেকে পাঠায় আপিল বিভাগ।

নির্দেশনা অনুযায়ী মায়ের কাছে না দেয়ায় বাবার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে আপিল বিভাগ। পরে ১৫ ডিসেম্বর আপিল বিভাগ আদেশে বলেন, দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা আগামী ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত জাপানি মা নাকানো এরিকোর কাছে থাকবে। তবে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯ টার মধ্যে যেকোন সময় বাবা ইমরান শরীফ শিশুদের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন। সন্তানদের স্কুলে যাওয়া এবং পড়াশোনা চলবে। আদালতের অনুমতি ছাড়া সন্তানদের নিয়ে দেশের বাইরে যাওয়া যাবে না।

আদালতে জাপানি মায়ের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম। তাকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। বাংলাদেশি বাবা ইমরান শরীফের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম। তাকে সহযোগিতা করেন ব্যারিস্টার মারুফুল ইসলাম।

২০০৮ সালের ১১ জুলাই জাপানের এরিকো ও বাংলাদেশি আমেরিকান ইমরান শরীফ জাপানি আইন অনুযায়ী বিয়ে করেন। বিয়ের পর তারা টোকিওতে বসবাস শুরু করেন। ১২ বছরের সংসারে তারা তিন কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। তারা হলো জেসমিন মালিকা, লাইলা লিনা ও সানিয়া হেনা।

এরিকো পেশায় একজন চিকিৎসক। মালিকা, লিনা ও হেনা টোকিওর চফো সিটিতে আমেরিকান স্কুল ইন জাপানের (এএসআইজে) শিক্ষার্থী ছিল।

চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি ইমরান শরীফ বিয়ে বিচ্ছেদের (ডিভোর্স) আবেদন করেন। ২১ জানুয়ারি ইমরান এএসআইজে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে তার মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন।

স্কুল কর্তৃপক্ষ এরিকোর সম্মতি না থাকায় তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। পরে ইমরান তার মেয়ে জেসমিন ও লিনাকে স্কুলবাসে বাড়ি ফেরার পথে বাসস্টপ থেকে অন্য একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান।

এরপর ২৮ জানুয়ারি এরিকো টোকিওর পারিবারিক আদালতে তার সন্তানদের জিম্মার অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ চেয়ে মামলা করেন। আদালত ৭, ১১ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি শিশুদের সঙ্গে পারিবারিকভাবে সাক্ষাতের আদেশ দেন। ইমরান আদালতের আদেশ ভঙ্গ করে মাত্র একবার মায়ের সঙ্গে দুই মেয়ের সাক্ষাতের সুযোগ দেন।

পরে ২১ ফেব্রুয়ারি ইমরান তার দুই মেয়ে জেসমিন ও লাইলাকে নিয়ে দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন।

পরে গত ১৯ আগস্ট দুই কন্যাসন্তানকে ফিরে পেতে বাংলাদেশে এসে হাইকোর্টে রিট করেন জাপানি নারী এরিকো।

রিটের দীর্ঘ শুনানি শেষে গত ২১ নভেম্বর রায় দেয় হাইকোর্ট। রায়ে বলা হয়, দুই কন্যাকে বাবার কাছে রেখে মা বছরে তিনবার ১০ দিন করে দেখা করতে পারবেন। আর এ জন্য মায়ের সব খরচ বাবাকে বহন করতে হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০