Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 6:02 pm

২৫ শতাংশ বাড়ল তেল-চিনি-ময়দার মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব

আয়নাল হোসেন: রাজধানীর পুরান ঢাকার আজিমপুর এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম গত শনিবার রাতে ছাপরা মসজিদ রোডের মেসার্স মালেক বেকারি অ্যান্ড কনফেকশনারি থেকে একটি পাউরুটি কিনে ১০০ টাকার নোট দেন। দোকানি তাকে ২০ টাকা ফেরত দেন। তিনদিন আগেও তিনি ওই রুটি ৭০ টাকায় কিনেছেন। দোকানিকে জিজ্ঞাসা করতেই বলা হয়, সমিতি থেকে নতুন মূল্য ধরা হয়েছে। এতে আমাদের কিছু করার নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাজারে সব ধরনের বেকারি পণ্যের মূল্য ২০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। উৎপাদনকারীরা বলছেন, বাজারে তেল, চিনি, ময়দা ও ডালডাসহ বেকারি পণ্য তৈরির উপকরণের মূল্য বৃদ্ধির প্রভাবে তারা দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন। গত শনিবার থেকে এই মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। যদিও আগে দু-একটি পণ্যের দাম বাড়লেও করোনাকালে হঠাৎ বেশ কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ায় ভাত-রুটি ছাড়া চায়ের সঙ্গে পাউরুটি-বিস্কুট নিত্যসঙ্গী হয়ে পড়েছে। রাজধানী থেকে শুরু করে গ্রামাঞ্চলেও প্রায় প্রতিটি ঘরেই আজ বেকারি পণ্য ব্যবহার হচ্ছে। অর্থাৎ উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও নিন্মবিত্ত মানুষও বেকারি পণ্য ব্যবহার করছেন। হঠাৎ একসঙ্গে ৪০টি বেকারি পণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে নিম্ন ও মধ্যবিত্তের বাড়তি চাপ পড়েছে।

রাজধানীসহ সারা দেশে বিস্কুট, কেক, পাউরুটি, বনরুটি ও চানাচুরসহ ৪০টি পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে। গত ২৩ জানুয়ারি এই মূল্য বৃদ্ধি করেছে বাংলাদেশ ব্রেড, বিস্কুট ও কনফেকশনারি প্রস্ততকারক সমিতি। এই মূল্য বৃদ্ধির কারণে ভোক্তাদের ঘাড়ে বাড়তি চাপ পড়েছে। এতে মধ্যবিত্ত শ্রেণির লোকজনের বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে। করোনাভাইরাসের কারণে দেশের অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন চাকরি হারিয়েছেন। এর মধ্যে বাজারে চাল, ডাল, আটা, ময়দাসহ নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধিতে ভোক্তাদের নাভিশ্বাস উঠেছে।

বাংলাদেশ ব্রেড বিস্কুট ও কনফেকশনারি প্রস্তুতকারক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, আগে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি স্পেশাল ড্রাই কেকের মূল্য ছিল কমিশনসহ ২১০ টাকা। বর্তমানে তা বাড়িয়ে ২৬০ টাকা করা হয়েছে। ১৮০ টাকার নরমাল ড্রাই কেকের দাম ২২০ টাকা করা হয়েছে। আগে প্রতি কেজি মুড়ি টোস্টের দাম ছিল কমিশনসহ ১৬০ টাকা। বর্তমানে তা বাড়িয়ে ২০০ টাকা করা হয়েছে। ১৫০ টাকার নরমাল টোস্ট ১৮০ টাকা, ১৬৫ টাকার নরমাল বিস্কুট ২০০ টাকা, ২০০ টাকার স্পেশাল বিস্কুট ২৪০ টাকা, ৬০ টাকার ৪০০ গ্রামের প্যাকেট টোস্ট ৮০ টাকা, ৭৫ টাকার ৫০০ গ্রামের প্যাকেট টোস্ট ৯০ টাকা, ৮৩ টাকার প্যাকেট টোস্ট ১০০ টাকা, ৮৫ টাকার কেক ১০০ টাকা, ৮৫ টাকার ওভালটিন কেক ১০০ টাকা, ১০ পিস লাড্ডু ৭০ টাকা থেকে বেড়ে ৮০ টাকা, ১৪০ টাকার চানাচুর ১৭০ টাকা, ১০ টাকার পেটিস ১২ টাকা, ৫ টাকার ছোট বন ৬ টাকা, ২১ টাকার ১৭৫ গ্রামের পাউরুটি ২৫ টাকা, ২৬ টাকার ২২৫ গ্রামের পাউরুটি ৩০ টাকা, ৩০ টাকার ৩০০ গ্রামের পাউরুটি ৩৫ টাকা, ৩৫ টাকার ৩৫০ গ্রামের পাউরুটি ৪০ টাকা, ৪০ টাকার ৪০০ গ্রামের পাউরুটি ৪৫ টাকা, ৪৮ টাকার ৫০০ গ্রামের পাউরুটি ৫৫ টাকা, ৫৩ টাকার ৫৫০ গ্রামের পাউরুটি ৬০ টাকা, ৬৩ টাকার পাউরুটি ৭৫ টাকা, ৮৫ টাকার পাউরুটি ১০০ টাকা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্রেড বিস্কুট ও কনফেকশনারি প্রস্তুতকারক সমিতির ভাষ্যমতে, এক হাজার ৪০০ টাকার ময়দা দুই হাজার ৫০০ টাকা, ১২ হাজার টাকার এক ড্রাম পাম তেল ২০ হাজার টাকা, এক হাজার ৪০০ টাকার ডালডা দুই হাজার টাকা, দুই হাজার ৬০০ টাকার চিনি তিন হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর এ কারণে তারা দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন।

বাংলাদেশ ব্রেড বিস্কুট ও কনফেকশনারি প্রস্তুতকারক সমিতির সভাপতি জালাল উদ্দিন আহমেদ শেয়ার বিজকে বলেন, বাজারে তেল, চিনি, ময়দাসহ বেকারি পণ্য তৈরির প্রতিটি পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিক বেড়েছে। তাদের হিসাব মতে, এসব পণ্যের মূল্য ৬৭ শতাংশ বেড়েছে। ভোক্তাদের কথা বিবেচনায় নিয়ে তারা ২০ থেকে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ মূল্য বাড়িয়েছেন বলে জানান।