Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 5:05 am

২৬ জুন সকাল থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে গাড়ি চলবে

নিজস্ব প্রতিবেদক: বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু উদ্বোধন করা হবে আগামী ২৫ জুন। তবে ওইদিন সাধারণ মানুষের জন্য উম্মুক্ত থাকবে সেতুটি। পরের দিন সকাল ৬টা থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে গাড়ি চলাচল শুরু হবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল এ তথ্য জানান। মাওয়ায় পদ্মা সেতু সার্ভিস এরিয়ায় পদ্মা সেতু উদ্বোধনের প্রস্তুতি উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, আগামী ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন। সকাল ১০টায় মাওয়ায় পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করা হবে। এরপর তিনি মাওয়া প্রান্তে আয়োজিত সুধী সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন। এ সমাবেশে দেশি-বিদেশি অতিথি, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী সেতু দিয়ে ওপারে যাবেন। সকাল ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার দিকে তিনি ওপারে যাবেন।

মন্ত্রী আরও বলেন, পদ্মা সেতু পার হতে সময় লাগবে ‘অনলি সিক্স মিনিট’। পদ্মা সেতু ওপারের মানুষের জন্যই। সেখানে লাখ লাখ মানুষের সমাগম ঘটবে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী সবার উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। আর ২৬ জুন সকাল ৬টা থেকে পদ্মা সেতুতে গাড়ি চলাচল শুরু করবে।

তিনি জানান, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস, শান্তিতে নোবেলবিজয়ী বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মুহম্মদ ইউনূস, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হবে। তবে অন্য কোনো দেশের প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপ্রধানকে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হবে না।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমন্ত্রণের প্রক্রিয়া প্রায় শেষ। আমন্ত্রণপত্র ছাপানো শেষ হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে কার্ড পাঠানো শুরু হবে। বিদেশি যাদের আমন্ত্রণ করা হবে, তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আমন্ত্রণ জানানো হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হবে, তারা সেগুলো তাদের মতো করে পাঠাবে। আর খালেদা জিয়াকে চিঠি দেয়া হবে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, পদ্মা সেতু এখন আর কোনো স্বপ্ন নয়, এটি দৃশ্যমান বাস্তব। এই সেতু শেখ হাসিনার স্বপ্নের সেতু। এই সেতু আমাদের সামর্থ্য-সক্ষমতার সেতু। এই সেতু একদিকে সম্মান ও মর্যাদার প্রতীক, অন্যদিকে আমাদের যে অপমান করা হয়েছিল, সেই অপমানের প্রতিশোধের প্রতীক।

মন্ত্রী আরও বলেন, ‘কানাডার আদালত রায় দিল পদ্মা সেতুতে কোনো দুর্নীতি হয়নি। নির্দোষ বলে কানাডার আদালত রায় দিল। বিশ্বব্যাংক ২০১২ সালে পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে সরে যায়। প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণের ঘোষণার পর এই সেতু করতে কত যে ঝুঁকি আমাদের নিতে হয়েছে… সবচেয়ে বেশি ত্যাগ শিকার করেছেন উভয় পাড়ের জনগণ। তাদের প্রতি ধন্যবাদ-কৃতজ্ঞতা জানাই। যতই সমালোচনা হয়েছে আমাদের মনোবল আরও দৃঢ় হয়েছে।’

পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে নাশকতার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন ওবায়দুল কাদের। সাম্প্রতিক বিভিন্ন অগ্নিকাণ্ডের পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র আছে কি নাÑজানতে চাইলে সাংবাদিকদের বলেন, এগুলো অন্তর্ঘাত হতে পারে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। গোয়েন্দাদের কাছে কিছু খবর আছে। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে অন্তর্ঘাতের আশঙ্কা আমাদের আগেও ছিল, এখনও আছে।

উদ্বোধনের দিন থেকেই পদ্মা সেতুর টোল আদায় ব্যবস্থাপনা শুরুতে অটোমেশন হচ্ছে না। প্রথমে ম্যানুয়ালি টোল আদায় চলবে। অটোমেশন পদ্ধতিটি হবে ইটিসি পদ্ধতি। এতে ওই কাউন্টার দিয়ে গাড়ি চলে যাবে, আর কার্ড থেকে অটো টোল কাটা হয়ে যাবে। তবে অটোমেশনের জন্য অন্তত ছয় মাস অপেক্ষা করতে হবে। অবশ্য ছয় মাস পরে অটোমেশন হলেও সেটা হবে আংশিক। সংবাদ সম্মেলনে সেতু সচিব মঞ্জুর হোসেন এ কথা বলেন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, ‘টোল আদায়ে ম্যানুয়াল ও অটোমেশন দুই পদ্ধতিই চলবে। প্রথমে একটি কাউন্টারে অটোমেশন হবে। পর্যায়ক্রমে অন্যগুলোয় করা হবে। তবে আমরা শুরুতে অটোমেশনে যাচ্ছি না। টোল আদায়ের যারা দায়িত্ব পেয়েছেন, তাদের ছয় মাস লাগবে। এরপর তারা একটি কাউন্টারে অটোমেশন চালু করবে। ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে নগদ টাকা প্রদান এবং ডেবিট/ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে টোল প্রদান করা যাবে।’

সেতুর নির্মাণ খরচ সরকারের কাছ থেকে লোন নিয়ে করা হয়েছে বলে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘৩০ বছরে সেতু বিভাগ সরকারকে ৩৬ হাজার কোটি টাকা প্রদান করবে। ১৪০টি কিস্তিতে এ ঋণ শোধ করতে হবে। এছাড়া নদীশাসনসহ সেতুর মেনটেইন খরচ রয়েছে।’

পদ্মা সেতু চালু হলে রাজধানীতে যানবাহনের চাপ পড়বে কি নাÑজানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে সংশয় ছিল। সেটা যখন আমরা করতে পেরেছি, এসব চাপও সহ্য করতে পারব।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, এমএম কামাল হোসেন, সংস্কৃতি সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, এমপি ইকবাল হোসেন অপু, আনোয়ার হোসেন, শাহাবুদ্দিন ফরাজী, নাহিম রাজ্জাক প্রমুখ।