Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 11:27 pm

২৭৮৮ কোটি টাকার নির্মাণব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৬২১৪ কোটিতে

ইসমাইল আলী: জয়দেবপুর থেকে চন্দ্রা, টাঙ্গাইল হয়ে এলেঙ্গা পর্যন্ত মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প নেওয়া হয় ২০১৩ সালের এপ্রিলে। ৭০ কিলোমিটার এ চার লেনের কাজ পাঁচ বছরের মধ্যে শেষ করার কথা ছিল। তবে সাত বছরে তিন মাসে প্রকল্পটির কাজ ৮০ শতাংশও হয়নি। যদিও চতুর্থ দফা প্রকল্পটির ব্যয় বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। অথচ সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী একটি প্রকল্প দুইবারের বেশি সংশোধনের সুযোগ নেই।

সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রস্তাবটি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রকল্পটির মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়ানোর প্রক্রিয়াও চলছে।

সূত্রমতে, জয়দেবপুর-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা চার লেন প্রকল্পের সর্বশেষ ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ছয় হাজার ২১৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের তহবিল থেকে দেওয়া হবে দুই হাজার ৭৯৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। আর প্রকল্প সহায়তা হিসাবে তিনটি সংস্থা ঋণ দিচ্ছে তিন হাজার ৪২০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ওএফআইডি) ও আবুধাবি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এডিএফডি) এ ঋণ দেবে।

জমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন খাতে ব্যয় বাড়ায় এবার ৬২১ কোটি ২৫ লাখ বা ১১ দশমিক ১১ শতাংশ ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। যদিও সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী কোনো প্রকল্প দুইবারের বেশি বৃদ্ধির সুযোগ নেই। তাই প্রকল্পটির ব্যয় বৃদ্ধি প্রস্তাবে এবারের সংশোধনকে দ্বিতীয় বিশেষ সংশোধন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রকল্পটিতে জমি অধিগ্রহণে ১৯৮২ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী ব্যয় ধরা হয়েছিল। এতে জমি অধিগ্রহণের ফলে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রিমিয়াম ধরা হয়েছিল ৫০ শতাংশ। তবে ২০১৭ সালে জমি অধিগ্রহণে নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়। এতে প্রিমিয়াম ২০০ শতাংশ করা হয়েছে। আর প্রকল্পটির জন্য ২০১৯ সালে অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এতে জমির মূল্য প্রদান ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন খাতে ব্যয় বেড়ে গেছে।

সূত্র জানায়, এর আগে প্রকল্পটির ভুল পরিকল্পনা সংশোধনের জন্য ২০১৮ সালে এক দফা ব্যয় বাড়ানো হয়েছিল। সে সময় ৬৬ দশমিক ২৩ শতাংশ বৃদ্ধির ফলে প্রকল্প ব্যয় দাঁড়িয়েছিল পাঁচ হাজার ৫৯৩ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল ছিল এক হাজার ৫২১ কোটি সাত লাখ টাকা। আর প্রকল্প সহায়তার পরিমাণ ছিল তিন হাজার ৪২০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ নতুন করে ব্যয় বৃদ্ধির পুরোটাই সরকারি তহবিল থেকে সরবরাহ করতে হবে।

ডিপিপির তথ্যমতে, প্রাথমিকভাবে প্রকল্পটির শুধু জয়দেবপুর থেকে কালিয়াকৈর পর্যন্ত প্রায় ১৯ কিলোমিটার দুই পাশে সার্ভিস লেন নির্মাণের কথা ছিল। আর কালিকাকৈর থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত অংশের এক পাশে সার্ভিস লেন নির্মাণের প্রস্তাব ছিল। পরে তা সংশোধন করে পুরো চার লেনের উভয় দিকেই সার্ভিস লেন নির্মাণের অংশ যুক্ত করা হয়। এতে জমি অধিগ্রহণ ও মহাসড়ক নির্মাণ ব্যয় বাড়ে। পাশাপাশি সাতটি ওভারপাস ও ১৩টি আন্ডারপাস নির্মাণ যুক্ত করা হয়। এছাড়া নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি মিলিয়ে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যায়।

যদিও প্রাথমিকভাবে প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৭৮৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে তিন সংস্থার ঋণ দেওয়ার কথা ছিল ১ হাজার ৮৩৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। আর সরকারি তহবিল থেকে দেওয়ার কথা ছিল ৯৪৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। তবে ছয় মাসের মধ্যে প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়। সে সময় প্রকল্পের মোট ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৬৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। জমি অধিগ্রহণের পরিমাণ বৃদ্ধির যুক্তিতে সে সময় প্রকল্প ব্যয় ২৭৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা বাড়ানো হয়েছিল।

এরপর ২০১৬ সালে জমির দাম বৃদ্ধির যুক্তিতে প্রকল্পটি আরেকবার সংশোধন করা হয়। এতে ব্যয় বাড়ানো হয় ২৯৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। ফলে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৩৬৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। দুবারই সরকারি খাতের ব্যয় বাড়ানো হয়েছে।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম বলেন, এ দফায় প্রকল্পটির ভূমি অধিগ্রহণে ব্যয় বাড়ছে ৪৯ দশমিক ৭২ শতাংশ। আর বিশেষ সংশোধনের আওতায় জমির মূল্য অনূর্ধ্ব ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা যায়। এ-সংক্রান্ত পরিপত্রও রয়েছে। আর প্রকল্পটির ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়ে এরই মধ্যে ডিপিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে এনইসি-একনেক, অর্থ বিভাগ, আইএমইডি ও পরিকল্পনা কমিশনের প্রতিনিধিরা একমত হয়েছেন। এর ভিত্তিতে প্রকল্পটি সংশোধন করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, জয়দেবপুর-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা প্রকল্পটি পাঁচটি প্যাকেজে বিভক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে চারটি প্যাকেজের আওতায় ৭০ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ ছাড়াও ৫৩টি ছোট-মাঝারি সেতু, ৯টি ফ্লাইওভার, ২টি রেলওয়ে ওভারপাস, ৭৬টি কালভার্ট ও ৬টি স্টিল ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে। অন্য প্যাকেজের আওতায় সওজের প্রধান কার্যালয় নির্মাণ করা হচ্ছে।