সাইদ সবুজ, চট্টগ্রাম: শুল্ক ফাঁকি, মিথ্যা তথ্য দিয়ে পণ্য আমদানি, ভুল এইচএস কোড, বিভিন্ন অনিয়মের জন্য কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আমদানিকারকদের পণ্য আটক, মামলা ও এইচএস কোড অনুযায়ী শুল্ক আদায় করে থাকে। এসব মামলা ও শুল্ক কমাতে কমিশনারের দফতরে আপিল করেন আমদানিকারকরা। চট্টগ্রাম কাস্টমসের নিষ্পত্তি হয়নি এমন আপিলের সংখ্যা আট হাজার ২৫৮টি। ২০০০ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত নিষ্পত্তি হয়নি এমন আপিলের সংখ্যা এক হাজর ৮০০টি। এছাড়া ১৯৯০ সাল থেকে চলতি বছরের ৩১ জুলাই পর্যন্ত অনিষ্পন্ন আপিল ছয় হাজার ৪৫৮টি।
চট্টগ্রাম কাস্টমস আইন শাখার তথ্যমতে, ১৬ সেকশন ও পাঁচটি সাব-টিম মিলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের কমিশনারের (আপিল) দফতরে নিষ্পত্তি হয়নিÑএমন আপিলের সংখ্যা ১১৮টি। এর সঙ্গে রাজস্ব জড়িত আছে ১২ কোটি ১৩ লাখ টাকা। এছাড়া আপিলাত ট্রাইব্যুনালে নিষ্পত্তি হয়নি এমন আপিলের সংখ্যা এক হাজার ৬৮২টি। এর সঙ্গে রাজস্ব জড়িত আছে ১৭৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এসব হিসাব ২০০০ সাল থেকে চলতি বছরের ৩১ জুলাই পর্যন্ত। সাধারণত কমিশনারের আপিলের দফতর ও আপিলাত ট্রাইব্যুনালে অধিকাংশ নিষ্পত্তি হয়ে যায়। এ দুটি বিভাগে নিষ্পত্তি না হলে হাইকোর্ট বিভাগ ও হাইকোর্টের আপিল বিভাগ পর্যন্ত মামলা গড়ায়। হাইকোর্ট বিভাগে আপিল আছে ছয় হাজার ১৫১টি। এর সঙ্গে রাজস্ব জড়িত এক হাজার ৫০১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। হাইকোর্টের আপিল বিভাগে অনিষ্পন্ন আপিলের সংখ্যা ৩০৭টি। এর সঙ্গে রাজস্ব জড়িত ৫২ কোটি টাকা। হাইকোর্ট ও হাইকোর্টের আপিল বিভাগের মামলাগুলো ১৯৯০ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত নিষ্পত্তি হয়নি।
আইন শাখা সূত্রে আরও জানা যায়, কমিশনারের আপিল দফতর ও আপিলাত ট্রাইব্যুনালে মামলা নিষ্পত্তি হয়ে গেলে জড়িত রাজস্ব বা অতিরিক্ত রাজস্ব আমদানিকারকরা পেয়ে থাকেন। অন্যদিকে হাইকোর্ট ও হাইকোর্টের আপিল বিভাগে আপিল নিষ্পত্তির টাকা কাস্টমস পেয়ে থাকে। কমিশনারের আপিল দফতরে সব থেকে বেশিসংখ্যক আপিল অনিষ্পন্ন আছে সেকশন এক-এ। এ দফতরে মোট আপিল ১১৮টি; তার মধ্যে ৯৪টির নিষ্পত্তি হয়নি। অন্যদিকে আপিলাত ট্রাইব্যুনালেও অনিষ্পন্ন আপিলের সংখ্যা সেকশন এক-এর সর্বাধিক। এ সেকশনে আপিলের সংখ্যা ৩৯৭টি। এর পরের স্থানে সেকশন দুই ও আটের-বি। দুই সেকশনে ২৭০টি করে আপিল অনিষ্পন্ন আছে। এছাড়া তিন, চার ও সাতের-বি সেকশনে যথাক্রমে ২০৪, ১১২ ও ১৭৯টি নিষ্পত্তি হয়নি। বাকি ১৫ সেকশন মিলে ২৫০টি অনিষ্পন্ন আছে। এ দফতরে সব সেকশন মিলে মোট আপিলের সংখ্যা এক হাজার ৬৮২টি।
সূত্র জানায়, উচ্চ আদালতে অনিষ্পন্ন ছয় হাজার ১৫১টি আপিলের মধ্যে সেকশন এক-এর আপিলের সংখ্যা বেশি এক হাজর ১৩০টি। এর পরের স্থানে আছে সেকশন ৯-এর সি, সংখ্যা ৯৩৬টি। সেকশন দুই ও আটের এ’তে আছে ৫২২টি করে এবং সাতের বি’তে ৫২০টি ও পাঁচের-এ’তে ৪৫২টি। তাছাড়া তিনশর অধিক করে আছে সেকশন তিন, চার, ছয় ও আটের-বি।
অন্যদিকে সর্বশেষ ধাপ হাইকোর্টের আপিল বিভাগে নিষ্পন্ন হয়নিÑএমন আপিলের সংখ্যা ৩০৭টি। এ বিভাগে সেকশন দুই ও সেকশন আট-বি’তে ১২৩টি করে অনিষ্পন্ন আপিল আছে। এছাড়া সেকশন এক-এ ৩৩টি ও সেকশন চারে ২৮টি।
কাস্টমস আইন শাখার কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, আমদানিকারকদের ভুল এইসএস কোড অথবা যদি মনে করে কোনো পণ্যে অতিরিক্ত শুল্ক দিয়েছে, সে ক্ষেত্রে তারা কমিশনারের (আপিল) দফতরে আপিল করে থাকেন। সেখানে সমাধান না হলে আপিলাত ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। এরপর আপিলাত ট্রাইব্যুনাল তিন-চার মাস পর মূল নথি তলব করে। এর মধ্যে রায় যদি আমদানিকারকের পক্ষে যায়, তাহলে অতিরিক্ত পরিশোধিত শুল্ক কাস্টমস থেকে নিয়ে যান তারা। রায় কাস্টমসের পক্ষে এলে বরাবর থেকে যায়।