Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 3:58 pm

২৭ হাজার ৪০০ কোটি টাকা খেলাপিতে ১৪,৬৫০ মামলা

রোহান রাজিব : চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) খেলাপি ঋণ আদায়ে নতুন করে ১৪ হাজার ৬৫০টি মামলা দায়ের করে ব্যাংকগুলো। এসব মামলার বিপরীতে ২৭ হাজার ৪০০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ব্যাংকগুলো আদায়ের কথা মাথায় না রেখে অনেক সময় ঋণ দেয়। এক্ষেত্রে মালিকপক্ষ বা রাজনৈতিক চাপ থাকে। এসব ঋণের বিপরীতে পর্যাপ্ত জামানত থাকে না। আবার অনেক ক্ষেত্রে জাল কাগজের বিপরীতে যোগসাজশ করে ঋণ দেয়া হয়, কিংবা বন্ধকি সম্পত্তির প্রকৃত মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি দর দেখিয়ে ঋণ দেয়া হয়। জাল কাগজের ফলে অনেক সময় সম্পদ বিক্রির ঝামেলাও থাকে। তাই মামলা নিষ্পত্তি হলেও আদায় বাড়ে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের মার্চ শেষে অর্থঋণ আদালতে মোট মামলার স্থিতি দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার ২৮২টি মামলা। এসব মামলার বিপরীতে ব্যাংকগুলোর আটকে আছে ২ লাখ ৭ হাজার ৩৬১ কোটি টাকা। বিচারাধীন মামলা থেকে নিষ্পত্তি হয়েছে মোট ২০ হাজার ৭৩০টি মামলা। নিষ্পত্তিকৃত মামলা থেকে আদায় মোট হয়েছে ১১ হাজার ২২৪ কোটি টাকা।

২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর অর্থঋণ আদালতে ৭২ হাজার ১৮৯টি বিচারাধীন মামলার বিপরীতে আটকে আছে এক লাখ ৬৬ হাজার ৮৮৭ কোটি টাকা। বিচারাধীন এসব মামলায় আদায় হয়েছে মাত্র পাঁচ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। ২০২১ সাল শেষে অর্থঋণ আদালতে ৬৮ হাজার ২৭১টি বিচারাধীন মামলার বিপরীতে আটকে ছিল এক লাখ ৪৩ হাজার ৬৯৪ কোটি টাকা। বিচারাধীন এসব মামলায় ওই সময় আদায় হয়েছে মাত্র চার হাজার ৬১০ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্যানেল আইনজীবী রুহুল আমিন ভূঁইয়া শেয়ার বিজকে বলেন, অর্থঋণ আদালতের পুরো বিচার প্রক্রিয়াটাই দীর্ঘমেয়াদি। মামলা নিষ্পত্তিতে সময় লাগার অনেক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে যে কারণগুলো সব মামলার ক্ষেত্রে বলা যায়, সেটা হচ্ছে সমন জারিতে অনেক সময় লাগে। বিবাদী পক্ষ নি¤œ আদালত থেকে মামলা উচ্চ আদালতে নিয়ে যায়। উচ্চ আদালতে মামলাজট থাকায় শুনানিতে দেরি হয়। আবার অনেকে রিট মামলা করেন। রিটের চূড়ান্ত শুনানিতেও অনেক সময় লেগে যায়।

তিনি আরও বলেন, অর্থঋণ আদালতে মামলা নিষ্পত্তি হলেও টাকা না আদায় হওয়ার কারণ হলো বড় গ্রাহকদের ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই না করা। এতে ঋণের ক্ষেত্রে যেসব জামানত কাগজপত্রে দেখানো হয়, তা বাস্তবে নেই। ফলে মামলা নিষ্পত্তি হলেও ব্যাংক টাকা ঋণ আদায় করতে পারে না। আর এসবই হচ্ছে ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশে। এছাড়া মালিক পক্ষ ঋণ নিয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হয়। তখন কর্মকর্তারা বাধ্য হয়ে ঋণ দিয়ে দেয়। ব্যাংক খাতের জন্য এটা বড় সমস্যা।

খেলাপি ঋণ আসলে কত

ঋণ পুনঃতপশিল, পুনর্গঠনসহ নানা ছাড়ে খেলাপি ঋণ কম দেখানোর সুযোগ করে দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আবার অনেক গ্রাহকের আবেদনে উচ্চ আদালত থেকে খেলাপি না দেখানোর ওপর আদেশ দেয়া হচ্ছে। এসব কারণে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ আসলে কত, তা নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের শেষে ব্যাংক খাতে ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের মোট পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৯২২ কোটি টাকা।

২০২২ শেষে মোট অনাদায়ী ঋণ ছিল ১৪ লাখ ৭৭ হাজার ৬৯২ কোটি টাকা। সেই হিসাবে মোট ঋণের চার ভাগের এক ভাগই ঝুঁকিপূর্ণ।

২০২২ সাল শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার ৬৪৯ কোটি টাকা, বকেয়া পুনঃতপশিল করা ঋণ ২ লাখ ১২ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা ও বকেয়া খেলাপি ঋণ ৪৪ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা। এছাড়া অর্থঋণ আদালতে আটকে আছে ১ লাখ ৯৬ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা। ফলে সর্বমোট ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৭৪ হাজার ৫৯ কোটি টাকা।