Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 3:31 am

২.০৭ কোটি টাকা ফাঁকি দিয়ে জরিমানা গুণলেন ৬.৩২ কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক: চীন থেকে আমদানি করা হয়েছে লাইটিং প্যানেল ও হাসপাতাল সরঞ্জাম। শুল্ককর পরিশোধ করা হয়েছে দুই কোটি ৬৩ লাখ টাকা। শুল্কায়নের সকল প্রক্রিয়া শেষে পণ্য খালাসের জন্য একে একে ১০টি ট্রাকে বোঝাই করা হয়েছে। গেইটে ট্রাক এসেছে। কিন্তু বাঁধ সাধল কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

তাদের কাছে তথ্য ছিলো, এই চালানে মিথ্যা ঘোষণা, ঘোষণার অতিরিক্ত ও ঘোষণা বর্হিভূত পণ্য রয়েছে। আর এতে বিপুল পরিমাণ শুল্ককর ফাঁকিও দেয়া হয়েছে। অবশেষে চালানটির খালাস স্থগিত করা হয়। পরে চালানটি কায়িক পরীক্ষা করা হয়। এতে কাস্টমস গোয়েন্দার সেই তথ্যানুযায়ী, সত্যি সত্যিই মিথ্যা ঘোষণা, অতিরিক্ত ঘোষণা ও ঘোষণা বর্হিভূত পণ্য পাওয়া গেছে। এতে আমদানিকারক প্রায় দুই কোটি সাত লাখ টাকা শুল্ককর ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করেছে।

তবে ফাঁকি প্রমাণিত হওয়ায় প্রতিষ্ঠানকে চার কোটি ১৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। একইসঙ্গে পণ্য রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে এমন ঘটনা ঘটেছে। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান হলো, সিলেটের কুইন্স হেলথকেয়ার লিমিটেড।

কাস্টমস গোয়েন্দা সূত্রমতে, আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান কুইন্স হেলথকেয়ার লিমিটেড চীন হতে ২৮ ধরনের লাইটিং প্যানেল ও হাসপাতাল সরঞ্জাম আমদানি করে। পণ্য খালাসে ৬ ফেব্রুয়ারি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট চট্টগ্রামের সুরমা এন্টারপ্রাইজের মাধ্যমে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা শুল্কায়ন সম্পন্ন করেন।

এতে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে প্রায় দুই কোটি ৬৩ লাখ টাকা শুল্ককর পরিশোধ করা হয়। পণ্যগুলো খালাসের জন্য ১০টি ট্রাকে তোলা হয়েছে। পরে কাস্টমস গোয়েন্দা গোপন তথ্য পায় যে, চালানটিতে ঘোষণা বর্হিভূত, ঘোষণা অতিরিক্ত পণ্য রয়েছে। পরে খালাস গেইট থেকে চালানগুলো আটক করা হয়। পরে কাস্টমস গোয়েন্দা ও কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা যৌথভাবে চালানটি কায়িক পরীক্ষা করেন।

এতে দেখা গেছে, চালানটিতে ঘোষণার অতিরিক্ত ১০ হাজার ৭১ কেজি গ্লাস সিমেন্ট, সার্জন কন্ট্রোল প্যানেল, রিটার্ন এয়ার কাটলেট, মেডিসিন কেবিনেট, এক্স-রে ভিউইং এলইডি, কম্বাইন্ড টাইপ সকেট বক্স, গ্যাস বক্স, ডিস্ট্রিবিউশন বোর্ড, পিভিসি ফ্লোরিং পণ্য পাওয়া গেছে। একইভাবে ঘোষণার চেয়ে ৮ হাজার ১০০ কেজি ওয়াল অ্যান্ড সিলিং প্যানেল, সিলিকন প্যানেল কম পাওয়া গেছে। আবার আমদানিকারক এইচএস কোড অনুযায়ী গ্লাস সিমেন্ট ঘোষণা দিলেও তাতে পাওয়া গেছে সিলিকন সিলেন্ট অ্যান্ড গ্লু।

পেরিপেরাল লাইট এলইডি অন্য এইচএস কোডে দেখানো হয়েছে। আবার ঘোষণা বর্হিভূত ৬ দশমিক ৪ কেজি অ্যালুমিনিয়াম কাটার মেশিন, ৯৯ কেজি এয়ার ফিল্টার, ১২ দশমিক ৩২ কেজি ইক্যুইপটেনশিয়াল টার্মিনাল বক্স পাওয়া গেছে। আমদানি করা পণ্য চালানের মোট শুল্কায়নযোগ্য মূল্য ছয় কোটি ৬৫ লাখ ৯ হাজার ২৫৬ টাকা। কায়িক পরীক্ষায় ঘোষণা বর্হিভূত, ঘোষণা অতিরিক্ত পাওয়া পণ্যে শুল্ককর ফাঁকির পরিমাণ ছিলো দুই কোটি সাত লাখ ৪৮ হাজার ৯৩৯ টাকা।

সূত্র আরও জানায়, কায়িক পরীক্ষার পর আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান অসত্য ও মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানির বিষয়টি স্বীকার করেন। ন্যায় নির্ণয়ের জন্য চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার বরাবর আবেদন করেন। কমিশনার মোহাম্মদ ফাইজুর রহমান আমদানিকারকের নথি ও কায়িক পরীক্ষার প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে ২৯ এপ্রিল বিচারাদেশ দেয়। এতে মিথ্যা ও অসত্য ঘোষণা প্রমাণিত হওয়ায় আমদানিকারককে চার কোটি ১৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা বিমোচন জরিমানা আরোপ করেন।

একইসঙ্গে পণ্য চালানটি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দেন। তবে চালানের যথাযথ এইচএস কোডে শ্রেণিবিন্যাস করে শুল্কায়ন, অর্থদণ্ড ও বিমোচন জরিমানা পরিশোধ এবং আমদানি নীতির শর্ত পালন সাপেক্ষে আমদানিকারক চালানটি খালাস নিতে পারবে বলে আদেশে বলা হয়েছে।

এই বিষয়ে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মিনহাজ উদ্দিন শেয়ার বিজকে বলেন, চালানটিতে লাইটিং প্যানেল ও হাসপাতাল সরঞ্জাম ছিলো। পরীক্ষণ ও শুল্কায়ন শেষে দুই কোটি ৬৩ লাখ টাকা শুল্ককর আদায় করে কাস্টম হাউস। সকল প্রক্রিয়া শেষে এক্সিট নোট হয়ে পণ্য ১০টি ট্রাকে লোড হয়। গোপন সংবাদ আসায় গেটে ট্রাকগুলো আটক করে কাস্টমস গোয়েন্দা।

গোয়েন্দার পরীক্ষনে বর্ণনা ও ওজনে ব্যাপক মিথ্যা ঘোষণা সনাক্ত হয়। বিচারাদেশে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ হতে দুই কোটি ৭ লাখ টাকা অতিরিক্ত শুল্ককর আদায় এবং ৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। অর্থাৎ কাস্টমস গোয়েন্দার হস্তক্ষেপের ফলে এই একটি চালান হতে মোট ৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় হয়েছে।