Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 2:25 pm

৩০০ আসনে ইভিএমে ভোট চায় আওয়ামী লীগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের ৩০০ আসনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটের দাবি জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। সেইসঙ্গে দলটি নির্বাচনের সময় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচন পরিচালনার জন্য আবশ্যকীয় সব সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে ন্যস্ত করার প্রস্তাব করেছে। গতকাল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে দলটির পক্ষ থেকে ১৫ দফা লিখিত প্রস্তাব করা হয়। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ইসির সঙ্গে বৈঠক করে।

সংলাপে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা মনেপ্রাণে ইভিএমে বিশ্বাস করি। চেতনায় ধারণ করি। কোনো বিশেষ এলাকা নয়। দেশের ৩০০ আসনে ইভিএমে ভোট হোক, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এ দাবি জানাচ্ছি।’

সংলাপে নিজেদের গণতন্ত্র এবং আইনের শাসনে বিশ্বাসী উল্লেখ করে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ সাংবিধানিক রেগুলেটরি কমিশন ‘নির্বাচন কমিশন’কে সর্বাত্মকভাবে সহায়তা করবে বলে ইসিকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য সব সরকারের সময় নির্বাচন কমিশনকে দলীয়করণ করা হয়েছে বলেও দাবি করেছে তারা।

বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সাফল্য কামনা করে আওয়ামী লীগ বলেছে, আওয়ামী লীগ সরকার ছাড়া অন্য কোনো সরকার নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করাসহ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি, বরং এটিকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে। দলটি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রেও দেশি ও বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োগে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়েছে। তারা বলেছে, প্রচলিত আইন ও বিধিবিধান অনুযায়ী, কোনোভাবেই কোনো দল বা প্রার্থীর প্রতি অনুগত বা কোনোভাবে সম্পর্কযুক্ত হিসেবে পরিচিত বা চিহ্নিত ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা সংস্থাকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব প্রদান করা যাবে না।

এছাড়া আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, কোনো দেশের কূটনীতিক কিংবা দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট দেশের স্বার্থের সংঘাত রয়েছে, এমন ব্যক্তিবর্গকে আইনের বাধ্যবাধকতা হিসেবে নির্বাচন পর্যবেক্ষক করা যায় না বলে উল্লেখ করে বলেছে, এই আইনের আওতায় কেবল নির্বাচন পর্যবেক্ষণে বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি নির্বাচন পর্যবেক্ষক হওয়ার যোগ্য। বিগত সংসদ নির্বাচন এবং ঢাকা সিটি কর করপোরেশন নির্বাচনে এই আইনের কিছু ব্যত্যয় ঘটেছিল, যা আমরা নির্বাচন কমিশনের নজরে এনেছিলাম। এ বিষয়ে আইন, বিধিবিধান এবং আন্তর্জাতিক রীতিনীতি মেনে নির্বাচন কমিশন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে আমরা আশা করি।

আওয়ামী লীগের প্রস্তাবনাগুলো হলোÑনির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা, নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা ঊর্ধ্বে রেখে সংবিধান ও আইনে প্রদত্ত দায়িত্ব পালনে সক্ষমতা প্রদর্শন, নির্বাচনকালে নির্বাহী বিভাগের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/সংস্থার দায়িত্বশীলতা, ইসি সচিবালয় এবং এর মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের দায়িত্বশীল ও নিরপেক্ষ আচরণ এবং বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় নিয়োগপ্রাপ্ত দলীয় কর্মকর্তাদের নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে বাইরে রাখা, ছবিযুক্ত একটি নির্ভুল ভোটার তালিকা এবং ভোট গ্রহণের দিন নির্বাচন কেন্দ্রের সার্বিক নিরাপত্তা, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমের  মাধ্যমে ভোট গ্রহণ বৃদ্ধি করা, নির্বাচন পরিচালনায় বেসরকারি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিবর্তে কেবল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার পদে নিয়োগ করা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত সদস্যদের নিরপেক্ষ ও দায়িত্বশীল আচরণ, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক থেকে শুরু করে মিডিয়া ও সিভিল সোসাইটির সদস্যদের নিরপেক্ষ ভূমিকা এবং আইন অনুযায়ী (আরপিও ১৯৭২, অনুচ্ছেদ ৯১সি) নিবন্ধিত দেশি ও বিদেশি পর্যবেক্ষক সংস্থাকে পর্যবেক্ষণের অনুমতি প্রদান, নির্বাচনে পেশিশক্তি ও অর্থের প্রয়োগ বন্ধ এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ সব পর্যায়ের ভোটারের অবাধ ভোটদানের সুযোগ নিশ্চিতকরণ, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচন পরিচালনার জন্য আবশ্যকীয় সব সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে ন্যস্ত করা, নির্বাচনকালে সরকারের কর্মপরিধি কেবল আবশ্যকীয় দৈনন্দিন (রুটিন) কার্যাবলির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা, অ্যাডহক বা অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থার পরিবর্তে টেকসই সাংবিধানিক, আইনি ও রেগুলেটরি ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করা, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা একটি ‘পাস্ট অ্যান্ড ক্লোজড চ্যাপ্টার’ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এই ব্যবস্থাকে অসাংবিধানিক এবং অবৈধ ঘোষিত সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো মন্তব্য করা সংবিধান লঙ্ঘর করার শামিল বলে উল্লেখ করা হয় আওয়ামী লীগের প্রস্তাবে।