নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রীর দূর সম্পর্কের আত্মীয় পরিচয়ে প্রতারণার অভিযোগে আগ্নেয়াস্ত্রসহ এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তার নাম আবু হানিফ। তবে পরিচয় দিতেন তুষার ও হানিফ মিয়া নামেও। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীটি জানিয়েছে, আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাইয়ে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে জোরালো তৎপরতা শুরু করেছিলেন হানিফ। একেকজনের কাছ থেকে দাবি করতেন ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকা।
এছাড়া রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন, পদোন্নতি ও সরকারি চাকরি দেয়াসহ নানা কথা বলে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণে টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি।
গতকাল বুধবার রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি জানান, নিজেকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ বোঝাতে ৩৯ বছর বয়সী হানিফ তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রী ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ব্যক্তিদের সঙ্গে অসংখ্য বানোয়াট ছবি পোস্ট করেছেন। এগুলো ফটোশপ করে বানানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, তাদের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১-এর যৌথ অভিযানে গত মঙ্গলবার রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে আবু হানিফকে গ্রেপ্তার করা হয়। জব্দ করা হয় বিদেশি পিস্তল, গুলি ও একটি গাড়ি। পাওয়া যায় বিভিন্ন ভিডিও ও এডিট করা ছবি।
যে কৌশলে প্রতারণা
র্যাব জানায়, হানিফ দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন মোবাইল ফোন নম্বর প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের নামে সেভ করতেন। পরে সামাজিক মাধ্যমের বিভিন্ন অ্যাপ থেকে প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্য সেজে নিজেই অথবা চক্রের অন্য সদস্যদের মাধ্যমে মেসেজ দেয়া-নেয়া করতেন। বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনে প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিজের ছবি এডিট করে তা দেখানো হতো।
বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে ছবিও তুলতেন হানিফ। সেগুলো দেখিয়েও করতেন প্রতারণা। আবু হানিফ বলে বেড়াতেন তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী।
র্যাব পরিচালক সংবাদ সম্মেলনে জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হানিফ স্বীকার করেছেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন আসনে মনোনয়ন পাইয়ে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ দাবি করতেন তিনি।
প্রথমে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নাম ও মোবাইল ফোন নম্বর সংগ্রহ করতেন। যাদের সম্ভাবনা ক্ষীণ, টার্গেট করতেন তাদের। পরে যোগাযোগ করে ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকা দাবি করতেন।
আলোচনার জন্য হানিফ বিভিন্ন অভিজাত হোটেলে যেতেন দামি গাড়িতে করে। সেখানে দেশের বাইরে অবস্থানরত সহযোগীকে ‘প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্য’ সাজিয়ে মনোনয়নপ্রত্যাশীর সঙ্গে ফোনে কথা বলিয়ে দিতেন।
প্রতারণার মাধ্যমে ৩০ জনের বেশি মানুষকে চাকরি দেয়ার কথা বলে পাঁচ কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ করার কথা হানিফ র্যাবকে জানিয়েছেন বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
র্যাব জানায়, হানিফ এইচএসসি পাস হলেও নিজেকে ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর বলে পরিচয় দিতেন। ২০০৮ সাল থেকে মোটর যন্ত্রাংশের ব্যবসা করে আসছেন তিনি। দেশের বিভিন্ন রুটে ‘তুষার এন্টারপ্রাইজ’ নামে তার বেশ কয়েকটি বাস রয়েছে।
২০১৪ সালে সুপরিচিত একজন রাজনীতিকের ব্যক্তিগত সহকারী পরিচয় দিয়ে প্রতারণার শুরু। তখন থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কৌশলে রাজনীতিক, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির কাছে যেতে শুরু করেন এবং তাদের সঙ্গে ছবি তুলতে থাকেন। ২০১৫ সালে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে সেসব ছবি আপলোড শুরু করে নিজের গ্রহণযোগ্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকেন হানিফ।
তার নামে খোলা ফেসবুক পাতায় গিয়ে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার ছবি আপলোড করা আছে। ছবি রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও।
তাদের একজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, হানিফ প্রধানমন্ত্রীর এক আত্মীয়ের জামাতা পরিচয় দিয়ে তার কাছে গিয়েছিলেন। আগামী সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন বলেও দাবি করতেন হানিফ। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক-সংক্রান্ত একাধিক মামলা রয়েছে এবং এসব মামলায় একাধিকবার কারাভোগও করেছেন।