প্রতিনিধি, ইবি:দীর্ঘ ৩০ বছরেও পূর্ণাঙ্গ নির্মাণকাজ শেষ হয়নি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) কেন্দ্রীয় মসজিদের। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৫ বছর পর ১৯৯৪ সালে ক্যাম্পাসের সাড়ে পাঁচ একর জমির ওপর সরকারি অর্থায়নে মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। পরে, দীর্ঘ ১০ বছর পর প্রায় ৩৬ শতাংশ নির্মাণকাজ শেষে মসজিদ নামাজ আদায়ের জন্য উš§ুুক্ত করে দেয়া হয়। ২০০৪ সালে তৎকালীন ধর্মপ্রতিমন্ত্রী মোশারেফ হোসাইন শাহজাহান মসজিদটি উদ্বোধন করেন। পরে দীর্ঘ ১৩ বছর কাজ থেমে থাকলে, ২০১৭ সালে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-উর-রশিদ আসকারী দুই দফায় পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণকাজ সম্প্রসারণ করেন। এতে প্রায় ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়। কিন্তু এরপরও পূর্ণাঙ্গ নির্মাণকাজ শেষ হয়নি মসজিদের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মসজিদের উত্তর-দক্ষিণ পাশের প্রবেশ পথে ফটকের ব্যবস্থা থাকলেও নেই ফটক। এছাড়া নিচতলায় একাধিক তালাবদ্ধ কক্ষ, ফাঁকা স্থানে ডালপালা রেখে দেয়া, দুটি কক্ষে আনসার সদস্যদের আবাসন, অফিস সহায়ক সমিতির নাম-সংবলিত অফিস কক্ষ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস, ইমামের কক্ষ ও একটি অজুখানা দেখা যায়। এছাড়া নিচতলা থেকে দ্বিতীয় তলার সিঁড়ি পর্যন্ত টাইলস বাঁধাই থাকলেও দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ তলার সিঁড়িতে নেই কোনো প্রকার টাইলসের অস্তিত্ব।
এদিকে পর্যাপ্ত ফটক না থাকায় অরক্ষিত নিরাপত্তা বলয়ে ২০২২ সালের ৮ জুন রাতে মসজিদের কাচ ভেঙে ৪টি বড় স্ট্যান্ড ফ্যান চুরির ঘটনা ঘটে। পরদিন ৯ জুন কেন্দ্রীয় মসজিদের তৎকালীন পেশ ইমাম ও খতিব ড. আ স ম শোয়াইব আহমাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন।
এছাড়া ফ্যানও সাউন্ড সিস্টেম সংকট, ভেতরের অংশে পর্যাপ্ত মাদুর থাকলেও বাহিরে কিছু অংশে না থাকা, জুমার দিনে অধিক মুসল্লির আগমনে চাপ সামলাতে ব্যর্থ অজুখানা। ফলে দিতে হয় লম্বা লাইন। তাছাড়া জুতা রাখার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় প্রধান ফটক জানালার গ্রিলে জুতা রাখতে দেখা যায়, যা মসজিদ পরিবেশ বিবেচনায় দৃষ্টিকটু।
এদিকে মসজিদের কাজ শুরুর পর নানা কারণে কাজ বন্ধ হয়ে গেলে তিন ধাপে এর অর্ধেক কাজ সম্পন্ন হয় বলে জানা গেছে। ২০০৪ সালে ৩৬ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হলে সর্বশেষ ২০১৭ সালে উপাচার্য অধ্যাপক রাশিদ আসকারীর সময় দুই ধাপে সাড়ে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে মসজিদটির ৫০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়। নির্মাণকাজ শেষে দেশের প্রতিষ্ঠানভিত্তিক সর্ববৃহৎ মসজিদ হবে এই কেন্দ্রীয় মসজিদটি।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিমাংশে ২.২৫ হেক্টর জায়গাজুড়ে মসজিদের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করা হয়। মসজিদের গ্রাউন্ড ফ্লোরের আয়তন ৫১ হাজার বর্গফুট। চারতলা বিশিষ্ট মসজিদের মূল অংশে মোট সাত হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবে। এছাড়া মসজিদের সামনের অংশের পেডমেন্টে আরও ১০ হাজার মুসল্লি নামাজ পড়তে পারবে।
বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ ঝেড়েছেন একাধিক শিক্ষার্থী। তারা বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্পাসের সবচেয়ে সৌন্দর্যের স্থানটি হলো এই মসজিদ তবে দীর্ঘদিনেও কাজ শেষ হচ্ছে না এর। এটা দুঃখজনক।
ক্ষোভের প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাবেক শিক্ষার্থী নাফিজ আহমেদ বলেন, এত বছরেও প্রশাসন মসজিদের কাজ শেষ করতে পারেনি। ক্যাম্পাসের অন্যতম স্থাপনা এই মসজিদ। এর কাজ অতি দ্রুত শেষ করা প্রয়োজন।
অসমাপ্ত কাজের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম শরীফ উদ্দীন বলেন, প্রকল্পটা আমাদের অনেক বড়। উপমহাদেশের বেশকিছু মসজিদের সঙ্গে এটি কম্পিলিট হবে। আর অনেক বড় প্রকল্প হওয়ার ঠিকমতো বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই দেরি হচ্ছে।
বরাদ্দ ফেরত যাওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, বাহির থেকে কোন বরাদ্দ আসছে কি না এই ব্যাপারে আমার জানা নেই। আমি দায়িত্বে আসার পর দেখছি পুরোপুরি সরকারি অর্থায়নেই হচ্ছে এই প্রকল্পটি। আর ডিজাইন যেটা করা হয়েছে সেটা কম্পিলিট হবে।
নিচতলায় সহকার্যক্রম হিসেবে কী থাকছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মসজিদের নিচতলা বেশকিছু অফিসের জন্য বরাদ্দ রয়েছে। সম্পন্ন হওয়ার পর প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিবে কী করবে সেখানে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন ভূইয়া বলেন, এখন কোনো প্রজেক্ট নেই। আমরা প্রজেক্ট পাসের চেষ্টা করছি। পাস হলে মসজিদের কাজ নতুন করে শুরু করা হবে।