নিজস্ব প্রতিবেদক: কাস্টমস মূল্যায়ন ও অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিশনারেটে অডিট ও রাজস্ব অনিয়ম উদ্ঘাটন বাড়ছে। চলতি বছরের জুলাই-আগস্ট দুই মাসে ৩১৫টি বিল অব এন্ট্রি যাচাই করা হয়েছে। এতে প্রায় সাড়ে আট কোটি টাকার রাজস্ব অনিয়ম উদ্ঘাটিত হয়েছে। অপরদিকে ২০১৯ সালের জুলাই-আগস্ট দুই মাসে ৪৩টি বিল অব এন্ট্রি যাচাই করে এক কোটি ৮৩ লাখ টাকা রাজস্ব অনিয়ম উদ্ঘাটিত হয়েছিল। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এ বছর জুলাই-আগস্ট মাসে বিল অব এন্ট্রির সংখ্যা বেড়েছে ২৭২টি, আর রাজস্ব অনিয়ম উদ্ঘাটন বেড়েছে ছয় কোটি ৬৫ লাখ টাকা। অনিয়ম উদ্ঘাটন করে তা আদায়ের জন্য কাস্টমস মূল্যায়ন ও অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিশনারেট থেকে সংশ্লিষ্ট কাস্টম হাউস ও কাস্টমস স্টেশনে প্রতিবেদনে পাঠানো হয়েছে। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এনবিআর সূত্র জানায়, চলতি বছরের জুলাই-আগস্ট মাসে কাস্টমস মূল্যায়নের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫০টি বিল অব এন্ট্রি যাচাই করা। পোস্ট ক্লিয়ারেন্স অডিটের (পিসিএ) সংখ্যা ছিল ৯৪৫টি। পিসিএ আপত্তিকৃত বিল অব এন্ট্রির সংখ্যা ৩১৫টি, যার সঙ্গে রাজস্ব জড়িত আট কোটি ৪৮ লাখ টাকা। অপরদিকে ২০১৯ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২৫টি বিল অব এন্ট্রি যাচাই। পিসিএ সংখ্যা ছিল ৫৮২টি। পিসিএ আপত্তিকৃত বিল অব এন্ট্রির সংখ্যা ছিল ৪৩টি, জড়িত রাজস্ব এক কোটি ৮৩ লাখ টাকা। চলতি বছর দুই মাসে গত বছরের দুই মাসের তুলনায় ২৭২টি বেশি বিল অব এন্ট্রি যাচাই এবং ছয় কোটি ৬৫ লাখ টাকা বেশি রাজস্ব অনিয়ম উদ্ঘাটন করা হয়েছে। আইনানুগভাবে পরিহার করা রাজস্ব আদায়ের জন্য চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস, বেনাপোল কাস্টম হাউস, পানগাঁও কাস্টম হাউস, বুড়িমারী শুল্ক স্টেশন, আইসিডি কাস্টম হাউস ও ঢাকা কাস্টম হাউসে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, দুই মাসে সবচেয়ে বেশি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ১৫টি বিল অব এন্ট্রি যাচাই করা হয়। এর মধ্যে ১৫টি বিল অব এন্ট্রিতে পণ্য খালাসের মাধ্যমে এক কোটি ৫০ লাখ ৫০ হাজার টাকা রাজস্ব পরিহার করা হয়েছে। ৩০ জুলাই কমিশনারকে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া একই কাস্টম হাউসের সাতটি বিল অব এন্ট্রি যাচাই করে এক কোটি ৮৬ লাখ ৪৫ হাজার ৯৮৩ টাকার রাজস্ব অনিয়ম উদ্ঘাটন করে দুই সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন দেওয়া হয়। একই কাস্টম হাউসের অপর একটি বিল অব এন্ট্রি যাচাই করে ৩৯ লাখ ৬৭ হাজার ৯৭২ টাকার রাজস্ব অনিয়ম উদ্ঘাটন করে ২৮ জুলাই প্রতিবেদন দেওয়া হয়।

পানগাঁও কাস্টম হাউসের ১৪টি বিল অব এন্ট্রি যাচাই করে ১২ লাখ ৬২ হাজার টাকার রাজস্ব অনিয়ম উদ্ঘাটন করা হয়েছে। ২৮ জুলাই প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। রংপুরের ভুড়িমারী শুল্ক স্টেশনের ৬৫টি বিল অব এন্ট্রি যাচাই করে ২৫ লাখ ৭৬ হাজার টাকার রাজস্ব অনিয়ম উদ্ঘাটন করা হয়েছে। ৩০ জুলাই কমিশনারকে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। বেনাপোল কাস্টম হাউসের একটি বিল অব এন্ট্রি যাচাই করে ৯৭ লাখ ৪৬ হাজার ৮৬৬ টাকার রাজস্ব অনিয়ম উদ্ঘাটন করে ২৬ জুলাই প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। সব প্রতিবেদনে পরিহারকৃত রাজস্ব আদায়, পণ্য খালাস ও রাজস্ব অনিয়মের সঙ্গে কোনো কর্মকর্তা জড়িত থাকলে তা যাচাই করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কমিশনারদের অনুরোধ করা হয়েছে।
অপরদিকে কাস্টমস মূল্যায়ন ও অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিশনারেট দুটি বন্ডেড প্রতিষ্ঠান নিরীক্ষা করে প্রায় ২১ কোটি ৫৮ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকি উদ্ঘাটন করেছে। ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের আওতাধীন দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে রাজস্ব আদায় ও ব্যবস্থা নিতে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মেসার্স ফাইভএফ অ্যাপারেল লিমিটেডের ফাঁকি ৯ কোটি ৬২ লাখ ৫৭ হাজার ১৬ টাকা। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির আমদানিকৃত তিন লাখ ৮৮ হাজার ৩৯৩ দশমিক ৮৪ কেজি ফেব্রিক্সের ওপর শুল্কায়ন করে পাঁচ কোটি ৮১ লাখ ৭৮ হাজার ৪৪৯ টাকা। ইউডি-বহির্ভূতভাবে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে ২১৯টি এলসি প্রদর্শন না করে মোট ২৫ কোটি ৩৮ লাখ ৫৭ হাজার ১১৫ টাকার ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট তিন কোটি ৮০ লাখ ৭৮ হাজার ৫৬৭ টাকা। এছাড়া মেসার্স একেএম নিটওয়্যার লিমিটেডের ফাঁকি ১১ কোটি ৯৫ লাখ ৫৬ হাজার ৬১০ টাকা। এর মধ্যে আমদানিকৃত ৫১ হাজার ৬৪৪ কেজি ফেব্রিক্সের ওপর শুল্কায়ন করে দুই কোটি ৬৪ লাখ ৯ হাজার ৫৪৬ টাকা, আমদানিকৃত ৬৫ হাজার ৯৯ কেজি আনুষঙ্গিক পণ্যের উপর শুল্কায়ন করে ৯ কোটি ১২ লাখ ৯০ হাজার ৭১ টাকা এবং আমদানিকৃত ৫৭ হাজার ২৪১ গজ কাপড়ের ওপর শুল্কায়ন করে ১৮ লাখ ৫৬ হাজার ৯৯২ টাকার ফাঁকি উদ্ঘাটন করা হয়।